“এলএনজি গ্যাসের চেয়ে সিলিন্ডার গ্যাস বেশি ঝুঁকিপূর্ণ; অল্পতেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে,” বলছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম।
Published : 20 Dec 2024, 05:02 PM
ঢাকার উত্তরার শাহ মখদুম রোডে ‘লাভ লীন’ রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস বলছে, কোনো ধরনের অগ্নি নিরাপত্তা সামগ্রী না থাকায় ভবনটিতে ঝুঁকিপূর্ণই ছিল।
সংস্থাটির প্রাথমিক ধারণা, ‘গ্যাসের লিকেজ’ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। ঘটনার পর তারা রেস্তোরাঁ মালিক কিংবা ভবন মালিককে ‘খুঁজে পাননি’।
শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের একটি পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় ‘লাভ লীন বাংলা রেস্টুরেন্টে’ আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিটের চেষ্টায় বেলা ২টা ২ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
খানিক বাদে আগুন নির্বাপণের পর ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “আমরা ভবনটিতে ফায়ার ফাইটিং- কোনো ইক্যুইপমেন্ট পাইনি। আমরা আমাদের জানা মতে, ভনটিতে নোটিস দিয়েছিলাম।
“এখানে ফায়ার সেফটি প্ল্যানও নাই। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে আরও তথ্য প্রদান করতে পারব।”
বহুতল ভবনটি আবাসিক হলেও সেখানে রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।
সেখানে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার কোনো অনুমোদন ছিল কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, “কী অনুমোদন ছিল আমাদের দেখতে হবে।”
তিনি বলেন, আগুনের শুরুতেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখতে পান, আগুন ‘ডেভলপমেন্ট স্টেজে’ চলে গেছে।
“এটা গ্যাসের লিকেজ থেকে যেহেতু হয়েছে, সুতরাং নিচের ফ্লোরে গ্যাসের উপস্থিতি ছিল। এখানে অনেক পেট্রোলিয়াম দ্রব্যাদি ছিল। ভবনটিতে রেস্টুরেন্ট, জিম, বিউটি পার্লার ছিল। উপরে মানুষের বসবাস ছিল। পাঁচতলা ভবনটির ছয়তলাটি টিনশেড করা ছিল।”
ভবনটি থেকে সাতজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। আগুন নির্বাপণের পর ভেতরে তল্লাশি করে কাউকে পাওয়া যায়নি। আর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ‘তদন্ত সাপেক্ষে’ বলা যাবে বলে মন্তব্য করেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা তাজুল।
অগ্নিকাণ্ডের দৃষ্টিকোণ থেকে ভবনটি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “এটার একটি মাত্র সিঁড়ি রয়েছে। আমরা বাইরে থেকে বৈদ্যুতিক তারের কারণে টিটিএল (টার্ন টেবল লেডার) সেট করতে পারছিলাম না।”
রেস্তোরাঁয় সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার হচ্ছিল, এটার অনুমোদন আছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, “এলএনজি গ্যাসের চেয়ে সিলিন্ডার গ্যাস বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। অল্পতেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আমরা এসে দেখেছি নিচেরতলা এবং দোতলায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। এজন্য আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়েছে।
“আর গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে অনুমোদনের বিষয়গুলো বিস্ফোরক অধিদপ্তর বলতে পারবে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে সিটি করপোরেশন দেখে। তারা বলতে পারবে।”
তিনি বলেন, “ঘটনার পর আমরা ভবন মালিককে খুঁজেছি, পাইনি। আমাদের পরিদর্শকদের কাজই ভবন পরিদর্শন করে নোটিস দেওয়া। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে বাদবাকি তথ্য নিশ্চিত হতে পারব।”
এর আগে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম দোলন বলেন, “আগুনের খবর পেয়ে সকাল ১০টা ৪৪ মিনিটে আমাদের প্রথম ইউনিট পৌঁছায়। পরে উত্তরা, টঙ্গী, বারিধারা, কুর্মিটোলা, সিদ্দিক বাজার ফায়ার স্টেশন থেকে ক্রমান্বয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়।”