কাদের বলেন, “খালি ঢাকা শহর করলে তো হবে, পুরো বাংলাদেশ করতে হবে। নো হেলমেট, নো ফুয়েল। এইটা আজকে আমরা সিদ্ধান্তই নিলাম।”
Published : 15 May 2024, 04:10 PM
মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীদের হেলমেট পরা যে বাধ্যতামূলক, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা জারি করতে যাচ্ছে সরকার৷
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুর কাদের বলেছেন, ঢাকার সড়কে বাইকআরোহীদের হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক করা গেলেও নিয়মটি ঢাকার বাইরে এখনো উপেক্ষিতই রয়ে গেছে।
এখন থেকে সারাদেশে বাইক আরোহীদের জন্য এই নিয়ম কার্যকর করা হবে জানিয়ে তিনি বলেছেন, নিয়ম না মানলে কোনো জ্বালানি স্টেশন থেকে তাদের জ্বালানি দেওয়া হবে না।
বুধবার রাজধানীর বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন (বিআরটিএ) ভবনে কাদের বলে, "ঢাকায় অনেকটা মোটর সাইকেল নিয়ন্ত্রণ করেছি। এখানে হেলমেট ছাড়া কাউকে দেখা যায় না। সবাই হেলমেট পড়ে এবং দুইজন।
“যে পলিসিটা আমরা নিয়েছিলাম, এখন মফস্বলেও চালু করেন। এসপি সাহেবদের বলেন, কাউকে ফুয়েল দেওয়া হবে না যদি হেলমেট না থাকে। এটা আজকে আমরা সিদ্ধান্তই দিলাম।”
মন্ত্রী বলেন, “খালি ঢাকা শহর করলে তো হবে, পুরো বাংলাদেশ করতে হবে। নো হেলমেট, নো ফুয়েল। এইটা আজকে আমরা সিদ্ধান্তই নিলাম। একটা দুইটা কাজ করি। মানুষ দেখুক এবং বাস্তবে মানুষ সুফলটা পাক।"
সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম ওই সভার সরকারের মন্ত্রী বলেন, "প্রতি ঈদেই আগের চেয়ে পরে আরও বেশি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা হয়। এইগুলা তো মন্ত্রী নয়, মানুষ হিসেবে আমাদের কষ্ট দেয়। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছি এত বছর। এই বছরের চেয়ে যানজট, দুর্ঘটনা আগামী বছর আরও কম হবে এটাই তো টার্গেট। পরের বছর আরও কম হবে। আমাদের টিমওয়ার্কের সফলতাটা কোথায়? এখন ডিজিটালাইজ করেছেন।
“এগুলোর রেজাল্ট তো পাচ্ছি না। রেজাল্ট না পেলে এগুলো করে কি লাভ? কথা তো শুনতে হয় আমাকে। বিআরটিএ চেয়ারম্যানকে তো কেউ কিছু বলে না।"
সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে রাস্তাঘাট করার সুফল পাওয়া যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
“এত রাস্তা বাংলাদেশে, সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত। সমতল থেকে পাহাড়ে যেদিকে যান আজকে রাস্তা। সুন্দর সুন্দর রাস্তা। এত রাস্তা হবার পরও শৃঙ্খলা আসে না কেন? শৃঙ্খলা না থাকলে এসবের রেজাল্ট তো আমরা পাব না। আজকে ঢাকায় মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব টানেল কিন্তু সুফলটা তো আমাদের পেতে হবে। যানজট কমতে হবে, দুর্ঘটনা কমাতে হবে। “
দুর্ঘটনার জন্য সড়কে মোটরবাইক এবং ইজিবাইকের চলাচলকে দায়ী করেন তিনি।
কাদের বলেন, "দুর্ঘটনা নিয়ে নানা কথা আছে। আজকে সৌদি আরবের কথা ধরেন, যদি আবুধাবিতে দুর্ঘটনায় দেড়শ থেকে দুইশ লোক মারা যায়, সেসব নিয়ে কিন্তু উচ্চবাচ্য সে সব দেশে হয় না। আমাদের এখানে ক্যাজুয়ালটি বেশি হচ্ছে কারণ মোটরসাইকেল, ইজিবাইকের মত গাড়ি রাস্তায় চলাচল করছে। ইজিবাইকে ৮-১০ জন থাকে, বড় গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগলে ইজিবাইকের সবাই শেষ। তখন ক্যাজুয়ালটি বেড়ে যায়। মোটরসাইকেলও এখন আরেক উপদ্রব।"
সভায় বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান সভায় কার্যবিবরণী নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
তিনি বলেন, "সড়ক আইনে বলা আছে সভার কথা। কিন্তু এটা হচ্ছে ছয় বছর পর। এখানে আরও স্টেকহোল্ডার লাগবে। মশিউর রহমান রাঙ্গা, বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোশিয়েশন, ট্রাক মালিক সমিতির প্রতিনিধি থাকলে ভালো হবে।"
শাহজাহান খান এসময় বিআরটিএর চেয়ারম্যানকে লাইসেন্স কতগুলো পেন্ডিং আছে সেই বিষয়ে প্রশ্ন করেন।
বিআরটির চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, “৩ লাখ ৭৯ হাজার লাইসেন্স কার্ড দেওয়া হয়নি। “
তবে শাহাজাহান খান এই সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, "এই সংখ্যা ৭ থেকে ৮ লাখ।"
শাহাজাহান বলেন, "দুর্ঘটনা হলেই গতির দোষ দেওয়া হয়। তবে গবেষণা করে দেখা গেছে অন্য কারণ আছে। দুর্ঘটনা হলেই শুধু পুলিশ প্রতিবেদনে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।"
এসময় তিনি দুর্ঘটনায় নিহত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের উদাহরণ দেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরীও সভায় উপস্থিত ছিলেন।