লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের কূল-কিনারা বাংলাদেশের গোয়েন্দারা না পাওয়ার মধ্যে আল কায়েদার পক্ষ থেকে এর দায়িত্ব স্বীকার করে বার্তা এসেছে।
Published : 03 May 2015, 05:57 PM
বইমেলার বাইরে হামলায় লেখক অভিজিৎ নিহত
‘জঙ্গিবাদীরাই অভিজিৎকে হত্যা করেছে’
হত্যাকাণ্ডের দুই মাসের বেশি সময় পর শনিবার ভারতীয় উপমহাদেশের আল কায়েদার প্রধান আসিম উমর একটি ভিডিও বার্তা ইন্টারনেটে তুলেছেন।
তাতে তিনি বাংলাদেশে অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব স্বীকার করেছেন বলে জঙ্গি হুমকি পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ জানিয়েছে।
ধর্ম অবমাননাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে অভিজিতের মতো আরও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলেও দাবি করেছে আল কায়দা ইন দি ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট (একিউআইএস)।
এই তথ্য প্রকাশের পর যোগাযোগ করা হলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা আমি আপনার মতো সাংবাদিকদের কাছেই শুনেছি। এখনই অফিসিয়ালি (আনুষ্ঠানিকভাবে) কিছু বলতে চাচ্ছি না।”
আল কায়েদার এই দাবির বিষয়ে অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড তদন্তে যুক্ত পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কোনো কর্মকর্তাও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি।
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের পর দুই মাস পেরুলেও এখনও জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ড তদন্তে তারা যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইয়ের সহায়তাও নিচ্ছে।
বাংলাদেশি অভিজিৎ যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও ব্লগে লেখালেখি নিয়ে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের হুমকি পেয়ে আসছিলেন। স্ত্রী ব্লগার রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে বইমেলায় অংশ নিতে গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে ফিরেছিলেন তিনি।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বইমেলা সংলগ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে হামলা হয় অভিজিৎ ও বন্যার উপর। হামলাকারীদের চাপাতির আঘাতে নিহত হন অভিজিৎ। প্রাণে বেঁচে গেলেও এক আঙুল হারান বন্যা।
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের এক মাসের মধ্যে রাজধানীতে দিনের বেলায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে। তার সন্দেহভাজন দুই খুনিকে জনতা ধরে পুলিশে দেয়।
বাংলাদেশে এর আগে বিভিন্ন সময় ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট হত্যাকাণ্ড এবং হামলার ঘটনা ঘটেছে। সবগুলো হামলা একসূত্রে গাঁথা বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ধারণা জানালেও অপরাধীরা চিহ্নিত হয়নি।
এসব হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন হিসেবে নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবি, হুজির নাম আগে এলেও সম্প্রতি আলোচনায় উঠে আসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের খবর।
আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদার বাংলাদেশে সক্রিয় তৎপরতার খবর আগে না এলেও আনসারুল্লাহ আল কায়দাকে অনুসরণ করে চলে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আল কায়েদার নেতা আইমান আল জাওয়াহিরির একটি ভিডিও বার্তাও গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তুলেছিল।
ওই ভিডিও বার্তায় আল জাওয়াহিরি বাংলাদেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে ‘ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আগের বছরের হেফাজতকাণ্ডের সূত্র ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ‘ইসলামবিরোধী’ সরকার বলেছিলেন তিনি।
তখনকার পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেছিলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।
সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছিল, জঙ্গিদের মোকাবেলার সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে।
আল জাওয়াহিরির ভিডিও বার্তার সাত মাস পর আল কায়েদার পক্ষ থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের একটি শাখা খোলার দাবি করা হয়।