“যারা উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা বাতিল চেয়েছে, তারা মেধার মূল্যায়ন করে না। পরীক্ষা নেওয়া উচিত ছিল।”
Published : 21 Aug 2024, 01:01 AM
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তকে ‘অযৌক্তিক’ বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম।
তিনি বলেছেন, “যারা উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) বা সমমানের পরীক্ষা বাতিল চেয়েছে, তারা মেধার মূল্যায়ন করে না। পরীক্ষা নেওয়া উচিত ছিল। এই পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক।”
মঙ্গলবার রাতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সারজিসের এমন বক্তব্য আসে।
চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ৩০ জুন। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে ১৮ জুলাই থেকে পরীক্ষাগুলো স্থগিত হয়ে যায়।
সেই স্থগিত পরীক্ষাগুলো ১১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল, সেজন্য নতুন সূচিও প্রকাশ করেছিল কর্তৃপক্ষ; কিন্তু এর মধ্যে পরীক্ষা দিতে অনাগ্রহী শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে।
এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার কয়েকশ শিক্ষার্থী সচিবালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ দেখায়। তাদের দাবি ছিল, যে কয়টি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে, তার ভিত্তিতে এবং স্থগিত বিষয়ের পরীক্ষা এসএসসির সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে ম্যাপিং করে এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হোক।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তরা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেও এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা সিঁড়ি বেয়ে সচিবালয়ের ১৮ তলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উঠে অবস্থান নেন।
ওই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। বলা হয়, ফলাফল কীভাবে দেওয়া হবে সে সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, তাদের সফল আন্দোলনে সরকার পতনের পর অনেকে এখন অযৌক্তিক দাবিতে রাস্তায় নেমে ‘অস্থিতিশীল পরিস্থিতি’ তৈরির চেষ্টা করছে।
“দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক সংগঠন প্রথম দিনই লংমার্চ কর্মসূচি দিয়েছে। এটি যৌক্তিক নয়। তারা সরকার বা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে যোগাযোগ করে এমন কর্মসূচি দিলে বিষয়টি যৌক্তিক হত। তাদের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তারা পরবর্তীতে প্রশ্নবিদ্ধ কোনো কর্মসূচি দিয়ে অপ্রত্যাশিত কোনো অবস্থায় পড়লে আমারা সহযোগিতা করব না।
"সরকারকে সময় দেওয়া উচিত। আগামী একবছরের মধ্যে আমরা ক্ষতগুলো সারিয়ে নতুন পথের দিকে যেতে পারব।"
আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা সচিবালয়ে শিক্ষা সচিব মহোদয় থেকে শুরু করে আমাদের সবাইকে অবরুদ্ধ করে এক ধরনের বিচ্ছিন্ন অবস্থা তৈরি করে। সেজন্য সচিব মহোদয় শিক্ষা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার সাথে আলোচনা করে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন।
"পরীক্ষা বাতিল করার বিষয়কে আমরা কখনোই সমর্থন করি না। কারণ পরীক্ষা ছাড়া একটা শিক্ষার্থীকে কখনোই মূল্যায়ন করার সুযোগ নেই।"
তিনি বলেন, “পরীক্ষায় হচ্ছে একটি শিক্ষার্থীর মেধা মূল্যায়নের একমাত্র মাধ্যম। যারা প্রকৃত মেধাবী, যারা সারা বছর ধরে পড়াশোনা করেছে, এই পরীক্ষা ছাড়া মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে তাদের মূলত নিরুৎসাহিত করা হল।
"সুতরাং আমরা চাইব আর কখনোই এই ধরনের ডিসিশনের যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেটা চাপে পড়েই হোক বা যে কোনো কারণেই হোক।"
রাজধানী ঢাকা জুড়ে দাবি দাওয়া নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের আন্দোলনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে আহ্বান জানাব, ১৬ বছরের ক্ষত কখনোই ১৬ দিনে শুকায় না৷ তার জন্য সময় দিতে হয়। আপনারা বিভিন্ন দাবিতে যে এখন আন্দোলন করছেন, দেখুন ১৬ বছরের একটি ডিফল্ট সিস্টেমকে স্বাভাবিকীকরণের জন্য সরকারকে একটি সময় দিতে হবে।
"এখন আপনারা এই সংকটকালীন সময়টিকে পুঁজি করে যদি অস্থিতিশীল করতে চান, তাহলে আমরা ধরে নেব আপনারা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন।"
দাবি জানানোর জন্য কিছু কাঠামোগত প্রক্রিয়া রয়েছে মন্তব্য করে হাসনাত বলেন, “প্রথমে টেবিল টক, তারপর স্ট্রিট টক। কিন্তু প্রথমেই তারা স্ট্রিক টকে চলে যায়, তাহলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে আমাদের রাষ্ট্রের যে ফাংশনগুলো রয়েছে, সেগুলোকে যারা বিতর্কিত করতে চায়, তাদেরকে সুবিধাভোগী হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনাননুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
"আজকে ডিএমপি কমিশনারের সাথে আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ফলপ্রসূ মিটিং হয়েছে। জনশৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী তারা ডিমোরালাইজড হয়ে গিয়েছে। তারা যেন কাজে ফেরে, সেটার জন্য আমরা একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। সেটার আমরা একটা খসড়া করেছি।
"আমরা আশা করি, আগামী দুই দিনের মধ্যে আমরা বিভিন্ন থানায় থানায় আমাদের পরিকল্পনা নিয়ে 'রিভাইবাল অব দা স্প্রিট' পরিকল্পনা গ্রহণ করব। যেটি দিয়ে ছাত্র নাগরিক এবং পুলিশের ঐক্যবদ্ধ অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আবার পুলিশকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাঠে নিয়ে আসার জন্য আমরা চেষ্টা করব।"