ভোটের দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও পাল্লা দিয়ে ‘মুখ প্রচারের’ লড়াইয়ে নেমেছেন দক্ষিণ ঢাকার পরিচিত আর অপরিচিত মুখের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
Published : 17 Mar 2015, 09:01 PM
কারো আশ্বাস শিশুদের বিকাশের উপযোগী ঢাকা গড়ার, কেউবা দিচ্ছেন সুখে-দুঃখে নগরবাসীর পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি।
তবে সব মিলিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলছে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৬৩ ভোটারের এই দক্ষিণ ঢাকায়।
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সাঈদ খোকনকে নিজেদের প্রার্থী করার ঘোষণা দিয়েছে। মাঠে আছেন একই দলের আরেক নেতা হাজি মো. সেলিম, যিনি জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়ী হয়েছেন।
থেমে নেই জাতীয় পার্টিার সমর্থন পাওয়া সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলনের প্রচার কার্যক্রমও।
মঙ্গলবার ঢাকা দক্ষিণের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, পান্থপথ সিগন্যালে পাশাপাশি দুটি বিলবোর্ডে সাঈদ খোকন এবং হাজি সেলিমের নামে দুটি ব্যানার টানানো হয়েছে। দুটোরই আয়তন ২০ বাই ৪০ ফুট।
বিলবোর্ডে সাঈদ খোকন শিশুদের বিকাশের উপযোগী ঢাকা শহর গড়তে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন, হাজি সেলিম সুখে-দুঃখে নগরবাসীর পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বাংলামটর মোড়, হোটেল রূপসী বাংলা মোড় থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত সাঈদ খোকনের নামে পাঁচটি বিলবোর্ড চোখে পড়েছে, সেলিমের তিনটি। সেই সঙ্গে পোস্টারেও ছেয়ে গেছে গোটা এলাকা।
নির্বাচন কমিশনও বলছে, তফসিল ঘোষণার আগে প্রচার-প্রচারণা তদারকির কোন এখতিয়ার তাদের নেই।
ঢাকা দক্ষিণের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত চকবাজার, নয়াবাজার, লক্ষ্মীবাজার, শাঁখারিবাজার এলাকা জুড়ে সাঈদ খোকনের তুলনায় একচ্ছত্রভাবে হাজি সেলিমের নির্বাচনী ব্যানার ও পোস্টারের দেখা মিলেছে।
পুরান ঢাকার সূত্রাপুর এলাকা থেকে পল্টন হয়ে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত এলাকায় হাজি সেলিমের বিলবোর্ড দেখা গেছে পাঁচটি, সাঈদ খোকনের তিনটি এবং সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলনের একটি।
প্রচারের এই লড়াইয়ে তুলনামূলক পিছিয়ে থাকা সাইফুদ্দিন মিলনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তার প্রচারণা প্রসঙ্গে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ বিষয়ে তার সোজাসাপ্টা উত্তর: “জায়গা পাই নাই।”
বললেন, “ওরা (আওয়ামী লীগ) তিন মাস আগে থেকেই সব দখল করে ফেলেছে। আমরা কিছুটা দেরি করে ফেলেছি। তবে আমার দলের লোকজন চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইনশাল্লাহ্ দেখা যাক কি হয়।”
দলের একাধিক নেতা জানান, কোন না কোন উপলক্ষে সারা বছরই জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম ফোরামের সদস্য মিলনের নামে পোস্টার সাঁটেন তার সমর্থকরা।
বিলবোর্ড, ব্যানার বা ফেস্টুনে প্রতিশ্রুতি আর শুভেচ্ছায় কেউ এগিয়ে বা পিছিয়ে থাকলেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও নেতাকর্মীরা।
নিজের দলের দুই নেতাকে কেন্দ্র করেই এবারের লড়াই জমে উঠবে বলে মন্তব্য করলেন ঢাকার নয়াবাজার এলাকার যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান।
‘পাশে আছি, থাকবো’- এই স্লোগানে প্রচারে থাকা হাজি সেলিমের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল আগাম প্রচারের বিষয়ে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আসলে ঢাকাবাসী কিংবা ঢাকাইয়া যা-ই বলেন- তারা আমাকে নগরপিতা হিসেবে দেখতে চায়। এই প্রচার প্রচারণার এরাই করছে। আমি শুধু তাদের চাওয়া মেনে নিয়েছি।”
নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী কোন সাংসদ মেয়র নির্বাচন করতে চাইলে সংসদ সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়।
এ প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, “আমি জনগণের সেবক। ঢাকাইয়ারা যদি চায়, তাহলে সংসদ সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিতে আমার কোন আপত্তি নাই। আমি মাঠের লোক। ওয়ার্ড কমিশনার ছিলাম, ভারপ্রাপ্ত মেয়র ছিলাম। দলের প্রতি সবসময় বিশ্বস্ত ছিলাম। আশাকরি দল আমার বিষয়টি বিবেচনা করবে।”
অন্যদিকে একই কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিম।
সেলিমের নির্বাচনী প্রচারের বিষয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাঈদ খোকন বলেন, “আসলে সবাইকে নিয়েই তো নির্বাচন। ব্যক্তিগতভাবে আমি সবাইকে সাথে নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। তাই এ ব্যাপারে (সেলিম) আমার কোন মাথাব্যথা নেই।”
তবে নির্বাচনের আগেই আগাম প্রচারণার বিষয়টি তীব্র ভাবে বিরোধিতা করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি মনোনীত প্রার্থী রুহিন হোসেন প্রিন্স।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার আগে প্রচার প্রচারণা অবৈধ এবং অনৈতিক। যারা এটা করছেন তারা অনৈতিক কাজ করছেন। আমরা তফসিল ঘোষণার পর থেকেই প্রচারণার কাজে নামব।”