বিকালে কোথায় তারা অবরোধ করবেন তা স্পষ্ট নয়।
Published : 03 Feb 2025, 01:54 PM
সরকারি তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে পঞ্চম দিনের মতো সড়ক অবরোধ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কলেজের মূল ফটকের সামনে বাঁশ ফেলে তারা সড়কটি আটকে দেন।
আন্দোলনরত ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিকালে ঢাকা উত্তর সিটি অবরোধ বা বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি পালনের প্রস্তুতি চলছে।”
তবে বিকালে কোথায় অবরোধ পালন করা হবে তা স্পষ্ট করেননি এ শিক্ষার্থী।
গত ২৬ জানুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে সাত কলেজকে মুক্ত করার ঘোষণা দেন।
এই সাত কলেজ নিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছে সরকার। তবে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা চাইছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানটিকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দেওয়া হোক।
ডজন খানেক ছাত্রকে নিয়ে সোমবার দুপুরে কলেজের সামনে হাতমাইকে স্লোগান দিচ্ছিলেন বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশিক মাহমুদ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছয় কলেজ তারা বিশ্ববিদ্যালয় করুক। আমরা তিতুমীর সেখানে থাকব না। তিতুমীর কলেজকেই বিশ্ববিদ্যালয় করতে হবে।’’
সাত কলেজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় হলে লেখাপড়ার মানের উন্নতি হবে না মন্তব্য করে আশিক বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার পর আমাদের সেশনজট আরো বেড়েছে, ক্লাস হয়নি ঠিকমত। লেখাপড়ার মান কমে গেছে। সাত কলেজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় হলে একই সমস্যা হবে।’’
তিতুমীর কলেজকে বাদ দিয়ে ছয় কলেজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় হলে তাদের কোনো আপত্তি থাকবে না বলেও মন্তব্য করেন আশিক।
এদিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। তবে আমতলী ও গুলশান-১ থেকে তিতুমীর কলেজের সামনে পর্যন্ত রিকশায় আসা যাচ্ছে। কলেজের সামনে নেমে বেরিকেড পেরিয়ে আরেক রিকশায় উঠতে হচ্ছে যাত্রীদের।
মহাখালীর বক্ষ্যব্যাধি হাসপাতালে যেতে শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে আমতলী থেকে হেঁটে রওনা হন রোকেয়া বেগম। আগারগাঁও থেকে বোনকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন চিকিৎসার জন্য। রোকেয়া পথচারীদের জিজ্ঞেস করছিলেন, হাসপাতাল আর কতো দূর।
কোলের সন্তানকে দেখিয়ে রোকেয়া বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ফোর ডটকমকে বলেন, “বাচ্চাকে ওই হাসপাতালে নিমু। ডাক্তার বলছে, আইজ যাইতে।
“বাসতো মহাখালীতে নামাই দিল। এহন হাডন ছাড়া তো উপায় দেখছি না। টাইমে যাইতে না পারলে ডাক্তার তো দেখবো না।”
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরসহ সাত দাবিতে মঙ্গলবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। পরদিন বিকাল থেকে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আমরণ অনশন’ লেখা ব্যানার টাঙিয়ে কলেজের মূল ফটকের সামনে অনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। আর বৃহস্পতিবার থেকে বিরতি দিয়ে চলছে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি।
আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘তিতুমীর ঐক্যর’ সাত দফার মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ; ‘বিশ্ববিদ্যালয়’প্রশাসন গঠন করে ২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা এবং শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা কিংবা শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন করা।
এদিকে সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে 'বিশেষ বিবেচনা করিনি' বলে শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ যে বক্তব্য দিয়েছেন তা প্রত্যাহার এবং প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর কমিশন গঠনে ‘বাধা দেওয়ার’ অভিযোগ তুলে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।