১০ দিন ধরে নিখোঁজ বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের সন্ধান পাওয়ার গুজবে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদীর দুর্গম চরে অভিযান চালিয়েও কোনো খোঁজ পায়নি পুলিশ।
Published : 19 Mar 2015, 09:31 PM
বৃহস্পতিবার রাতে ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের খাটিয়ামারি চরে একটি লাশ পাওয়ার খবর শুনে ওই এলাকায় অভিযানে নামে পুলিশ।
কয়েকটি চরে গভীর রাত পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়েও কোনো লাশ কিংবা সালাহ উদ্দিনের কোনো খোঁজ না পেয়ে বিষয়টি গুজব বলে উড়িয়ে দেন ফুলছড়ি থানার ওসি মশিউর রহমান।
তিনি মধ্যরাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তালতলী, হাতিয়ামারী, বেলুয়াছড়ি চরে খুঁজেছি, কিছু পাইনি। মনে হচ্ছে, এটা গুজব।”
এর আগে রাত ৯টার দিকে গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একটি গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার পর তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে যাচ্ছেন।
“ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের খাটিয়ামারির চরে একটি লাশ পাওয়া গেছে বলে শোনা গেছে, আমরা সেখানে যাচ্ছি।”
তার ঘণ্টাখানেক পর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গুজব শুনে আমরা চৌকিদার নিয়ে অভিযান চালাচ্ছি, কিন্তু এখনও কিছু পাইনি।”
ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, রাত ৮টার দিকে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে টেলিফোন করে খাটিয়ামারির চরে সালাহ উদ্দিনের লাশ পাওয়ার খবর সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।
“এরপর আমরা ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশ নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের সাড়ে সাত কিলোমিটার চরাঞ্চল ও নদীর কিনারায় তল্লাশি করে কিছুই পাইনি।”
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোশাররফ বলেন, খাটিয়ামারির চরে তল্লাশি করে কিছু না পাওয়ার পর বেলুয়াবাড়ি, খঞ্চপাড়া, বাগবাড়ি, তালতলার চরসহ নদী তীরের বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালনো হয়।
রাত ১২টা পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়ে কিছু না পাওয়ার পর পুলিশ ওই এলাকা থেকে ফিরে আসে।
রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে অজ্ঞাত স্থান থেকে এক মাসের বেশি সময় ধরে বিএনপির নামে বিবৃতি পাঠিয়ে আসা সালাহ উদ্দিনকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে গোয়েন্দা পুলিশ ধরে নিয়ে যায় বলে তার পরিবারের অভিযোগ।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে সেই অভিযোগ নাকচ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে তাকে আটক করতে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সালাহ উদ্দিনের সন্ধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে বৃহস্পতিবার আবেদন জানিয়েছেন উদ্বিগ্ন হাসিনা আহমেদ। তার সন্তানরাও বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিয়ে হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, “আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাতে এসেছি যেন তিনি আমার স্বামীকে খুঁজে বের করতে ব্যবস্থা নেন। আমি বিশ্বাস করি, উনিও একজন মা ও স্ত্রী। আমার মনোকষ্টের কথা প্রধানমন্ত্রী বুঝবেন।”
২০১২ সালে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তার হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন। ইলিয়াস অন্তর্ধান রহস্যের মীমাংসা তিন বছরেও হয়নি।
সালাহ উদ্দিনকে খুঁজে বের করতে পুলিশ তৎপর বলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী দাবি করলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে তার স্ত্রীর।
তিনি বুধবার সাংবাদিকদের “আমার স্বামীকে ফিরে পেতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বাত্মক সহযোগিতা পাচ্ছি না। এই আট দিনের মধ্যে গতকাল (সোমবার) সিটি এসবির একজন সাব ইন্সপেক্টর আমার সঙ্গে দেখা করেছে মাত্র।”
বুধবার রাতে দুই সন্তানকে নিয়ে গুলশানের কার্যালয়ে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন কক্সবাজারে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা।
সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন সালাহ উদ্দিন। পরে তিনি চাকরি ছেড়ে কক্সবাজারের সংসদ সদস্য হন এবং ২০০১ সালে তিনি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
দশম সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির আন্দোলনের সময় একবার সালাহ উদ্দিন এবারের মতোই কর্মসূচি জানিয়ে বিবৃতি দিয়ে আসছিলেন। তখনও তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, কিছু দিন কারাগারেও ছিলেন।
তবে এবার তাকে আটকের খবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অস্বীকারের পাশাপাশি বিষয়টি ‘রহস্যময়’ বলে আসছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।
হাসিনা আহমেদ বলেন, “স্বামী নিখোঁজের পর থেকে আমার ঘরে কোনো রান্না-বান্না হয় না। পাশের বাসার ভাবিরা রান্না করে খাবার পাঠায়। বাচ্চারা কিভাবে আছে, কী খায়, কিছুই বলতে পারি না।”
“আমার স্বামী যদি কোনো অপরাধ করে থাকে, তাহলে আদালতে হাজির করে তার বিচার করুন,” সরকারের উদ্দেশে বলে আসছেন তিনি।
উত্তরার একটি বাসায় সালাহ উদ্দিন ছিলেন বলে তার স্ত্রীর দাবি। তিনি বলেন, গভীর রাতে সেখান থেকে গোয়েন্দা পুলিশ তার স্বামীকে তুলে নিয়ে যায়।
স্বামীর খোঁজ চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদনও করেছেন হাসিনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়েছে, পুলিশ সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেনি। আগামী ৮ এপ্রিল হাই কোর্টে ওই আবেদনের শুনানির তারিখ রয়েছে।