৯ মামলায় ফখরুল জামিন পাবেন? আদেশ বুধবার

ফখরুলের জামিন শুনানির জন্য বুধবার আদালতে তাকে হাজির করার প্রয়োজন পড়বে না বলে জানিয়েছেন বিচারক।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Jan 2024, 08:34 AM
Updated : 9 Jan 2024, 08:34 AM

রাজধানীর রমনা ও পল্টন থানার নয়টি মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে।

এসব মামলায় তিনি জামিন পাবেন কিনা সে বিষয়ে বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. সুলতান সোহাগ উদ্দিন আদেশ দেবেন।

ফখরুলের আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার নয়টি মামলায় তার জামিনের বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য ছিল। এদিন বেলা পৌনে ১২টার দিকে কারাগার থেকে ফখরুলকে আদালতে হাজির করা হয়।

শুনানি চলার সময়ে মামলাগুলোতে ফখরুলকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। আর ফখরুলের আইনজীবী আসাদুজ্জামান তার জামিন চান। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে বিচারক দুপুর ১টার ৫০ মিনিটের দিকে আদেশ দেন।

ফখরুলের জামিন শুনানির জন্য বুধবার দিন রাখলেও তাকে আদালতে হাজির করার প্রয়োজন পড়বে না বলে জানান বিচারক।

ফখরুলের বিরুদ্ধে এ মামলাগুলোতে জামিন আবেদন গ্রহণ করে হাই কোর্ট গত ১৮ ডিসেম্বর হাকিম আদালতকে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছিল।

একইসঙ্গে জামিন আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ না করা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে তখন রুলও জারি করেছিল বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাই কোর্ট বেঞ্চ।

হাকিম আদালত রমনা ও পল্টন থানায় করা ১০ মামলায় মির্জা জামিন আবেদন গ্রহণ না করায় ১৪ ডিসেম্বর রিট আবেদন করেন মির্জা ফখরুল। ১০ মামলার মধ্যে পল্টন থানার সাতটি এবং রমনা থানার তিনটি মামলার কথা রিট আবেদনে বলা হয়।

এর মধ্যে পল্টন থানার একটি মামলায় মির্জা ফখরুলকে গ্রেপ্তার দেখানোয় ৯ মামলার ক্ষেত্রে জামিন আবেদন গ্রহণ করে আইন অনুসারে তা নিষ্পত্তি করতে হাকিম আদালতকে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।

সে প্রসঙ্গ ধরে বিএনপি মহাসচিবের আইনজীবী আসাদুজ্জামান মঙ্গলবার শুনানিতে বলেন, “তিনটি মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণে আসামির তালিকায় এবং দুইটিতে এজাহারের ভেতরে তার (ফখরুলের) নাম রয়েছে। আমরা এর আগে তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন ঢাকার একজন মহানগর হাকিমের কাছে দিয়েছিলাম। তিনি সে আবেদন নাকচ করে দিলে আমরা হাই কোর্টে রিট করি। কজ অব অ্যাকশন পেয়ে যাই। সেখানে আদেশে হাই কোর্ট যা বলে, আপিল বিভাগ তা মেনে নেয়।”

উচ্চ আদালতের আদেশ পড়ে শুনিয়ে এই আইনজীবী বলেন, “ইন অ্যাকরডেন্স উইথ ল গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন নিষ্পত্তির কথা বলেন উচ্চ আদালত। অথচ এখন আমাদের বলতে হয় ‘আমাকে গ্রেপ্তার দেখানো হোক, আমাকে গ্রেপ্তার দেখানো হোক। এটা আমাদের আয়রনি।”

শুনানিতে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়ে শুনিয়ে আইনজীবী আসাদুজ্জামান বলেন, “জনাব লিয়াকত আলী খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং জনাব নুরুল আমিন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। এদের আমলে যে নির্যাতন ও নিপীড়ন রাজনৈতিক বন্দিদের ওপর হয়েছে, তা দুনিয়ার কোনো সভ্য দেশে কখনো হয় নাই।”

অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে আরও কিছু পড়ে শোনাতে গেলে রাষ্ট্রপক্ষ বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলে, ‘মামলার মেরিটে বলা হোক’। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

ফখরুলের আইনজীবী বলেন, “এগুলো অবশ্যই এখানে প্রাসঙ্গিক। এ গ্রন্থ একটি বাইবেলের মত। দুঃখ যে এই গ্রন্থটি আমাদের রাজনীতিকরা, আমার প্রসিকিউশনের বন্ধুরা পড়েননি।”

আইনজীবী আসাদুজ্জামানের আরও কথার পরে বিচারক সুলতান সোহাগ উদ্দিন বলেন, “উচ্চ আদালতের আদেশ অবশ্যই আমাদের ওপর বাধ্যতামূলক। একটু অপেক্ষা করুন। গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন এবং অভিযুক্তকে কোর্ট হাজত থেকে এজলাসে আনা হোক।”

দশ মিনিট পরে মির্জা ফখরুলকে এজলাসে তোলা হলে আবার শুনানি শুরু হয়। তার আইনজীবী বলেন, মির্জা ফখরুল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন করতে যেয়ে এই বিপদে পড়েন। তিনি যদি আপস করতেন, তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করা হত না। তার ভাসকুলার ডিজিজ রয়েছে। তার হাঁটতে কষ্ট হয়। ওজন কমে গেছে পাঁচ কেজি।”

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি শাহ আলম তালুকদার, সাজ্জাদুল হক শিহাব, তাপস পাল। প্রায় ৪০ মিনিট শুনানির পর আদালত ফখরুলকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করে তার জামিন আবেদনের বিষয়ে আগামীকাল বুধবার আদেশ দেওয়ার কথা জানান।

আরও পড়ুন-

Also Read: জামিন শুনানির জন্য আদালতে ফখরুল