রোববার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির ‘ন্যায্য মূল্য’ বেঁধে দেয়।
Published : 16 Sep 2024, 09:37 PM
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে ডিমের যে ‘ন্যায্য মূল্য’ বেঁধে দেওয়া হয়েছে, সেই দরে পণ্য দুটি পাওয়া যাচ্ছে না বাজারে।
বাংলাদেশ সরকার আলু আমদানিতে শুল্ক কমানোর পর দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে পাইকারি বাজারগুলোতে। তবে সব এলাকায় এর প্রভাব এখনও পড়েনি।
আবার তেমনি আমদানি করে মুনাফা না হওয়ায় আর পণ্য না আনার কথাও বলেছেন একজন ব্যবসায়ী।
পেঁয়াজের ক্ষেত্রে আরও সুখবরের অপেক্ষায় ক্রেতারা। এর কারণ, বাংলাদেশ যেমন আমদানি শুল্ক কমিয়েছে, তেমনি রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে ভারত যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিল, সেগুলো অনেকটাই শিথিল করেছে।
নতুন শুল্কায়নে ভারতীয় পেয়াঁজ এখনও বাজারে না এলেও দেশি পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমার তথ্য মিলেছে ঢাকার কারওয়ানবাজারে গিয়ে। তবে পাড়া মহল্লায় প্রভাব পড়েনি এখনও।
রোববার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির ‘ন্যায্য মূল্য’ বেঁধে দিয়ে তা কার্যকর করার নির্দেশনা দেয়।
কিন্তু সোমবার কারওয়ানবাজারে গিয়ে এই দরে ডিম কিনতে পারেনি ক্রেতারা। ব্রয়লার মুরগির দাম আগে থেকেই ছিল ১৮০ টাকা, সোনালি মুরগির যে ‘ন্যায্য মূল্য’ ঠিক করা হয়েছে, বাজার মূল্য তার চেয়ে কম আগে থেকেই।
কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে প্রতি কেজি আলুর দাম ২ টাকা কমে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে, খুচরায় নেমেছে ৫০ টাকায়। তবে তেজকুনিপাড়া বাজারে আগের মতই ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে রান্নার উপকরণটি।
কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে পেঁয়াজ বিক্রি চলছে ৯৬ থেকে ১০৫ টাকা দরে, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কম। তেজকুনিপাড়ায় দাম আগের মতই ১২০ টাকা।
ভারত সরকার চার মাস আগে পেঁয়াজ রপ্তানিতে যে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল, সেটি কমিয়ে ২০ শতাংশ করেছে শনিবার থেকে। সেই সঙ্গে পণ্যটির ন্যূনতম রপ্তানি মূল্যও প্রত্যাহার করা হয়েছে।
তারও আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার আলু আমদানিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার পাশাপাশি ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়, পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক তুলে নেওয়া হয়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতে পণ্য দুটির আমানিতে খরচ আগের চেয়ে কমার কথা, কিন্তু এখনও নতুন হিসাবে পেঁয়াজের আমদানি সেভাবে হয়নি বা বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে।
ডিম-মুরগির বাজারে কী চিত্র
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিম ১১ টাকা ৮৭ পয়সা, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা এবং ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করেছে।
তবে তেঁজগাও ডিম সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হানিফ জানিয়েছেন, তারা পাইকারিতেই প্রতি ১০০টি ডিম বিক্রি করেছেন ১ হাজার ২৪০ টাকায়, অর্থাৎ হালিতে প্রায় ৫০ টাকা, কিন্তু খুচরাতেই থাকার কথা সর্বোচ্চ ৪৮ টাকা।
কারওয়ান বাজারও তেজকুনিপাড়ায় ৫৫ টাকা হালিতে ডিম বিক্রি হতে দেখা গেছে। পাড়া মহল্লায় ডিমের ডজন আগের দিনের মতই ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, তবে এর ‘ন্যায্য মূল্য’ নির্ধারণ করা হয়েছে ডজনপ্রতি ১৪৩ টাকা।
কারওয়ানবাজারে বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৮০ টাকায়, সোনালি মুরগি ২৬০ টাকায় ।
কারওয়ান বাজারের ফারুক চিকেন হাউজের বিক্রেতা মো. দুলাল বলেন, “সরকার যে দাম ঠিক করছে, ব্রয়লার তো এই কয়েকদিন তো এর চেয়ে কমে বেচতাছি। আর সোনালি এখনও সরকারের দামের চেয়ে কম। তবে সামনে বাজার বাড়লে তো আমাদের বেশিতে বিক্রি করতে হবে।”
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দাম নির্ধারণ করলেই তো হবে না। দেশে ফিডের (মুরগির খাবার) আর বাচ্চার দাম বেশি হওয়ায় ডিমের উৎপাদন খরচ বেশি। এই উৎপাদন খরচ না কমালে কোনোভাবেই ডিমের দাম কমানো সম্ভব না। আর মুরগিতে প্রত্যেক খামারি এখন লস দিয়ে বিক্রি করছে।”
আলুতে প্রভাব পাইকারিতে, খুচরায় নয়
কারওয়ান বাজারে আলুর পাইকারি দোকান বিক্রমপুর বাণিজ্যালয়ের বিক্রেতা মো. হালিম বলেন, “এক সপ্তাহ আগে আলুর দাম ছিল ৪৯-৫০ টাকা। শুক্রবারে ছিল ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা। আর গতকাল থেকে কমে ৪৫-৪৬ টাকা হইছে। সামনে দাম আরও কমবে। এখন বৃষ্টির কারণে সরবরাহে একটু সমস্যা হচ্ছে আরকি।”
বায়তুল আমিন বাণিজ্যালয়ে ভারতীয় আলুর দেখা মিলেছে। পাইকারিতে বিক্রি চলছে ৩৮ থেকে ৩৯ টাকায়। বিক্রেতা মো. হাবিব মন্ডল বলেন, “আমরা ৩৫-৩৭ টাকায় পাইছি। সামনে আরও আলু আসবে। তখন বাজার ভরপুর হয়ে যাবে। আর বাজারে খুচরায় দাম ৪০ এর নিচে নেমে আসবে।”
তবে একজন আমদানিকারকের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়।
বায়তুল আমিন বাণিজ্যালয়ে ভারতের আলু সরবরাহ করেছেন নাসিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “ভারত থেকে সবকিছু মিলিয়ে আলু আমাদের কেনা পড়ছে ৩৫ টাকার মত। শুল্ক কমার খবরে দেশি আলুর দামও কমে গেছে। তাই ট্রান্সপোর্ট খরচ, লেভার খরচসহ সবমিলিয়ে ভারতের আলুতে আমাদের ৫ টাকার মতো লস হচ্ছে। তাই সামনে আমদানি না করার সম্ভাবনা আছে।”
বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি সাইফুর রহমান। স্ত্রীসহ কলাবাগানের স্টাফ কোয়ার্টারে থাকেন। তিনি প্রয়োজনের তুলনায় আলু নিলেন কম। বললেন, সামনে দর আরও কমলে তখন বেশি কিনবেন।
‘চাকরি করে বেতন যা আসে তাতে সব ঠিকঠাক থাকত যদি বাজার খরচটা কম থাকত। বাজারের অতিরিক্ত খরচের কারণে প্রতি মাসেই টানাটানি লেগে যায়।”
পেঁয়াজের দর আসবে কবে
শুল্ক প্রত্যাহারের পর কারওয়ান বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ আসেনি বলে জানান কারওয়ানবাজারের মেসার্স মিনহাজ বাণিজ্যালয়ের বিক্রেতা মো. রাজিব।
তিনি বলেন, “শুক্রবার থেকে আজ পর্যন্ত বর্ডার বন্ধ। কাল বর্ডার খুলবে, নতুন মাল আসলে পেঁয়াজের দাম কমবে।”
তবে সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যটির দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকার মত কমেছে বলে তথ্য দিয়েছেন তিনি।
গত শুক্রবার পাইকারিতে ফরিদপুরের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯৬ টাকায়, আর পাবনার পেঁয়াজ ১০৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সোমবারে বাজারে একই দর দেখা গেছে।
বাজারে খুচরায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০৬ থেকে ১১০ টাকা দরে।
তবে তেজকুনিপাড়ায় মায়ের দোয়া স্টোরে আলু ৬০ টাকা ও পেঁয়াজ ১২০ টাকা দরে বিক্রি করছেন মো. শাহ আলম। তিনি কারওয়ান বাজার থেকে ৫৩ টাকা কেজি প্রতি আলু আর পেঁয়াজ ১০৭ টাকা করে কেনার দাবি করেছেন।