ঢাকা দক্ষিণের সাবেক এই মেয়র এবারের সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৬ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন।
Published : 08 Dec 2023, 09:31 AM
আট বছরের ব্যবধানে ঢাকা-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের আয় বেড়েছে সাড়ে ২৭ গুণের বেশি। এ সময় তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মূল্যও বেড়েছে, যা এখন ১৫২ কোটি টাকার বেশি। তার স্ত্রীর সম্পদ বেড়ে হয়েছে ৮৬ কোটি টাকার বেশি।
পেশায় ব্যবসায়ী সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের এখন বার্ষিক আয় ১১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা; আট বছর আগে ২০১৫ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় জমা দেওয়া হলফনামায় তিনি যা ৪১ লাখ ৭৪ হাজার দেখিয়েছিলেন।
২০২৩ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ও ২০১৫ সালে মেয়র নির্বাচনের সময় তার জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণে এসব তথ্য জানা গেছে।
এবারের হলফনামায় তিনি ব্যবসা হিসেবে আমদানি, ট্রেডিং ও হোটেল ব্যবসা থাকার কথা জানিয়েছেন। তার আয়ের বড় অংশ হিসেবে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ঢাকার বনানী, গুলশান এবং নাজিরাবাজারের বাড়ি বলে জানিয়েছেন তিনি।
গুলশান ও বনানীতে এখন তার দুটি আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে। যে দুটির মূল্য ২৩ কোটি ও সাড়ে ৫১ কোটি টাকা। আট বছর আগে তার এমন ভবন ছিল একটি, যেটির মূল্য ২৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আর পৈত্রিক সূত্রে পুরান ঢাকার নাজিরা বাজার লেইনে তার একটি বাড়ি রয়েছে, যেটির মূল্যমান নির্ধারণ করা হয়নি।
অবিভক্ত ঢাকা সিটির মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন ২০১৫ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। পরের দফায় মেয়র নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাননি। এবার সাবেক মেয়র সংসদে ঢাকা-৬ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেননি।
সাঈদ খোকন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার আয়-ব্যয়ের সব হিসাব সরকারের ঘরে দেওয়া আছে। আমি হলফনামা দিয়ে দিয়েছি, এটা জনগণের কাছে উন্মুক্ত। পাবলিকলি এটা ক্লিয়ার।”
এবারের সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী তার বার্ষিক আয় ১১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। সবচেয়ে বেশি ৬ কোটি ৪০ লাখ ৩৮ হাজার ৫৬ টাকা আয় করেছেন বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান ও অন্যান্য ভাড়া থেকে। এছাড়া ব্যবসায়, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র থেকে বাকি অর্থ আয় এসেছে তার।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় দেওয়া হলফনামায় সাঈদ খোকন ৪১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন। সে হিসেবে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে সাড়ে ২৭ গুণেরও বেশি। ওই সময় আয় হিসেবে বাড়ি, দোকান ভাড়া থেকে ৩২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ৮ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছিলেন।
স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি
স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে এখন সাঈদ খোকনের সম্পদের মোট মূল্য ১৫২ কোটি টাকার বেশি, যা ২০১৫ সালে ছিল ৪৮ কোটি টাকা। তার সম্পদ বেড়েছে তিনগুণের বেশি।
সাঈদ খোকনের মোট অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে ৭৭ কোটি ৯২ লাখ ৮৭ হাজার টাকার। এরমধ্যে নগদ আড়াই কোটি এবং ব্যাংকে জমা আছে ৪ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার টাকা। বন্ড, ঋণপত্র এবং বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার আছে ৬৫ কোটি ১৬ লাখ টাকার। তার ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা মূল্যের গাড়ি আছে। ২০১৫ সালে তার গাড়ির মূল্যমান ছিল ৩৮ লাখ টাকা।
২০১৫ সালের মার্চে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের হলফনামায় সাঈদ খোকন ২১ কোটি ১ লাখ ৮৫ হাজার ২১৬ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পত্তি দেখিয়েছিলেন। সে সময় ১ কোটি ১০ লাখ নগদ টাকা, ৪৩ হাজার টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ছিল। ওই সময় ১৯ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার ৬৭৫ টাকার শেয়ার-ঋণপত্র, ৩৮ লাখ টাকার গাড়ি ছিল তার।
সিটি নির্বাচনের সময় তার স্ত্রী ফারহানা সাঈদের অস্থাবর সম্পদ ছিল ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা; বর্তমানে এমন সম্পদের মূল্য ৮৫ কোটি ৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা নগদ এবং বন্ড, ঋণপত্র এবং বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে ৮০ কোটি টাকা, ৩২ লাখ টাকার গাড়ি এবং ব্যবসায়ী মূলধন হিসেবে রয়েছে ২৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ।
হলফনামা অনুযায়ী, সাঈদ খোকনের স্থাবর সম্পদের মূল্য ৭৪ কোটি ৭০ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। এরমধ্যে দালান/আবাসিক ভবন রয়েছে দুটি। গুলশানে ২৩ কোটি ১১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা এবং বনানীতে ৫১ কোটি ৫৭ লাখ ২১ হাজার টাকা মূল্যের দুটি ভবন রয়েছে তার। এছাড়া পৈত্রিক সূত্রে নাজিরাবাজারে একটি বাড়ি পেয়েছেন।
২০১৫ সালে সিটি নির্বাচনের আগে তার ভবনের মূল্য ছিল ২৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। ওই সময় ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমি ছিল।
সিটি নির্বাচনের আগের হলফনামায় ফারহানা সাঈদের স্থাবর সম্পত্তির মূল্য দেখানো হয়েছে ২২ লাখ টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
সাঈদ খোকনের দায়
অগ্রিম ভাড়া হিসেবে নেওয়া ৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকার দায় রয়েছে সাবেক এ মেয়রের। ২০১৫ নির্বাচনের আগে তার দায় ছিল ১৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা।