“যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের পরিবর্তে আমাদের নদীগুলি এখন বর্জ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে,” লিখেছেন তিনি।
Published : 16 Mar 2025, 08:12 PM
সেতু ও সড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ বর্তমান হারে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ফসল আবাদ, শিল্প উৎপাদন জায়গা সংকটের পাশাপাশি মানুষের কবর দেওয়ার জায়গাও পাওয়া যাবে না বলে হতাশা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
বেশি বেশি সেতু তৈরি হওয়াতে দেশে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের পরিবর্তে নদীগুলি এখন বর্জ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং নৌ পরিবহন উপদেষ্টা।
সম্প্রতি পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে রোববার নিজের ফেইসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে এমন হতাশা প্রকাশ করেন ফাওজুল কবির খান।
তিনি বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের ক্ষেত্রে তার পছন্দের তালিকায় নদীপথই প্রথম, এরপর রেলপথ, বিমান ও সর্বশেষ সড়কপথ। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখন আর ভালো লঞ্চ না থাকায় নদীপথ ব্যবহার করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
নদীপথের গুরুত্ব হারিয়ে যাচ্ছে দাবি করে উপদেষ্টা লিখেছেন, “যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের পরিবর্তে আমাদের নদীগুলি এখন বর্জ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে! ঢাকার সদরঘাটে তাই এখন আমাদের নাকে রুমাল চাপা দিয়ে হাঁটতে হয়। এটাই কি আমাদের নিয়তি! আমাদের নদ-নদীগুলি কি কেবল বর্জ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হবে?”
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনে যাওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “গেল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পায়রায় দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেখতে গিয়েছিলাম। দেশের অভ্যন্তরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে আমার পছন্দ ক্রমানুসারে নিম্নরূপ- নদীপথে, রেলপথে, বিমানে এবং সড়কপথে। তাই ঠিক করলাম লঞ্চে পটুয়াখালী হয়ে বাকীটা সড়ক পথে যাব।
“আমাকে জানান হল যে, পটুয়াখালী যাওয়ার ভালো লঞ্চ নাই, সড়কপথে যাওয়া উত্তম হবে। আগে ভালো লঞ্চ ছিল, পদ্মা সেতু হওয়ার পর যাত্রীর অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। আমিও নাছোড়বান্দা, বললাম লঞ্চে বরিশাল হয়ে যাব। যদিও এর ফলে সড়কপথে ১ থেকে ১.৫ ঘণ্টা যাতায়ত বাড়বে।”
ফাওজুল কবির লিখেছেন, “সেভাবেই গেলাম ও ফিরে আসলাম। এখানেও পদ্মা সেতুর কারণে যাত্রীসংকট। আমরা যে লঞ্চটিতে ১৫ মার্চ ফিরলাম, তার পরের শিডিউল ১৯ তারিখে। এর মধ্যে অন্য লঞ্চ চলবে।
“বরিশাল থেকে পায়রা যাওয়া আসার পথে কয়েকটি নদ নদী পার হলাম। কি সুন্দর এসব নদী, স্থির জল, হালকা হাওয়ায় ছোট ছোট ঢেউ। কিন্তু এসব নদীতে একটিও নৌকা কিংবা জলযান নেই।
“আমাদের সড়ক ও সেতুর বুভুক্ষা কবে শেষ হবে? বর্তমান হারে সেতু ও সড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ অব্যাহত থাকলে, আমাদের সড়ক ও সেতুতেই ফসল আবাদ, শিল্প উৎপাদন করতে হবে। এমনকি ভবিষ্যতে কবরের জন্য জমি পাওয়া দুরূহ হতে পারে।
“অথচ নদ নদীগুলোই ছিল আমাদের প্রকৃতি প্রদত্ত মহাসড়ক। একসময়, নদীপথে ঢাকার বর্তমান হোটেল সোনারগাঁও থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত যাওয়া যেত। ভাবা যায়!”