“শুরুর দিকে কম থাকলেও, দিনদিন ক্রেতা সমাগম বাড়ছে; সামনে আরও বাড়বে আমরা আশা করি,” বলেন রিচম্যানের শাখা ব্যবস্থাপক মেহেদী।
Published : 15 Mar 2025, 12:44 AM
রোজার দ্বিতীয় সপ্তাহে ছুটির দিন শুক্রবার ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেল রাজধানীর বিপণিবিতান বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে; শেষ মুহূর্তের ভিড়ের চাপ এড়াতে নানা বয়েসীরা এসেছিলেন আগেই কেনাকাটা সারতে।
বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতা সমাগম আগের সপ্তাহের তুলেনায় বাড়লেও এখনও বিক্রি জমে ওঠেনি। এর জন্য আরও কয়েকদিনের অপেক্ষার কথা বলছেন তারা।
দেশি পোশাকের ১০ ব্র্যান্ড অঞ্জনস, কে ক্র্যাফট, বাংলার মেলা, রঙ বাংলাদেশ, সাদাকালো, বিবিয়ানা, নিপুণ, দেশাল, প্রবর্তনা ও সৃষ্টি সম্মিলিতভাবে ‘দেশি দশ’ নামে দোকান খুলে পোশাক বিক্রি করে থাকে।
রঙ বাংলাদেশের বসুন্ধরা শাখার ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার ভালো ভিড় হয়। গতবার মার্কেটে কাস্টমারের যে চাপ ছিল, এবার সেটা নেই।”
এবার রোজার দ্বিতীয় সপ্তাহে ভিড় খানিকটা বাড়লেও তা গতবারের তুলনায় কম বলে মনে করেন তিনি।
পোশাকের ব্র্যান্ড রিচম্যানের শাখা ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান বলেন, “এ বছর বিক্রি গতবারের রোজার মতই হচ্ছে। শুরুর দিকে কম থাকলেও, দিনদিন ক্রেতা সমাগম বাড়ছে। সামনে আরও বাড়বে, আমরা আশা করি।”
রোজার অর্ধেক শেষ হওয়ার পর বিক্রি আরও বাড়ার প্রত্যাশা করছেন পোশাকের ব্র্যান্ড জেন্টল পার্কের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ উজ্জ্বল কুমার সেন। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবার ঈদের বাজারেও প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন তিনি।
“দেশের অবস্থা ‘জরুরি পরিস্থিতি’ বলা চলে। কাস্টমারের একটা বেইজ ছিল, এখন নতুন করে আবার তৈরি করতে হচ্ছে। একটা লেভেলের কাস্টমারের কাছে আগে সেল করতাম, সেই লেভেলটার শূন্যতা তৈরি হয়েছে। যার কারণে আমাদের একটা শ্রেণি তৈরি করতে হচ্ছে।”
শুক্রবার বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের সামনের অংশের দোকানগুলোতে ক্রেতা সমাগম বেশি দেখা গেলেও ভেতরে দোকানগুলো ক্রেতা খরায় ভুগেছে। অলস সময় পার করতে দেখা যায় সেখানকার কর্মীদের।
ক্রেতাদের বেশ ভিড় দেখা গেছে জুতার দোকানগুলোতে। জুতার ব্র্যান্ড বাটার শাখা ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান বলেন, “আজকেই (শুক্রবার) প্রথম বিক্রি বেড়েছে। সামনে আরও বাড়বে আশা করছি।”
বিক্রি নিয়ে ‘হা-হুতাশ’
রোজার দ্বিতীয় সপ্তাহ শেষে ক্রেতা সমাগম বাড়লেও বিক্রি নিয়ে ‘হা-হুতাশ’ করছেন বিক্রেতারা।
ছেলেদের প্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট বিক্রির দোকান ‘টাইম ফোকাস’ এর কর্মী মারুফ সিকদার বলেন, গত রোজার প্রতি শুক্রবার তারা দেড় থেকে ২ লাখ টাকার পোশাক বিক্রি করেছেন। সেখানে ৩০/৪০ হাজার টাকার পোশাক বিক্রি করতে পারছেন।
“এর বেশি হচ্ছে না। অনেক খারাপ অবস্থা। যে রকম আশা করেছিলাম, ওইরকম বিক্রি করতে পারছি না। মানুষের হাতে টাকা পয়সা নাই, ব্যবসা-বাণিজ্য খুব খারাপ। আগে একটা ব্যবসা করলে মানুষ লাভবান হইত, এবার লাভ করতে পারতেছে না,” বলেন মারুফ।
পুরুষদের পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্ট বিক্রির দোকান ফিওনার সহকারী শাখা ব্যবস্থাপক ফরহাদ আহমেদ বিক্রি জমে ওঠার জন্য আরও কয়েক দিন অপেক্ষার কথা বলছেন। তিনি বলেন, “দেশের পরিস্থিতি আর আগের মত নাই। সবাই একটু সেইফলি টাকাগুলো খরচ করতে চায়। সবাই স্যালারির আশায় বসে আছে, টাকা পেলে কিনবে।”
ছেলেদের প্যান্ট, শার্টসহ বিভিন্ন পোশাক বিক্রি হয় ‘এস্টসাইডে’। দোকানটির সেলস এক্সিকিউটিভ সোহেল রানা বাবু বলেন, “ছিনতাই বেড়ে যাওয়াসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে এবার তারা ঢাকার বাইরের ক্রেতা পাচ্ছেন না।
“কাস্টমারের চাপ এবার কম। ঢাকার লোক যারা আছে তাদেরই শুধু পাচ্ছি। আগে রাত হলে কাস্টমারের যে চাপ বাড়ত, এবার সে চাপটা কমে যাচ্ছে। দিনের বেলায়ই বেচাকেনাটা হচ্ছে, রাতের আসার ক্ষেত্রে ঝুঁকি মনে করছে।”
ছেলেদের পোশাকের দোকান ‘ওয়েস্টিন’ এর শাখা ব্যবস্থাপক রাব্বি কাজী বলেন, “বিক্রি এবার আগের চেয়ে অনেক কম। কাস্টমার আসছে না।”
এমব্রেলার বিক্রয়কর্মী রোজা রহমান রোকসানা বলেন, গত বছর ৩/৪ রোজাতেই যে ক্রেতা পেয়েছিলেন, এবার তারা সেই পরিমাণ বিক্রি করতে পারছেন ১২/১৩ রোজাতে।
“দুই-তিন দিন আগে বিক্রিটা কম ছিল, আজকে (শুক্রবার) ভালোই বিক্রি হচ্ছে। দিনদিন বিক্রি বাড়তির দিকে যাচ্ছে। আমাদের জিনিস ভালো, দাম কম, ডিসকাউন্ট আছে, এজন্য কাস্টমারের আনাগোনাও বেশি হচ্ছে আমাদের এখানে।”
সবচেয়ে কম ক্রেতা সমাগম দেখা গেছে শাড়ির দোকানগুলোতে। বেশ কিছু দোকানে কোনো ক্রেতাই দেখা যায়নি।
শাড়ির দোকান নিউ ‘তাঁত ঘর’ এর বিক্রেতা আখতারুজ্জামান লিটন বলেন, “গতবারের তুলনায় এবার তাদের বিক্রি কমেছে। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, দ্রব্যমূল্যের দাম বেশি, ঈদের কেনাকাটার পেছনে মানুষের এক্সট্রা যে বাজেট, সে বাজেটটা করার মত সক্ষমতা এখন সাধারণ মানুষের নেই। দিন যত বাড়তেছে ক্রেতা আরও কমে যাচ্ছে।”
‘সাধ্যের মধ্যেই সাধ পূরণের চেষ্টা’
পাঞ্জাবি কিনতে ফার্মগেট থেকে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে এসেছিলেন ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, “স্টুডেন্ট তো, আমাদের বাজেট কমই থাকে। ঘুরে ঘুরে দেখলাম কমে কিছু নাই, সব দুই হাজারের বেশি। এ কারণে শার্ট, টি-শার্ট এগুলা কেনার কথা ভাবতেছি।”
বাজেটের মধ্যে পছন্দের পোশাক কিনতে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের বিভিন্ন দোকানে ঘুরছিলেন তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা মাহবুবে রহমান মাহী। তিনি বলেন, “ঈদের জন্য তো সবচেয়ে মানানসই পোশাক পাঞ্জাবি, তাই পাঞ্জাবি কিনতে এসেছিলাম। পাঞ্জাবির সাথে চটি, লোফার, পায়জামা মিলিয়ে কিনতে হয়। পাঞ্জাবির সঙ্গে তো সবকিছু পরা যায় না। তবে দাম একটু বেশিই মনে হচ্ছে, কুলাইতে না পারলে নিউ মার্কেটে চলে যাব।”
‘দেশি দশে’ নিজের জন্য পোশাক পছন্দ করছিলেন মিরপুরের কাজীপাড়ার বাসিন্দা রাইমা সুলতানা সামান্থা। তিনি বলেন, “থ্রি-পিসের কালেকশন দেখতেছি। জিনিস পছন্দ হচ্ছে, দামও ভালোই। বেশিও আছে, কমও আছে, এখন দেখি কোনটা কিনব।”
নিজের ও পরিবারের জন্য কেনাকাটা সেরে বাড়ি ফিরছিলেন মিরপুরের শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা মোহাইমিনুল ইসলাম। যে পোশাক গত বছর দেড় হাজার টাকায় কেনা যেত, এবার সেটা আড়াই-তিন হাজার টাকায় কেনার কথা বলছেন তিনি।
মোহাইমিনুল বলেন, “দাম বাড়ার ফলে এবার মানে ছাড় দিতে হয়েছে। যে কোয়ালিটি প্রত্যাশা করি, তার থেকে কম কোয়ালিটির কিনতে হচ্ছে। যারা ধনী তারা সেই প্রাইজটা এফোর্ড করতে পারবে, মধ্যবিত্তদের জন্য একটু ঝামেলা।
“মেয়েদের যে প্রোডাক্টগুলো আছে সেগুলোর দাম বেশি, ছেলেদের প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে পাঞ্জাবির দাম বেশ ভালো রেঞ্জের মধ্যেই আছে। কিন্তু শার্টের দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে।”