প্রথমবারের মতো ‘ক্লিনিক্যাল ডেড বা ব্রেইন ডেড’ মানুষের কিডনি প্রতিস্থাপনের পর সারাহর চোখের কর্নিয়াও প্রতিস্থাপন করেছেন চিকিৎসকরা।
Published : 21 Jan 2023, 07:37 PM
মৃত্যুর আগে নিজের কিডনি আর চোখ দান করে যাওয়া সারাহ ইসলামের চোখে এখন পৃথিবীর আলো দেখতে পাচ্ছেন পাবনার এক নারী এবং নারায়ণগঞ্জের এক পুরুষ।
অস্ত্রোপচারের একদিন পর শনিবার হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে তারা বাড়ি ফিরেছেন; আগের চেয়ে ভালোভাবে চোখে দেখতে পাচ্ছেন। তবে চিকিৎসকদের নিয়মিত ফলো আপে থাকতে হবে দুজনকেই।
মাত্র ২০ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান সারাহ ইসলাম ঐশ্বর্য। গত বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে তার মৃত্যু হয়।
মরণোত্তর নিজের দুটি কিডনি এবং চোখ দান করে গিয়েছিলেন এই তরুণী। ফলে দেশে প্রথমবারের মতো ‘ক্লিনিক্যাল ডেড বা ব্রেইন ডেড’ কোনো মানুষের কিডনি সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয় দুই নারীর শরীরে।
কিডনি প্রতিস্থাপনের পর সারাহর চোখের কর্নিয়াও বৃহস্পতিবার প্রতিস্থাপন করেছেন চিকিৎসকরা। একটি বসানো হয়েছে পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার নারীর ডান চোখে; অন্যটি বসেছে নারায়ণঞ্জের বন্দর এলাকার যুবকের চোখে।
ওই নারীর অস্ত্রোপচার হয়েছে বিএসএমএমইউতে এবং যুবকের অস্ত্রোপচার হয়েছে রাজধানীর সন্ধানী চক্ষু হাসপাতালে।
পাবনার ওই নারী একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ২০১৬ সালে স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থী কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত হলে তিনিও সংক্রমিত হন।
শনিবার বিএসএমএমইউতে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার ডান চোখের কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, কিছুই দেখতে পেতেন না। এরপর থেকে বিএসএমএমইউর চক্ষু বিভাগে নিয়মিত চিকিৎসা চলছিল তার। অপেক্ষায় ছিলেন কর্নিয়া পাওয়ার, তবে পাওয়া যাচ্ছিল না।
তিনি বলেন, ভাইয়ের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সম্প্রতি ঢাকায় এসেছিলেন। এরমধ্যেই চিকিৎসক ফোন করে কর্নিয়া পাওয়ার কথা জানান।
“এখানে আসার পর অস্ত্রোপচার হয়েছে। এখন ডান চোখে ঝাপসা-ঝাপসা দেখতে পাচ্ছি। বাড়ির সব কাজ আমাকে করতে হত, কিন্তু ডান চোখে কিছুই দেখতে পারতাম না, সমস্যা হত না। এখন দুচোখেই দেখতে পারব।”
তার চোখের অস্ত্রোপচার করেছেন বিএসএমএমইউর চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শিশ রহমান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অপারেশনের দুদিন পর যতটা ভালো থাকার কথা, রোগী ততটাই ভালো আছেন। ব্যান্ডেজ খুলে দেওয়া হয়েছে শুক্রবারই।”
এদিকে গত সাত বছর ধরে দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে আসা নারায়ণগঞ্জের যুবকের সবশেষ চিকিৎসা চলছিল বিএসএমএমইউতে।
তিনি শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি বিএসএমএমইউ এর চক্ষু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাজশ্রী দাসের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বুধবার তাদের ফোন করেন ওই চিকিৎসক। এরপর তারা ঢাকায় আসেন এবং অস্ত্রোপচার করেন।
“বিএসএমএমইউতে অপারেশন করাতে কিছু টাকার প্রয়োজন হয়। আমাদের সামর্থ্য না থাকার কথাটি ম্যাডামকে জানিয়েছিলাম। তিনি আমাদের মোবাইল নম্বর রেখেছিলেন। ম্যাডাম ফোন দিয়ে বলেছেন, সবকিছু রেডি আছে। শুধু সাইন করে দিয়েছি। আসার আধা ঘণ্টার মধ্যে অপারেশন হয়েছে।”
এই যুবক জানান, শুক্রবার ডা. রাজশ্রী দাস এসে দেখে গেছেন। শনিবারও দুপুরে দেখার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়েছেন।
“আমরা বাসায় চলে যাব আজ (শনিবার)। সাতদিন পর আবার আমাদের আসতে হবে ফলোআপের জন্য। আমার যে অপারেশন হবে তা ধারণার বাইরে ছিল। কী যে উপকার হয়েছে তা বোঝাতে পারব না।”