শূন্যরেখায় গোলাগুলি 'রোহিঙ্গা মাদক কারবারিদের’ সঙ্গে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

গোলাগুলির সময় এক রোহিঙ্গা নারীরও মৃত্যু হয়েছে বলে ক্যাম্পের মাঝির ভাষ্য।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ও বান্দরবান প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2022, 09:23 AM
Updated : 15 Nov 2022, 09:23 AM

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তের শূন্য রেখায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে ‘রোহিঙ্গা মাদক কারবারিদের’ সঙ্গে। 

মঙ্গলবার ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “গোয়েন্দা সংস্থার খবরের ভিত্তিতে মাদকবিরোধী অভিযান চালানো হচ্ছিল। দুর্ঘটনাবশত একজন অফিসার সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তিনি কীভাবে গুলিবিদ্ধ হলেন এবং কোন মাদক কারবারিরা তাকে গুলি ছুড়লো– এসব বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি। এ ঘটনার সত্য উদঘাটন করে আমরা পরবর্তীতে জানাব।”

নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে কোনারপাড়া শূন্যরেখায় সোমবার সন্ধ্যায় ‘চোরাচালানিদের’ সঙ্গে সংঘর্ষে সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা নিহত এবং র‍্যাবের এক সদস্য আহত হওয়ার খবর রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পক্ষ থেকে জানানো হয়।

Also Read: তমব্রু সীমান্তে ‘মাদক চোরাচালানির’ সঙ্গে সংঘর্ষ, সামরিক কর্মকর্তা নিহত

আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিহত ব্যক্তি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একজন কর্মকর্তা; তিনি প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা-ডিজিএফআইয়ে কর্মরত ছিলেন। তবে তার নাম প্রকাশ করা হয়নি।

আহত র‌্যাব সদস্য সোহেল বড়ুয়া (৩০) র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নে কর্মরত। তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাতেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় পাঠানো হয়।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি দল তুমব্রুর সীমান্তের কোনপাড়ার শূন্যরেখায় আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছে। ৬২১টি পরিবারের ৪ হাজার ২৮০ জন রোহিঙ্গা রয়েছে সেখানে।

কোনাপাড়া ক্যাম্পের মাঝি (দল নেতা) দিল মোহাম্মদ মঙ্গলবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের ক্যাম্পের পাশে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ থেকে ৭টার মধ্যে গোলাগুলির ওই ঘটনা ঘটে।

“এসময় শত শত রাউন্ড গুলির শব্দ আসে। ক্যাম্পের বাসিন্দা সাজেদা বেগম নামের ২০ বছর  বয়সী এক তরুণী মা গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। মাত্র সাত দিন আগে তার বাচ্চা হয়েছে।”

মঙ্গলবার সকালে ওই নারীকে দাফনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান দিল মোহাম্মদ।

ক্যাম্পে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখানে রোঙ্গিাদের সবসময় ভয় আতঙ্ক নিয়ে থাকতে হয়। কখন কী ঘটে ঠিক নাই। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে এসে এখানেও আমাদের নিরাপত্তা নাই।”

সীমান্তের এপারে ঘুমধম ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, র‌্যাবের সঙ্গে চোরাচালানিদের সংঘর্ষের কথা তিনি শুনেছেন। তবে রোহিঙ্গা নারীর মৃত্যুর বিষয়টি তার জানা নেই।

আইএসপিআর বা র‌্যাবের পক্ষ থেকেও গোলাগুলির সময় রোহিঙ্গা নারীর মৃত্যুর বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।

মঙ্গলবার ঢাকার মিরপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহের অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকরা তুমব্রুর ঘটনা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

জবাবে তিনি বলেন, “অভিযানের জায়গাটি নোম্যান্সল্যান্ড। সেখানে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অবস্থান বলে জানা গেছে।… যখন এ ধরনের অভিযানে যাওয়া হয় তখন গোয়েন্দা সংস্থার পরিকল্পনামাফিক অভিযান হয়ে থাকে।”

এদিকে গোলাগুলিতে আহত র‌্যাবে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল সোহেল বড়ুয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। তার মাথায় ইতোমধ্যে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।

নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফজলে এলাহি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তার মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে ছিল। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেটা অপসারণ করা হয়েছে।”