বিগত বছরের তুলনায় এবার লিটলম্যাগ চত্বর সুসজ্জিত হলেও বেশিরভাগ স্টলেই আসেনি নতুন সংখ্যা।
Published : 12 Feb 2025, 11:32 PM
একুশে বইমেলার লিটলম্যাগ চত্বরের প্রবেশমুখেই দেখা গেল ছোট একটি জটলা। সেখানে কেউ কেউ দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, আরেক পাশে এক চিত্রকর আঁকছেন ছবি।
কিন্তু ভেতরে চোখ যেতেই দেখা গেল ফাঁকা, সুনসান নিরবতা। বেশিরভাগ স্টলেই অলস সময় কাটাচ্ছেন লিটলম্যাগ কর্মীরা।
নেই চিরচেনা সেই আড্ডা, গানের সুরে যে তরুণরা গিটারে ঝংকার তুলতেন, তারাদেরও দেখা যাচ্ছে না এবার।
তবে মেলার আয়োজক কমিটি বিগত বছরের তুলনায় এবার সুন্দর করে সাজিয়েছে লিটলম্যাগ চত্বর। সাজে চাকচিক্য থাকলেও বেশিরভাগ স্টলেই আসেনি নতুন সংখ্যাও।
‘ব্যাটিংজোন’ এর সম্পাদক মাহফুজ রিপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার তেমন লোক আসছে না, লিটলম্যাগ চত্বরে কোনো আড্ডা নেই, গান নেই। তবে লিটলম্যাগ চত্বরকে এবার নান্দনিকভাবে সাজানো হয়েছে।”
এবার লিটলম্যাগ চত্বরে দেওয়া হয়েছে বসার বেঞ্চি, আলোর ব্যবস্থাও বাড়ানো হয়েছে। বুধবার বিকেলে বেঞ্চিতে বসে অলস সময় কাটাচ্ছিলেন কয়েকজন তরুণ।
তাদের একজন রাসেল মাশুক বলেন, “মেলায় ঘুরে এখানে এসে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি। লিটলম্যাগ চত্বরটা কেন জানি খুব নিষ্প্রাণ লাগছে, এখানে আড্ডাটা জমছে না।”
একই কথা কবি শাহেদ কায়েসের।
“লিটলম্যাগ চত্বরকে এবার বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে নান্দনিক লাগছে। বসার জায়গাও করা হয়েছে। কিন্তু লিটলম্যাগকর্মীদের অনেককেই মেলায় দেখছি না। প্রাণবন্ত আড্ডাটা নেই।”
এবার নতুন সংখ্যা এনেছে ‘ব্যাটিংজোন’, ‘মঞ্চকথা’সহ কয়েকটা লিটলম্যাগ। তবে বেশিরভাগ স্টলই সাজিয়েছে পুরনো সংখ্যা দিয়ে।
নতুন সংখ্যা নেই কেন- প্রশ্নে থিয়েটার বিষয়ক পত্রিকা ‘ক্ষ্যাপা’র নির্বাহী সম্পাদক অপু মেহেদী বলেন, “আমরা মুনীর চৌধুরীকে নিয়ে একটা বিশেষ সংখ্যার কাজ করছি। এটি গুছিয়ে নিতে সময় লাগছে। মেলার পরপরই সংখ্যাটি আনতে পারব বলে আশা করছি।”
‘দেয়াঙ’ সম্পাদক মাহমুদ নোমান বলেন, “তেমন বিক্রিও নেই, আড্ডাও নেই।”
লিটলম্যাগ স্টল বরাদ্দ ও ব্যবস্থাপনা উপকমিটির আহ্বায়ক ড. একেএম কুতুবউদ্দিন বলেন, “এবার আমরা ১৩০টির মতো স্টল বরাদ্দ দিয়েছি লিটলম্যাগ চত্বরে। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবারই সবচেয়ে বেশি নান্দনিক করে সাজানো হয়েছে। আমরা চেয়েছি লিটলম্যাগ চত্বর যেন সৃজনশীল লেখকদের আড্ডায় মুখরিত থাকে।”
বুধবার ছিল বইমেলার দ্বাদশ দিন।
এদিন সন্ধ্যায় মেলার মাঠে পাওয়া যায় কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহারকে। বিকেলে বইমেলার মূল মঞ্চের আলোচনা পর্বে অংশ নিয়ে মেলার মাঠে যান তিনি।
এসময় সাংবাদিকদের ফরহাদ মজহার বলেন, “এবার মেলায় এসে ভালো লাগছে। অনেক বছর ধরে তো ‘আওয়ামী গুন্ডা’দের কারণে বইমেলায় আসতে পারিনি। এবার মেলার পরিবেশ ও ছিমছাম স্টল দেখে ভালো লাগছে।”
মেলায় দর্শনার্থীদের কেউ কেউ এসেছিলেন হলুদ পোশাকে সেজে, মাথায় ফুলের মালা। দুদিন পর পহেলা ফাল্গুন হলেও মেলায় অনেককেই বসন্তের সাজে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।
নতুন বই
মেলা পরিচালনা কমিটির জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, ১২ দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ৯১৭টি। এর মধ্যে বুধবার এসেছে ৮৯টি নতুন বই।
‘অন্যপ্রকাশ’ এনেছে সালেহ উদ্দিন আহমদের গল্পগ্রন্থ ‘বেচু সরদারের ট্রুথ কমিশন’। এটি লেখকের দ্বিতীয় গল্প সংকলন।
বইয়ের নামকরণ দেখে মনে হতে পারে, এটি রাজনৈতিক ঘরাণার বই।
তবে সালেহ উদ্দিন আহমদের ভাষ্য, “এটি গল্পগ্রন্থ, যেখানে মানুষের আনন্দ-বেদনার গল্প সংকলিত হয়েছে।”
সালেহ উদ্দিন আহমদ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় অনেক বছর ধরে গল্প ও রাজনৈতিক প্রবন্ধ লিখছেন। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দুই। একটি গল্পগ্রন্থ ‘ঘূর্ণি নিলয়’, অন্যটি তার আত্মজ পাঠাও-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহকে নিয়ে সম্পাদনাগ্রন্থ ‘ফাহিম সালেহ স্বপ্নের কারিগর’।
আলোচনা কবিতা গান
‘লেখক বলছি’ মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- কবি ফয়েজ আলম এবং কবি সৈয়দ রনো।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্লোগান: বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারাবাহিকতায় বাকশাল গঠন, বাংলা সাহিত্যের দায় ও ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাসান রোবায়েত। আলোচনায় অংশ নেন করেন মঈন জালাল চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন ফরহাদ মজহার।
সাংস্কৃতিক পর্বে আবৃত্তি পরিবেশন করেন শিরিন জাহান এবং শাকিলা মতিন মৃদুলা। এছাড়া ছিল ফরিদা পারভীনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘অচিন পাখি’ এবং শরিফুল ইসলামের পরিচালনায় ‘জাগরণী সাংস্কৃতিক সংগঠন’ এর পরিবেশনা।
সংগীত পরিবেশন করেন বর্ণালী সরকার, রাজিয়া সুলতানা, মুন্নি কাদের, নুসরাত জাহান, ঐশ্বর্য সমদ্দার, আফরোজা বেগম ইয়াসমিন, মনীষ সরকার এবং শ্রাবন্তী ধর।
বৃহস্পতিবার বইমেলার ত্রয়োদশ দিনে বিকেল ৪টায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ২০২৪’ শীর্ষক আলোচনা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সারোয়ার তুষার। আলোচনায় অংশ নেবেন যোবায়ের আল মাহমুদ এবং নুসরাত সাবিনা চৌধুরী। সভাপতিত্ব করবেন মাহবুব মোর্শেদ।