চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং জামায়াত তোষণের অভিযোগ তুলে তার অপসারণ দাবি করেছে ‘মুক্তিযোদ্ধা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন।
Published : 04 May 2015, 06:16 PM
সোমবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ তোলেন মুক্তিযোদ্ধাদের এই সংগঠনটি।
তবে অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিমের দাবি, বিভিন্ন সময়ে তার কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায় করতে না পেরে মেয়াদের শেষ প্রান্তে এসে ‘ভুঁইফোড়’ সংগঠনের মাধ্যমে এসব বিভ্রান্তিকর ও মনগড়া তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক গাজী সালেহ উদ্দিনও ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইদ্রিস, সুভাষ চৌধুরী, অঞ্জন সেন, বাদশা মিয়া প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম ‘জালিয়াতির’ মাধ্যমে নিজের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে সম্মানী ভাতা নিচ্ছেন।
আনোয়ারুল আজিমের কাছে যুদ্ধকালীন সময়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও কোনো অভিযানে অংশ নেওয়ার প্রমাণও নেই বলে দাবি করেন তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে আনোয়ারুল আজিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফের ডটকমকে বলেন, “আমাকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এর জন্য একটি যাচাই-বাছাই কমিটিও আছে। সনদের সত্যতা তারাই বিবেচনা করবে।”
ইদ্রিস অভিযোগ করেন, উপাচার্য অর্থের বিনিময়ে অযোগ্য ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে চাকরিচ্যুতদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ও শর্ত পূরণ না করা সত্ত্বেও পদোন্নতি দিচ্ছেন।
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা রবিউল আলমকে পরিবহন দপ্তরে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন তিনি। রবিউল জামায়াত সমর্থক বলে ইদ্রিসের দাবি।
তিনি আরও বলেন, “কোনো ধরনের ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও ফরিদুল আলমকে ভারপ্রাপ্ত হিসাব নিয়ামক, বিএনপিপন্থি শিক্ষক সাবেক উপাচার্য বদিউল আলমের ছোট ভাই মো. ফয়জুল্লাহকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সেল ও ছাত্রজীবনে শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত জাকির আহম্মদকে এস্টেট শাখার প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।”
এছাড়া বিএনপি সমর্থক শিক্ষক হিসেবে পরিচিত মোক্তার আহামদকে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক, কর্মকর্তা আলমগীর চৌধুরীকে প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগের কথাও বলা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
মুহাম্মদ নাছিমকে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে নিয়োগের বিষয়টি তুলে ধরে ইদ্রিস বলেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিবিরের সদস্য ছিলেন নাছিম। তিনি হেফাজতে ইসলামের ভলান্টিয়ার ইনচার্যের দায়িত্বে আছেন।”
মতিঝিল শাপলা চত্ত্বরে হেফাজতী তাণ্ডবের পর ২০১৩ সালের মে মাসে নগরীর আন্দরকিল্লা থেকে নাছিমের গ্রেপ্তার হওয়ার তথ্যও তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
ইদ্রিস বলেন, “উপাচার্য যোগ্যতাকে প্রাধান্য না দিয়ে, নিয়মনীতির বাইরে গিয়ে তার ছেলে ইফতেখার আরিফসহ ১৮ জনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। নিজের দুই শ্যালিকা এবং ছেলের বৌকেও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিযোগ দিয়েছেন।”
২০১১ সালের ১৪ জুন আনোয়ারুল আজিম আরিফকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ষোড়শ উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আগামী জুনে তার মেয়াদ শেষ হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দলেও উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম বিভক্তি সৃষ্টি করেছেন বলেও অভিযোগ করেন ইদ্রিস।
“বিএনপি-জামায়াতপন্থিসাদা দলের সদস্য ড. শাহাদাত হোসেনকে হলুদ দলের পক্ষ থেকে ডিন নির্বাচনে মনোনয়ন দেন উপাচার্য, যে কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে ড. শংকর লাল সাহা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন।”
এসব অভিযোগের বিষয়ে উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম বলেন, নিয়মনীতি মেনেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ ও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
নিজের ছেলে ও আত্নীয়-স্বজনদের নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, “যোগ্যতার ভিত্তিতেই তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দেশের নাগরিক হিসেবে যোগ্যতার ভিত্তিতে যে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেতে পারেন।”
হলুদ দলে ভাঙন ও সাদা দলের শিক্ষককে ডিন নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “এটা দলীয় বিষয়। কে মনোনয়ন পেল না পেল, তা দেখার জন্য দলের স্ট্যান্ডিং কমিটি আছে।”
উপাচার্যের দায়িত্বে থাকার কারণে দলের বিষয়গুলো নিয়ে তিনি কথা বলেন না বলেও দাবি করেন আনোয়ারুল আজিম।
রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, “এর আগে শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা ক্লাসের কারণে সময় দিতে না পারায় কাজে বিঘ্ন ঘটে।
“একজন কর্মকর্তা হিসেবে প্রধান প্রকৌশলী আলমগীর সবচেয়ে পুরনো ও যোগ্য লোক। তাই তাকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।”