বিচারাধীন হত্যা মামলা নিয়ে ‘মনগড়া’ কথা লেখার অভিযোগ আনা হয়েছে।
Published : 03 Aug 2023, 09:55 PM
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশের মৃত্যু নিয়ে ‘নতুন দিগন্ত’-এ সম্পাদকীয় প্রকাশের জেরে ত্রৈমাসিক পত্রিকাটিকে লিগ্যাল নোটিস পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার নতুন দিগন্ত সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, নির্বাহী সম্পাদক মযহারুল ইসলাম বাবলা ও মুদ্রক নীলক্ষেতের সুদীপ্ত প্রিন্টার্সকে এ নোটিস পাঠান ফারদিনের বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানা।
সেখানে বলা হয়, ‘নতুন দিগন্ত’র একবিংশ বর্ষের তৃতীয় সংখ্যায় (এপ্রিল-জুন ২০২৩) ‘বিকল্প কি নেই" শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে লেখা হয়েছে- (ক) ‘শেষ পযন্ত ছেলেটি আত্মহত্যাই করলো’ (পৃষ্ঠা ৭, প্রথম বাক্য); (খ) ‘আমরা না হয় ধরেই নিলাম আত্মহত্যার ঘটনাই ঘটেছে’ (পৃষ্ঠা ৮, লাইন ৪); (গ) ‘...ফারদিন যদি সত্যি সত্যি নিজেই নিজেকে খুন করে থাকে, তবে সেটা নিশ্চয়ই ঘটেছে চরম হতাশা থেকেই’ (পৃষ্ঠা ৯, লাইন ৪)।
বিচারাধীন হত্যা মামলা নিয়ে এমন ‘মনগড়া ধরে নেওয়া’র কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে এ ধরনের সম্পাদকীয় প্রকাশের জন্য নোটিস প্রাপকদের দুঃখ প্রকাশ ও নোটিসটি পত্রিকার পরবর্তী সংখ্যায় হুবুহু ছাপানোর অনুরোধ জানান রানার আইনজীবী।
নোটিসে বলা হয়, “সম্পাদকীয়টি পরিকল্পিত হত্যা মামলার চলমান তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত/ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপপ্রয়াস এবং ভিকটিম ও তার পরিবারকে চরমভাবে আঘাত করার উদ্দেশ্য ছাড়া আর কিছু নয়; এবং এটি সম্পাদক মহোদয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করেছেন বলে আমার মোয়াক্কেলের কাছে প্রতীয়মান হয়।
“কেননা সাংবাদিকতার ব্যাকরণ ও নীতিমালা অনুযায়ী, চাঞ্চল্যকর, বিচারাধীন অমিমাংসিত বিষয়ে কোনো গণমাধ্যম, দৈনিক, সাপ্তাহিক, ক্ষুদে পত্রিকা, পর্যালোচনা পত্রিকা, গবেষণা পত্রিকা, প্রবন্ধের পত্রিকা এরূপ সম্পাদকীয় লিখতে পারে না; যাতে ভিকটিম ও তার পরিবারকে আঘাত করতে পারে; বিচার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত / ভিন্নপথে পরিচালিত করা এবং অপরাধী ও দুবৃৃত্ত পক্ষের কৃতকর্মকে আড়াল করে দেয়।”
বুয়েটের পুরকৌশলের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ফারদিন (২৪) বিতার্কিক ছিলেন। গত বছরের ডিসেম্বরে স্পেনের এক অনুষ্ঠানে তার যাওয়ার কথা ছিল।
তার এক মাস আগে গত বছরের ৪ নভেম্বর দুপুরে ঢাকার ডেমরার কোনাপাড়ার বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন ফারদিন। বাবা-মার বড় ছেলে ফারদিন কোনাপাড়ায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।
ফারদিন বেরিয়ে যাওয়ার সময় মাকে বলে গিয়েছিলেন, পরদিন তার পরীক্ষা রয়েছে বলে রাতে বুয়েটের হলেই থাকবেন। পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফিরবেন।
ফারদিন হত্যা: তদন্ত প্রতিবেদন ফের পিছিয়েছে
কিন্তু পরদিন পরীক্ষায় তার অনুপস্থিত থাকার খবর জেনে খোঁজাখুজি করেও ছেলেকে না পেয়ে থানায় জিডি করেন নূরউদ্দিন রানা। তিন দিন পর ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে ফারদিনের লাশ পাওয়া যায়।
এরপর ১০ নভেম্বর নূরউদ্দিন রানা হত্যা মামলা করেন। তাতে আসামি করেন ফারদিনের বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাকে, যার সঙ্গে ফারদিন দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত ছিলেন। তখন পুলিশ বুশরাকে গ্রেপ্তার করে, হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করে।
পরে ফারদিন ‘আত্মহত্যা’ করেছেন জানিয়ে পুলিশ এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। তখন বুশরাকে জামিন দেয় আদালত।
গোয়েন্দা পুলিশের দেওয়া ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে আপত্তি জানিয়ে ফারদিনের বাবা কাজী নুরউদ্দিন রানার ‘নারাজি’ আবেদন করেন। গত ১৬ এপ্রিল তা গ্রহণ করে ঢাকা মহানগর হাকিম শান্ত ইসলাম মল্লিক মামলাটি সিআইডিকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।
এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদলে যায়। গত ৩ মে ঊর্ধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডির পরিদর্শক বেলায়েত হোসেনকে। অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ কয়েকবার পিছিয়ে আগামী ২৯ অগাস্ট নতুন দিন রেখেছে আদালত।