“একজন ডাক্তার তাকে সার্টিফিকেট দিলে তাকে ডিউটিতে নেওয়া হয়। এখন এ বিষয়গুলোতে আমাদের আরো সতর্কতার প্রয়োজন কিনা, সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করছি।”
Published : 11 Jun 2024, 02:07 PM
ঢাকার কূটনৈতিক পাড়ায় দায়িত্ব পালনকালে সহকর্মীকে গুলি করে হত্যা করা কনস্টেবল কাউসার যে মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন এবং সেজন্য চিকিৎসা নিয়েছেন, সেটি পুলিশ বিভাগ জানত।
চিকিৎসার পর একজন চিকিৎসক কাউসারের রোগ মুক্তির সনদ দিলে তাকে দায়িত্বে ফেরানো হয় বলে আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের ভাষ্য।
মঙ্গলবার রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে হাইওয়ে পুলিশের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন পুলিশ প্রধান।
তিনি বলেন, “তার অসুস্থতার বিষয়টি আমরা জানতাম। একজন ডাক্তার তাকে সার্টিফিকেট দিলে তাকে ডিউটিতে নেওয়া হয়। এখন এ বিষয়গুলোতে আমাদের আরো সতর্কতার প্রয়োজন কিনা, সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করছি।”
শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার ফিলিস্তিন দূতাবাসের উত্তর পাশের গার্ডরুমের সামনে দায়িত্ব পালনের সময় কাউসার এসএমজি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে কনস্টেবল মনিরুল ইসলামকে হত্যা করেন। তার গুলিতে জাপান দূতাবাসের গাড়ি চালক সাজ্জাদ হোসেন শাহরুখও আহত হন।
ওই ঘটনায় নিহত মনিরুলের ভাই কনস্টেবল মাহাবুবুল হক গুলশান থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কাউসারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
ঠিক কী কারণে কাউসার তার সহকর্মীর ওপর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলি চালন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিশের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, সেদিন রাত পৌনে ১২ টার দিকে কাউসার আলীর সঙ্গে ‘ডিউটি করা নিয়ে’ মনিরুলের বাগবিতণ্ডা হয়েছিল। এক পর্যায়ে কাউসার উত্তেজিত হয়ে অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকেন।
পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, মনিরুলের শরীরে এলোপাতাড়ি গুলি করা হয়। মাথার বাঁ পাশে একাধিক গুলির চিহ্ন ছিল। বাঁ চোখ, বাম হাতের বাহু, ডান হাতের কনুই, গলার নিচ থেকে কোমর পর্যন্ত- বুকে, পেটে, পিঠে বিভিন্ন স্থানে গুলির ক্ষত রয়েছে।
গুলশান থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, টরাস এসএমটি সাবমেশিন গান দিয়ে কাউসার গুলি করেন। তার কাছে দুটি ম্যাগাজিন ছিল।
"প্রতিটা ম্যাগাজিনে ৩০টি করে ৬০ রাউন্ড গুলি থাকে। একটা ম্যাগাজিন শেষ হওয়ার পর আরেকটা ম্যাগাজিন অস্ত্রে লাগিয়ে ৮ রাউন্ড গুলি করে। পরের ওই ম্যাগাজিন থেকে ২২ রাউন্ড তাজা গুলি পাওয়া গেছে।”
কাউসার আলীর বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা সদর ইউনিয়নের দৌলতখালী দাড়ের পাড়া গ্রামে। বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়াত আলীর মাষ্টারের ছোট ছেলে তিনি। তার স্ত্রী ও দুই ছেলে গ্রামের বাড়িতেই থাকতেন।
পরিবারের সদস্যরা বলছেন, কাউসার ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। ২০১০ সালের দিকে তার মধ্যে মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দেয়। তিনি কারো সাথে কথা বলতেন না এবং অল্পেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতেন। চাকুরিরত অবস্থায় এ ধরনের উপসর্গের কারণে তাকে কয়েক দফা চিকিৎসাও করানো হয়।
তবে কাউসার মাদকাসক্ত ‘ছিলেন না’ এবং পারিবারিকভাবে তেমন কোনো ‘সমস্যাও ছিল না’ বলে তার স্বজনদের ভাষ্য।
কাওসারের স্ত্রী সাথী বলেন, “গত ৪-৫ দিন ধরে আমাদের সাথে কম কথা বলছিল। মাঝে মধ্যে যখনই মানসিক রোগে আক্রান্ত হত, এরকম করত। কয়েকবার পাবনায় এক হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসাও করানো হয়েছে। চিকিৎসার কাগজপত্র আমার স্বামীর কাছে আছে।”
কাউসার মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে থাকলে তিনি কীভাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন জানতে চাইলে গুলশান থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, ওই কনস্টেবলের মানসিকভাবে অসুস্থতার কোনো তথ্য তাদের কাছে ‘নেই’।
তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে এ বিষয়ে অবগত, আইজিপি মঙ্গলবার তা স্বীকার করে নিলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “পুলিশ সদস্যদের ট্রেনিংয়ের সময় তাদের পেশাগত চাপের বিষয়গুলো জানানো হয়। তারপর একজন পুলিশ সদস্যকে নতুন জায়গায় বদলির পর সেখানে কি ধরনের চাপ আসতে পারে সে বিষয়েও ব্রিফ করা হয়।”