প্রতিমন্ত্রী সন্দেহভাজন দুজনকে গ্রেপ্তারের কথা সাংবাদিকদের জানালেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে শুধু ফারাবী শফিউর রহমানকে আটকের তথ্যই পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এই লেখকের হত্যাকাণ্ড তদন্তে ওয়াশিংটন থেকে ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে ঢাকায় এসেছে।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে সঙ্গে নিয়ে একুশের বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ফুটপাতে কুপিয়ে হত্যা করা হয় অভিজিৎকে।
হামলায় আহত বন্যাকে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হয়েছে। স্বামীর মতো ব্লগার বন্যাও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
হত্যাকাণ্ডের চার দিন পর ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে ফারাবীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ইন্টারনেটে ধর্মীয় উগ্রবাদের প্রচারক ফারাবী ফেইসবুকে অভিজিৎকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন।
ফারাবীকে গ্রেপ্তারের পরপরই র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “উগ্রপন্থি ব্লগার ফারাবীই লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের প্রধান সন্দেহভাজন।”
এরপর ফারাবীকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে মামলার তদন্ত সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের দুদিন পেরোলেও খুনিদের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য মেলেনি বলে জিজ্ঞাসাবাদকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই দুই দিনে তার কাছ থেকে উল্লেখ করার মতো কোনো তথ্য পাওয়া যাযনি।”
তবে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মনে করছেন, অভিজিতের লেখালেখিকে কেন্দ্র করে উগ্রপন্থিরাই তাকে হত্যা করেছে। ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা, অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলা একই সূত্রে গাঁথা।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জাসান খাঁন কামাল বৃহস্পতিবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকের বলেন, “আমাদের তদন্তের অগ্রগতি কাছাকাছি। আমরা সঠিক পথে হাঁটছি।”
তদেন্ত অগ্রগতির বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু না বললেও দুজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানান প্রতিমন্ত্রী। গত মঙ্গলবারও তিনি দুজনকে গ্রেপ্তারের কথা বলেছিলেন। তবে ফারাবী ছাড়া অন্যজনের পরিচয় প্রকাশ করেননি তিনি।
গ্রেপ্তার অন্যজনের বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের মুখপাত্র যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম এবং র্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খানের সঙ্গে বৃহস্পতিবার কথা বলা হলে তারা বলেন, ফারাবী গ্রেপ্তারের খবরটিই শুধু তাদের কাছে আছে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল বলেন, “অন্য কোনো সংস্থা আর কাউকে গ্রেপ্তার করেছে কি না, তা আমার জানা নেই।”
ফারাবীকে গত ২ মার্চ র্যাব গ্রেপ্তারের পর তদন্ত সংস্থা ডিবির হাতে তুলে দেয়। পরদিন আদালতে পাঠিয়ে তা ১০ দিনের জন্য হেফাজতে আনে ডিবি।
এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বুধবার রাতে আসা এফবিআই কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে যান। তারা তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পরামর্শ এবং কারিগরি কিছু সহায়তা নেওয়া ছাড়া এফবিআইয়ের কাছ থেকে তাদের পাওয়ার আর কিছুই নেই।
এফবিআই প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এফবিআই আসবে এটাই স্বাভাবিক, কারণ অভিজিৎ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। যদি কোনো পরামর্শ থাকে, আমরা দেব, তারাও দেবেন।”
২০০৪ সালে ২১ অগাস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার তদন্তে বাংলাদেশে এফবিআই কর্মকর্তারা এসেছিলেন। তখন তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন, তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক, কারিগরি সহায়তা দিয়েছিল।
ওই ঘটনার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা জজ মিয়ার সাথেও কথা বলেছিল। কিন্তু জজ মিয়ার ঘটনা যে সাজানো, তারা তা জানতেও পারেনি। পরে সিআইডি এই সাজানো ঘটনার রহস্য বের করে।”