জাহিদ মালেক বলেছেন, যে করেই হোক সরকার ডেঙ্গু পরিস্থিতি ‘ম্যানেজ’ করবে।
Published : 07 Aug 2023, 06:01 PM
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সারাদেশে বছরজুড়ে মশা নিধনের কার্যক্রম চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ রেখে তিনি বলেছেন, যেমন করেই হোক সরকার ডেঙ্গু পরিস্থিতি ‘ম্যানেজ’ করবে।
জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা দেওয়ার বিষয়ে সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
জাহিদ মালেক বলেন, “জুলাই মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হয়েছিল, প্রায় ৪৫ হাজার রোগী আমরা পেয়েছি। ২০২২ সালে ছিল মাত্র দেড় হাজার। এবার অগাস্ট মাসে ১৫ হাজার রোগী পেয়েছি। ইতোমধ্যে সব মিলিয়ে ৬৬ হাজার ৭০০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন, ৩১৩ জন মারা গেছে।”
ডেঙ্গু স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর চাপ ফেললেও এই রোগের বাহক এইডিস মশা নিধনের কাজটি স্বাস্থ্য বিভাগের নয়, এই দায়িত্ব মূলত স্থানীয় সরকার বিভাগের।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যেখানে এই মশার জন্য হয় সেখানে স্প্রে করে লার্ভা ধ্বংস করতে হবে।
“সিটি করপোরেশন, পৌরসভা আছে, তাদের আমরা পরামর্শ দিয়েছি আপনারা এই প্রোগ্রাম সারা বছর চালাবেন। যে সময় ডেঙ্গু রোগী দেখা দেবে, সে সময় শুধু না করে বছরব্যাপী পরিকল্পিত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।”
প্রতিটি জেলায় ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাই সারাদেশেই এইডিস মশা মারার কাজটি চালাতে হবে।
ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দিতে যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার, সরকার তা নিয়েছে বলে দাবি করেন জাহিদ মালেক।
তিনি বলেন, “রোগীর অবস্থা হঠাৎ করে খারাপ হয়ে যায়, মৃত্যুবরণ করেন। এজন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের দরকার আছে। চিকিৎসক ও নার্সদের সেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
“জনগণকে অবহিত করছি কীভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা যায়। এটা একটা মাল্টিসেক্টরাল অ্যাপ্রোচ, সকলেই মিলে কাজ করতে হবে। আমরা চিকিৎসা দেব, কলকারখানায় স্প্রে করার বিষয়টি শিল্প মন্ত্রণালয় বা সিটি করপোরেশন থেকে হতে পারে, আমরাও সেটি দেখব।”
ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ৩ হাজার শয্যা রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এখন ২১০০ ভর্তি আছে। ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ৫ হাজার শয্যা প্রস্তুত আছে। সারা দেশে ৯ হাজারের মতো ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে।
ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় স্যালাইন স্বল্পতার বিষয়ে তিনি বলেন, স্যালাইনের প্রয়োজন আগের তুলনায় ১০ গুণ হয়ে গেছে। হাসপাতালে ভর্তি থাকা একজন রোগীর ৪/৫ ব্যাগ করে স্যালাইন লাগে। ফলে প্রতিদিন ৪০ হাজার ব্যাগ স্যালাইন লাগছে।
“হাসপাতালগুলো স্যালাইনের ব্যাগ যোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে, কিন্তু যোগাড় হয়ে যাচ্ছে। যারা স্যালাইন তৈরি করে তাদের উৎপাদন বাড়াতে বলা হয়েছে। আশা করি স্যালাইনের জন্য চিকিৎসার ব্যাঘাত হবে না।”
ডেঙ্গু রোগী আরও বেড়ে গেলে সরকার তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাবে কি না- এই প্রশ্নে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের ম্যানেজ করতেই হবে। করোনায় এর থেকে বেশি আক্রান্ত হয়েছিল, তখনও ম্যানেজ করেছি। ডেঙ্গু যদি বাড়ে ম্যানেজ করতে পারব।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডেঙ্গুর টিকা অনুমোদন দিলে সেই টিকা দেশে আনার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই টিকা এখনও ডেভেলপড হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন দিলে এই টিকা আনার চেষ্টা করব।
সেপ্টেম্বর থেকে দেওয়া হবে এইচপিভি টিকা
নারীদের জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী মেয়েদের এইচপিভি টিকা দেওয়া শুরু হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি জানান, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২৭ হাজার নারী এই রোগে আক্রান্ত হয় এবং সাড়ে ৬ হাজার মারা যায়।
এই টিকা দিতে পারলে মৃত্যুর সংখ্যা, সংক্রমণ ও রোগীর সংখ্যা কমে যাবে।
জাহিদ মালেক বলেন, স্কুল থেকে এই টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা হবে। কারণ ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী মেয়েদের এই টিকা দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে এই বসয়ী সব মেয়েদের এই টিকা দেব। “সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করব। আমরা সাড়ে ২৩ লাখ টিকা বিনামুল্যে হাতে পেয়েছি। পর্যায়ক্রমে আমরা চট্টগ্রাম, বরিশালে এবং দ্বিতীয় দফায় রাজশাহী, খুলনা, রংপুর ও ময়মনসিংহে এই টিকা দেব।”
মন্ত্রী জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে নভেম্বরে আরও ২০ লাখ এবং ডিসেম্বরে ১২ লাখ এইচপিভি টিকা পাওয়া যাবে। আগামী বছরে ৪২ লাখ এবং ২০২৫ সালে ২৩ লাখ টিকা পাওয়া যাবে।
৫ বছরে পাওয়া যাবে ১০ কোটি কোভিড টিকা
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কোবিড টিকাদানের সাফল্যের প্রশংসা করেছে গ্যাভির কোভ্যাক্স এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
“তারা আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আগামী ৫ বছরে তারা আমাদের ১০ কোটি করোনার টিকা দেবে। ৫ কোটি মানুষকে আর সেই টিকা দিতে পারব। বিনামূল্যে আমরা এই টিকা পাব বলে আশা রাখি। যার মূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এই টিকা দিতে খরচ হবে ৬০০ কোটি টাকা।”
প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসদের ভাতা বাড়ল
বিএসএমএমইউয়ে বেসরকারি যেসব চিকিৎসক উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পড়ছেন, তাদের ভাতা বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এদের ভাতা ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।
আর ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মাসিক ভাতা ১৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান।
মন্ত্রী বলেন, “পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করছেন সাড়ে ৬ হাজার। আর সাড়ে চার হাজার ইন্টার্নি ডাক্তার রয়েছেন। এদের বাড়তি টাকা দিতে খরচ হবে ৬৪ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”