জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে চার ম্যাচে আট উইকেট নিলেও বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাননি সাইফ উদ্দিন, এই সিরিজে দুই ম্যাচে এক উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপে যাচ্ছেন তানজিম হাসান।
Published : 14 May 2024, 05:32 PM
বিপিএলে দুর্দান্ত পারফর্ম করে লম্বা সময় পর জাতীয় দলে ফেরা। সম্ভাবনা জেগে উঠল বিশ্বকাপ দলে থাকারও। কিন্তু জিম্বাবুয়ে সিরিজের শেষ ভাগটায় ব্যর্থ হয়ে সেই সুযোগ হাতছাড়া করলেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। উইকেট শিকারে সফল হলেও টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকদের চাওয়া পূরণ করতে পারেননি তিনি। এখানে বরং তারা ভরসার ছবি দেখেছেন তানজিম হাসানের বোলিংয়ে।
পিঠের পুরোনো চোট কাটিয়ে গত জানুয়ারিতে বিপিএল দিয়ে দীর্ঘ দিন পর মাঠে ফেরেন সাইফ উদ্দিন। টুর্নামেন্টের মাঝপথে যোগ দিয়েও ফরচুন বরিশালের প্রথম শিরোপা জয়ে রাখেন বড় অবদান। বিশেষ করে ডেথ ওভারে কার্যকর বোলিংয়ের সামর্থ্যের ছাপ রাখেন ২৭ বছর বয়সী পেস অলরাউন্ডার।
বিপিএলের পারফরম্যান্স দিয়ে তার সামনে খুলে যায় জাতীয় দলের দুয়ার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রায় দেড় বছর পর তিনি ফেরেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে। চট্টগ্রামে ফেরার ম্যাচে স্রেফ ১৫ রানে সাইফ উদ্দিন নেন ৩ উইকেট।
কিন্তু পরের ম্যাচগুলোতে আর তেমন বোলিং করতে পারেননি সাইফ উদ্দিন। তিন ম্যাচেই ওভারপ্রতি ৯ রানের বেশি খরচ করেন তিনি। শেষ টি-টোয়েন্টিতে ৪ ওভারে তিনি দেন ৫৫ রান। সেই ম্যাচে বাংলাদেশের পরাজয়ের পেছনে তার ধারহীন ও এলোমেলো বোলিংয়ের ছিল বড় দায়।
এখানেই হয়তো নিজের সর্বনাশ ডেকে এনেছেন তিনি। তাই ৪ ম্যাচে সিরিজের সর্বোচ্চ ৮ উইকেট পেলেও আস্থার পরীক্ষায় জিততে পারেননি তিনি।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার বিশ্বকাপের দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে সাইফ উদ্দিনের বাদ পড়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন প্রধান নির্বাচক।
“এখানে সবাই (ক্রিকেটাররা) খুব কাছাকাছি। যে দলটা আমরা দিয়েছিলাম গত ৩০ এপ্রিল, সেটা একটা প্রেক্ষাপটে দেওয়া হয়েছিল। প্রথমত, যারা ফিট আছে তাদের প্রাধান্য দেওয়া। আরেকটা হলো, আমাদের কিছু চোটগ্রস্ত ক্রিকেটার আছে এবং কিছু পরখ করে দেখার ব্যাপার ছিল।”
“বিশেষ করে সাইফ উদ্দিনের ব্যাপারটা, তিনি কীভাবে ফেরত আসেন। তার পারফরম্যান্স একটু বিশ্লেষণ করার দরকার ছিল। সেই আলোকে আমরা আস্থার জায়গা থেকে সাইফ উদ্দিনকে (আগের দলে) রেখেছিলাম। তাকে পর্যবেক্ষণের পর আমাদের মনে হয়েছে, প্রত্যাশার যে জায়গাটা, আস্থার যে জায়গাটা, ঠিক সেই আকাঙ্ক্ষিত জায়গায় কিছুটা এগিয়ে তানজিম সাকিব। সেই আলোকেই সাইফ উদ্দিন দলে জায়গা করতে পারেনি। তবে সে খুব কাছাকাছি ছিল।”
জিম্বাবুয়ে সিরিজে তানজিমের পারফরম্যান্সও খুব একটা সন্তোষজনক নয়। দুই ম্যাচে তার শিকার এক উইকেট। এক ম্যাচে চার ওভারে ২৬ রান দিলেও পরের ম্যাচে চার ওভারে তিনি দিয়েছেন ৪২ রান। ওই সিরিজের আগে নিউ জিল্যান্ড সফরে খেলা দুই টি-টোয়েন্টিতে ৬ ওভারে ৬০ রান দিয়ে তিনি নেন ২ উইকেট।
তবে তানজিমের চেষ্টা ও নিবেদন নজর কেড়েছে নির্বাচকদের। এছাড়া ডেথ ওভারে সাইফ উদ্দিনের ইয়র্কার করার সামর্থ্যে ঘাটতিতে কাজ করেছে তানজিমের পক্ষে।
অথচ গত ৩০ এপ্রিল আইসিসির কাছে যে প্রাথমিক দল পাঠিয়েছিল বিসিবি, সেটিতে ছিলেন সাইফ উদ্দিন। গাজী আশরাফ বলেছেন, জিম্বাবুয়ে সিরিজে ম্যাচের নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে দলে দাবি মেটাতে না পারার কারণেই শেষ পর্যন্ত তানজিমের কাছে জায়গা হারিয়েছেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার।
“তানজিম সাকিবকে আমরা শ্রীলঙ্কা সিরিজেও দেখেছি। তার একাগ্রতা, মাঠে নিজেকে নিংড়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা এসব তাকে কিছুটা এগিয়ে রেখেছে। ফিল্ডিংয়েও সে খুব ভালো। আমরা যে কারণে একটু মুখিয়ে ছিলাম, সাইফ উদ্দিনের দিকে, তিনি ব্যাটিং করার তেমন সুযোগ পাননি। তার ডেথ ওভারে ইয়র্কার করার যে সামর্থ্যটা ছিল, সেটা অনেক কম পরিলক্ষিত হয়েছে। সেখানে আরও অনেক উন্নতি করতে হবে।”
“ঘরোয়া টুর্নামেন্টে সে যেমন করেছে, তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একটা তারতম্য লক্ষ্য করেছি। না হলে সে আমাদের ভাবনায় ছিল। বিপিএলের আলোকে চিন্তা করেই আমরা দল গুছিয়েছিলাম। আমরা সেই দল থেকে খুব বেশি বিচ্যুত হইনি। এই একটা ক্রিকেটার, সাইফ উদ্দিনই একমাত্র যে আমাদের ৩০ তারিখের দল থেকে বিশ্বকাপে যেতে পারছে না। অন্যথায় ওই দলের ১৫ জনই থাকত। শুধু সাইফউদ্দিনের জায়গায় এখন তানজিম চলে এসেছে।”
জিম্বাবুয়ে সিরিজে উইকেট সংখ্যায় সাইফ সফল হলেও ম্যাচের নির্দিষ্ট পরিস্থিতির দাবি মেটানোর ব্যর্থতার কথা বললেন প্রধান নির্বাচক।
“শুধু উইকেটসংখ্যা দেখেই কিন্তু উপসংহার টানা যায় না। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আপনি কখন, কোন অবস্থায় উইকেট পাচ্ছেন, সেটা অনেক গভীরভাবে দেখতে হবে যে, কে কখন বোলিংয়ে আসছে। চট্টগ্রামে দেখবেন, প্রথম দুটি ম্যাচেই ওদের ওপরের সারি ব্যাটসম্যানরা দ্রুত আউট হয়ে গেছে।”
ডেথ ওভারে সাইফ উদ্দিনের ইয়র্কারের সামর্থ্য নিয়ে ঘাটতির কথা বলেছেন গাজী আশরাফ। কিন্তু তানজিমকেও তো কখনও তেমন ইয়র্কার ব্যবহার করতে দেখা যায়নি! এই প্রশ্নে সাইফ উদ্দিনকে বাইরে রাখার কারণই আরেকটু বিস্তারিত ব্যাখ্যা করলেন প্রধান নির্বাচক।
“আমাদের যে জায়গায় নির্দিষ্টভাবে সাইফ উদ্দিনকে দরকার হতো, সেই নির্দিষ্ট জায়গায় সে কতটা ভূমিকা রাখতে পারে, সেটাই আমরা পরখ করে দেখেছি। শেষ ম্যাচে আমরা মাত্র ২ জন সিমার খেলিয়েছি। এর একটাই উদ্দেশ্য ছিল, সাইফউদ্দিনকে ৪ ওভার পুরোপুরি বল করতেই হবে। সেই জায়গায় এক-দুইটি ওভার খারাপ হয়ে গেলে অনেক বড় ব্যাপার। সেটা খারাপ হতেই পারে। দিন শেষে আমাদের আস্থা তার উপর থাকবে, যে তার শতভাগ দিচ্ছে।”
“কোনো কোনো জায়গায় মনে হয়েছে সাইফ উদ্দিন আরও ভালো করতে পারত। তার শর্ট পিচ বলগুলো আমাদের ভালো লাগেনি, মাথার ওপর দিয়ে গেছে। কিছু কিছু বল পায়ের সামনে পড়েছে। জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটারকে কেন বাদ দিয়েছি, এত বিশদভাবে বলতে চাই না। সে আমাদের জাতীয় ক্রিকেটার। আমার মতে, আমাদের ওপর কিছুটা আত্মবিশ্বাস রাখা উচিত আপনাদের। আমি বলতে চাই, আস্থার জায়গায় আমরা সাইফ উদ্দিনকে মিস করেছি। সেই জায়গায় (তানজিম) সাকিবকে এগিয়ে রেখেছি। অবশ্যই সে (সাইফ উদ্দিন) কঠোর পরিশ্রম করবে। ভালো করলে ভবিষ্যতে অবশ্যই সুযোগ আসবে।”