ঢাকার নিম্ন আদালতে মঙ্গলবার আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা স্লোগান দিয়েছেন আর হাই কোর্টের একটি বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক একজন আইনজীবীর সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
Published : 15 Oct 2024, 11:31 PM
আওয়ামীপন্থি বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে হাই কোর্ট ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
বুধবার এ কর্মসূচি পালনে বেলা ১১টায় রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার রাত ৯টা ২০ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে এ ঘোষণা দিয়ে রাজু ভাস্কর্য থেকে একসঙ্গে হাই কোর্ট অভিমুখে যাওয়ার কথা বলেছেন তিনি।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এ সমন্বয়ক ফেইসবুকে লেখেন, “আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে আগামীকাল (বুধবার) সকাল ১১টায় হাইকোর্ট ঘেরাওয়ের কর্মসূচি।”
তবে কী কারণে এ কর্মসূচি তা পোস্টে না লিখলেও কিছু পরে ওই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে তিনি লিখেছেন, “যে লীগের হাতে হাজার হাজার ছাত্র ও নাগরিকের রক্ত লেগে আছে, দুই মাস না যেতেই তাদের কীভাবে দুঃসাহস হয় হাই কোর্ট প্রাঙ্গণে খুনি হাসিনার নামে স্লোগান দেওয়ার?“
আরেক মন্তব্যে তিনি লেখেন, “আবারও কালো শকুনদের উৎখাত করতে রাজপথ প্রকম্পিত হবে৷”
তবে মঙ্গলবার হাই কোর্ট চত্বরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে স্লোগানের ঘটনা হাই কোর্টে হয়নি। এমন ঘটনা ঘটেছে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে।
এর আগে গত ১০ অগাস্ট সমন্বয়কদের ডাকে হাই কোর্টে জমায়েত হয়েছিল একদল শিক্ষার্থী। তাদের দাবির পর ওইদিন পদ ছাড়তে বাধ্য হন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। পরে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতিও পদত্যাগ করেন।
সেদিন তাদের দাবি মানা না হলে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ঘেরাওয়েরও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
মঙ্গলবার হাই কোর্ট চত্বরে স্লোগান না হলেও আদালতের একটি বেঞ্চে অন্য একটি ঘটনা ঘটেছে। ‘দুর্নীতির’ মাধ্যমে কার্যতালিকায় মামলা তোলার অভিযোগ ওঠার পর তা নিয়ে হইচইয়ের মধ্যে ওই বেঞ্চে এদিন সকালে বিচারকাজ হয়নি।
পরে একদল আইনজীবী প্রধান বিচারপতির কাছে অভিযোগ নিয়ে যান। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক একজন আইনজীবীর সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেন তারা। এরপর বিকালে বেঞ্চের বিচারক বদলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসে।
বিচারপতি আতাউর রহমান খান ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের যে অবকাশকালীন বেঞ্চ দায়িত্ব পালন করে আসছিল, সেখান থেকে বিচারপতি আতাউর রহমান খানকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বেঞ্চ সংশোধন করে বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সঙ্গে বিচারপতি কাজী জিনাত হককে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
অপরদিকে আওয়ামী লীগ এবং দলটির প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে স্লোগান দেওয়ার ঘটনা ঘটে ঢাকার নিম্ন আদালত প্রাঙ্গণে।
এদিন বেলা ৩টার দিকে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আওয়ামী লীগের গ্রেপ্তার হওয়া দুই নেতা আব্দুর রাজ্জাক ও ফারুক খানকে আনা হলে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা বিক্ষোভ করেন। এসময় তারা জয় বাংলাসহ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
মঙ্গলবার দুপুরে সিএমএম আদালতে পৃথক দুটি হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক ও ফারুক খানের রিমান্ড আবদনের শুনানি হয়। শুনানি শেষে ফারুক খানকে এজলাস থেকে আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার সময় আদালতের সামনে ২০-২৫ জন কালো গাউন পরা আইনজীবী ও সাধারণ পোশাকের মানুষ সেখানে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে কোতোয়ালি থানা পুলিশ এলে তারা সরে যান। একজনকে আটকও করে পুলিশ।
এমন দুই ঘটনার পর রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাতের এ ফেইসবুক পোস্ট সামনে এল।
এ বিষয়ে জানতে তার মোবাইলে ফোন করেও সাড়া মেলেনি।
ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম আরেক সমন্বয়ক তাহমীদ আল মুদাসসীর চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে হাই কোর্ট ঘেরাওয়ের এ কর্মসূচি।" তবে এর বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।