মেয়াদ শেষের আগেই তারেক রহমানের পাসপোর্ট লন্ডন থেকে কীভাবে নবায়ন করা হয়েছিল এবং তার নামে কীভাবে চারটি পাসপোর্ট হল, তার ব্যাখ্যা চেয়েছে হাই কোর্ট।
Published : 23 Jun 2015, 10:00 PM
এই বছরের শুরুতে এক আইনজীবীর করা রিট আবেদনে হাই কোর্ট দুটি প্রতিবেদন দিতে আদেশ দিয়েছিল পররাষ্ট্র সচিব ও আইজিপিকে।
ওই দুটি প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর মঙ্গলবার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ নতুন করে দুই বিষয়ের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে।
মেয়াদ শেষের আগেই তারেক রহমানের পাসপোর্ট লন্ডন থেকে কীভাবে নবায়ন করা হয়েছিল এবং তা আইন অনুযায়ী হয়েছিল কি না, তা জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিবকে ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
আর কয়েক বছরের ব্যবধানে এক ব্যক্তির নামে একাধিক পাসপোর্ট কীভাবে ইস্যু করা হয়েছে, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে পুলিশের মহাপরিদর্শকের মাধ্যমে আদালতে এই বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে হবে।
খালেদা জিয়ার ছেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব তারেক কয়েক ডজন মামলা মাথায় নিয়ে সাত বছর ধরে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন।
লন্ডন যাওয়ার পর তারেক ২০০৮ সালের সর্বশেষ পাসপোর্ট নবায়ন করেছিলেন বলে অনুসন্ধানে জানা যায়। তার মেয়াদ ২০১৩ সালে শেষ হয়েছে।
তিনি এখন শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন বলে ঢাকা ও লন্ডনের সূত্রগুলো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছে।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তার হয়ে বছর খানেক কারাবাসের পর জামিনে মুক্তি নিয়ে চিকিৎসার জন্য ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে লন্ডন পাড়ি জমান তারেক। এরপর আর তিনি ফেরেননি।
লন্ডনে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস ও জাতির জনককে নিয়ে বিতর্কিত বিভিন্ন বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে তার কথা প্রচারে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকী লিনা একটি আবেদন করেন।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই দিনই আদালত তারেক আইনের দৃষ্টিতে ‘পলাতক’ থাকা পর্যন্ত তার বক্তব্য-বিবৃতি প্রচার ও প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দেয়।
পাশাপাশি তারেকের বিদেশে অবস্থানের অবস্থা জানাতে বলা হয় পররাষ্ট্র সচিবকে। পুলিশ মহাপরিদর্শককে তারেকের পাসপোর্টের মেয়াদ জানিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
তার ধারাবাহিকতায় দুটি প্রতিবেদন মঙ্গলবার আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস তা আদালতে উপস্থাপন করেন।
প্রতিবেদনের তথ্য উদ্ধৃত করে তাপস বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০০৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর যে পাসপোর্ট নিয়ে তারেক রহমান লন্ডনে গিয়েছিলেন, তার মেয়াদ ছিল ২০১০ সাল পর্যন্ত। তবে লন্ডনে যাওয়ার পর ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে আবার পাসপোর্ট নবায়ন করা হয়, যার মেয়াদ সেপ্টেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত ছিল।
“এই যে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় দেড় বছর আগে লন্ডন থেকে কীভাবে আবার পাসপোর্ট নবায়ন করা হল, তা আইন অনুযায়ী হয়েছে কি না, তা পররাষ্ট্র সচিবকে জানিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত।”
পুলিশ প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে এই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ২০০০ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তারেক রহমানের নামে চারটি পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছে।
“কয়েক বছরের ব্যবধানে এক ব্যক্তির নামে একাধিক পাসপোর্ট ইস্যু করা যায় কি না, সে বিষয়ে আইজিপির মাধ্যমে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।”
ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল বলেন, তারেক রহমান যে পাসপোর্ট দেখিয়ে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন, ২০১৩ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা আর নবায়ন হয়নি। এ অবস্থায়ই তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করছেন।
মুদ্রা পাচারের একটি মামলায় খালাস পেলেও তারেককে পলাতক দেখিয়ে বিচার চলছে ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায়। আরও কয়েকটি মামলায়ও তিনি অভিযুক্ত। তার বিরুদ্ধে সারা দেশে রয়েছে অনেকগুলো মানহানির মামলা।
তবে বিএনপি বরাবরই বলে আসছে, তারেকের বিরুদ্ধে মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।