“প্রতিটা ম্যাগাজিনে ৩০টি করে ৬০ রাউন্ড গুলি থাকে। একটা ম্যাগাজিন শেষ হওয়ার পর আরেকটা ম্যাগাজিন অস্ত্রে লাগিয়ে সে ৮ রাউন্ড গুলি করে।”
Published : 09 Jun 2024, 01:42 PM
রাজধানীর বারিধারায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে এক পুলিশ সদস্যের গুলিতে আরেক সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনার ভয়াবহ বিবরণ উঠে এসেছে সুরতহাল প্রতিবেদনে।
পুলিশের এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কনস্টেবল কাউসার আহমেদ সাব মেশিনগান দিয়ে দুটি ম্যাগাজিনের ৩৮ রাউন্ড গুলি চালান। কনস্টেবল মনিরুল ইসলামের দেহ তাতে ঝাঁঝরা হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে ফিলিস্তিন দূতাবাসের উত্তর পাশের গার্ডরুমের বাইরে ওই ঘটনা ঘটে। এলোপাতাড়ি গুলির মধ্যে ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় জাপান দূতাবাসের গাড়ি চালক সাজ্জাদ হোসেন শাহরুখও গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মনিরুলের লাশের সুরতহাল করেন গুলশান থানার এসআই আব্দুল মান্নাফ। পরে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মনিরুলের শরীরে এলোপাতাড়ি গুলি করা হয়। মাথার বাঁ পাশে একাধিক গুলির চিহ্ন ছিল। বাঁ চোখ, বাম হাতের বাহু, ডান হাতের কনুই, গলার নিচ থেকে কোমর পর্যন্ত- বুকে, পেটে, পিঠে বিভিন্ন স্থানে গুলির ক্ষত রয়েছে।
গুলশান থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, টরাস এসএমটি সাবমেশিন গান দিয়ে কাউসার গুলি করেন। তার কাছে দুটি ম্যাগাজিন ছিল।
"প্রতিটা ম্যাগাজিনে ৩০টি করে ৬০ রাউন্ড গুলি থাকে। একটা ম্যাগাজিন শেষ হওয়ার পর আরেকটা ম্যাগাজিন অস্ত্রে লাগিয়ে ৮ রাউন্ড গুলি করে। পরের ওই ম্যাগাজিন থেকে ২২ রাউন্ড তাজা গুলি পাওয়া গেছে।”
এ ঘটনায় যে অস্ত্রটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি ব্রাজিলীয় কোম্পানি টরাস আর্মসের তৈরি। প্রায় ১২ বছর আগে টরাস এসএমটি পুলিশের হাতে আসে। সাধারণ দায়িত্বে এ ধরনের অস্ত্র পুলিশের হাতে দেখা না গেলেও কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তায় পুলিশকে আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রও দেওয়া হয়।
ওসি জানান, নিহত মনিরুলের কাছে চায়নিজ রাইফেল ছিল। সেটা ব্যবহার করা হয়নি। অর্থাৎ, পাল্টা গুলি করার কোনো চেষ্টা তিনি করেননি বা সুযোগই পাননি।
নিহত মনিরুলের চাচাতো ভাই মো. রিয়াদ জানান, মনিরুলের ১৭ মাস বয়সী একটি ছেলে আছে। তার স্ত্রী-সন্তান নেত্রকোণায় গ্রামের বাড়িতে থাকে। বাবা স্কুল শিক্ষক ছিলেন, মারা গেছেন অনেক আগে। গ্রামের বাড়িতে অসুস্থ মা আছেন।
মনিরুলের এক ভাইও পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি করছেন বলে জানান রিয়াদ।
আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আহত সাজ্জাদকে জিজ্ঞাসা করে ঘটনা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা হবে।”
ঘটনার পরপরই কনস্টেবল কাউসার আহমেদকে নিরস্ত্র করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাকে আইনের আওতায় নেওয়া হয়েছে।
“অপরাধ যেই করুক- এ বিষয়ে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কাউসারের কাছে গুলি করে হত্যার কারণ জানাতে চাওয়া হবে।"
এ ঘটনায় এরই মধ্যে কনস্টেবল কাউসারকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে গুলশান থানা পুলিশ। তাকে আদালতে পাঠিয়ে দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলে ওসি মাজহারুল ইসলাম জানিয়েছেন।