“তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসার জন্য যত টাকাই খরচ হোক, সে বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের কারোর কোনো আপত্তি থাকবে না,” বলেন তিনি।
Published : 12 Dec 2024, 11:13 PM
গণআন্দোলনে আহতরা মানসিক স্বাস্থ্যে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
বিষয়টি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসার জন্য যত টাকাই খরচ হোক, সে বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের কারোর কোনো আপত্তি থাকবে না। এখানে প্রশ্নহীনভাবে সবাই একমত।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বৃহস্পতিবার আঁচল ফাউন্ডেশন ও গণমুক্তি মঞ্চের ‘জুলাই বিপ্লব পরবর্তী মানসিক স্বাস্থ্যের সংকট ও পরবর্তী করণীয়’ বিষয়ক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
ফরিদা আখতার বলেন, “সকালে (উপদেষ্টা পরিষদের) বৈঠকে আলোচনা হয়েছে আহতদের চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আমরা কী করব, তা ইমিডিয়েটলি ঠিক করতে হবে। শহীদ পরিবারের পাশে থাকা…তাদের জন্য যদি কিছু করতে না পারি, এই সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে আমার থাকাটা আমি অপরাধ হিসেবে নেব। আমরা কাঠগড়ায় দাঁড়াব, ওরা আমাদেরকে বিচার করবে, যদি আমরা কিছু করতে না পারি “
আন্দোলনে যারা ক্ষতির মুখে পরেছে তাদের অন্যান্য ক্ষতির চেয়ে মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি বেশি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
“মায়েরা হাসপাতালে তাদের বাচ্চাদের সঙ্গে আছেন, তারাও কিন্তু ট্রমাটাইজড। আন্দোলনে আহত হয়ে অনেক মেয়েরা চিকিৎসা নিতে হাসপাতালেও যায়নি, কারণ সমাজ তাদের অপরাধী বানাচ্ছে। বলা হচ্ছে, তাদের বিয়ে হবে না। এসব কারণে ওই মেয়েটির কষ্ট হচ্ছে না?”
জুলাই-অগাস্টের গণআন্দোলনে যোগ দিয়ে আহত সালমান হোসেন সেমিনারে বলেন, চিকিৎসার পর তার একটি পায়ের উচ্চতা তিন ইঞ্চি কমে যায়। এর ফলে তাকে কিছুটা খুঁড়িয়ে হাঁটতে হচ্ছে, কিন্তু মানুষ তা দেখে ‘ল্যাংড়া’ বলে মন্তব্য করছে।
“সবাই দেশ গঠনের দিকে আগাচ্ছে, কিন্তু আন্দোলনে যারা আহত হয়েছে তারা কীভাবে সাফার করতেছে, সেটা কেউ দেখছে না। আগের মত পা না থাকায় এবং মানুষের কথা শুনে আমাদের কষ্ট হচ্ছে। যেই স্বপ্ন নিয়ে আন্দোলন করা হয়েছে তা বাস্তবায়িত নাহলে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হব।”
এরপর ফরিদা আখতার বলেন, “কেউ যদি এগুলো বলে তাহলে তারা মানুষের পর্যায়ে পড়ে না। তোমরা বয়সে ছোট, কিন্তু আমরা তোমাদের শ্রদ্ধা করি। তোমাদের আমরা অনুকরণ করব।”
সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, “আন্দোলনে যারা আহত হয়েছে, তাদের বাইরেও বড় একটা অংশ টেলিভিশনে ঘটনাগুলো দেখে মানসিকভাবে আহত হয়েছেন।
“মানসিক ট্রমা বেড়ে যাওয়ার কারণে একদিকে যেমন দাবি-দাওয়া, অসহিষ্ণুতাও বাড়ছে। কেউ কারও পক্ষে শুনে কথা বলা…সেখানে তীব্র মাত্রায় রিয়্যাক্ট করছি, ভায়োলেন্স করছি, কিছু একটা হচ্ছে না শুনেই অ্যাকশনে যাচ্ছে।”
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুল হাসান বলেন, “যারা সাইকোট্রমায় ভুগছেন, তাদের কাছে পৃথিবী সম্পর্কে ধারণা পুরোপুরি বদলে যেতে পারে, মানসিক বিকাশ কমতে পারে, সমাজ-পরিবার এবং সরকারের প্রতি অবিশ্বাস জন্মায়।
“সেজন্য তাদের প্রত্যেককে কাউন্সেলিং করাতে বলা হয়, নাহলে সারাজীবন ভুগতে পারে। সমাজ ও পরিবারে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, বলতে হবে- তুমি নিরাপদ।”
সেমিনারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমানও বক্তব্য দেন।