প্রথম স্পেলে ধারহীন বোলিং করা মেহেদী হাসান মিরাজ পরে সফল হয়েছেন গতির কৌশল কাজে লাগিয়ে।
Published : 21 Apr 2025, 08:38 PM
প্রথম সেশনে চার ওভারে ১৬ রান দিয়ে উইকেট নেই। বোলিংয়েও দেখা গেল না ধার। ইনিংস শেষে সেই মেহেদী হাসান মিরাজই মাঠ ছাড়লেন বল উঁচিয়ে ধরে মুখে হাসি ঝুলিয়ে। জিম্বাবুয়ের পাঁচ উইকেট পড়ার পরও যার কোনো উইকেট ছিল না, তিনিই শেষ পর্যন্ত পাঁচ উইকেট নিয়ে দলের সফলতম বোলার। কিভাবে সম্ভব হলো এই পালাবাদল? মিরাজের উত্তর, গতি দিয়ে!
গতির বার্তা নিয়েই শুরু হয়েছিল এই টেস্ট। এই দিনটিও। তবে সেই গতির আলোচনা ছিল নাহিদ রানাকে ঘিরে। টেস্ট শুরুর আগে বাংলাদেশের দ্রুততম বোলারকে নিয়ে আলোচনা, জবাব-পাল্টা জবাবের কিছু উত্তেজনা দেখা গিয়েছিল। দ্বিতীয় দিন সকালে বাংলাদেশের প্রত্যাশার সেই রূপেই নিজেকে মেলে ধরেন নাহিদ। গতির সঙ্গে বাউন্সের বিষাক্ত ছোবলে প্রথম সেশনেই দলকে এনে দেন তিন উইকেট।
তবে গতি তো শুধু পেসারদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়। স্পিনারদের আক্রমণেরও বড় অনুষঙ্গ এই গতি। যে কোনো মাঠে স্পিনারদের সাফল্যের জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি উইকেটের গতি দ্রুত ধরতে পারা এবং সেই গতি অনুযায়ী বোলিংয়ের গতিও ঠিক করা। সিলেট টেস্টের দ্বিতীয় দিনে এ জায়গাতেই মিরাজকে দেখা গেছে দুই রূপে।
সোমবার প্রথম সেশনে চার ওভার বোলিং করে তেমন কোনো প্রভাব রাখতে পারেননি মিরাজ। ব্যাটসম্যানদের বেগ দিতে পারেননি একটুও। স্লগ সুইপে তাকে ছক্কাতে ওড়ান শন উইলিয়ামস। আক্রমণ থেকে তাকে দ্রুত সরিয়েও দেন অধিনায়ক। দ্বিতীয় সেশনে স্পিনের ভাবনায় অধিনায়ক শান্তর ভরসা আগে পান তাইজুল ইসলাম। তবে তারও একই দশা।
উইকেটের গতির সঙ্গে নিজের বোলিংয়ের গতির ভারসাম্য করতে পারেননি দেশের মাঠে বাংলাদেশের সফলতম স্পিনারও। প্রথম পাঁচ ওভারে ৩৫ রান দেওয়ার পর তাকেও সরিয়ে নিতে বাধ্য হন অধিনায়ক। আবার মিরাজকে মনে পড়ে তার।
এবার মিরাজকে দেখা যায় অন্য রূপে। জিম্বাবুয়ের উইকেট বাকি ছিল তখন পাঁচটি। সবকটিই ঝুলিতে ভরে টেস্ট ক্যারিয়ারে একাদশবারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেটের স্বাদ পান ২৭ বছর বয়সী স্পিনার।
আগের বোলিংয়ের সঙ্গে পরের বোলিংয়ের পার্থক্যটুকু দিনের শেষে সংবাদ সম্মেলনে শোনালেন মিরাজ।
“যেহেতু আমরা খেলার ভেতরে থাকি… আমরা অনেক সময় বুঝতে পারি যে আমাদের এই উইকেটে কীভাবে বল করতে হয়। কোচদের একটা ম্যাসেজ ছিল যে, এই উইকেটে পেসটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, পেসটা ধরে রাখা যেতে পারে… তারা আমাদেরকে খুব ভালো গাইড করেছে। এখানে আমাদের ভিডিও ফুটেজ আছে…।”
“প্রথম স্পেলে যখন বল করছিলাম, জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আমার গতিটা কেমন? এই গতিতে বল করলে কেমন কঠিন হবে ব্যাটসম্যানের জন্য…।” উইকেট তো…আপনি আসলে গেলেই উইকেট পাবেন না। তবে ব্যাটসম্যান যেন কষ্ট করে খেলে বা রান না বের করতে পারে, তখনই একটা পরিস্থিতি (তৈরি) হবে… আউট হবে। ওই ভুল যেন করাতে পারি, অমন মানসিকতার জন্য হয়তো উইকেটগুলো পেয়েছি।”
মিরাজের বোলিংয়ে সেই ভাবনার প্রতিফলনই পড়েছিল। প্রথম সেশনের চেয়ে দ্বিতীয় সেশনে বোলিংয়ের গতি একটু বেশি ছিল তার। গতির বৈচিত্রই এই সেশনে করেছেন বেশি। জোরের ওপর কয়েকটি ডেলিভারির পর তিনি খানিকটা মন্থর ডেলিভারিতে আউট করেছেন শন উইলিয়ামসনকে। যদিও জিম্বাবুয়ের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের শটটি ছিল আত্মঘাতী। তবে তিনি বড় শট খেলবেন বুঝে নিয়েই ওই ডেলিভারি একটু ঝুলিয়ে করেছিলেন মিরাজ। অন্য ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রেও গতির তারতম্য কাজে লাগিয়েছেন তিনি।
তাতে ছোটখাটো একটা খরা কেটেছে তার। দেশের মাঠ আট টেস্ট পর দেখা পেয়েছেন ইনিংসে পাঁচ উইকেটের। সেই তৃপ্তির জায়গাও তার আছে।
“উইকেট পেলে তো সবারই ভালো লাগে। দিনশেষে যেহেতু… ঘরের মাঠে খেলা… প্রত্যাশা নিজের কাছে যদিও এতটা উঁচুতে ছিল না। চেষ্টা ছিল ঠিক জায়গায় বল করাটা, দলকে ভালোভাবে সহায়তা করা। ৫ উইকেট নিতে তো তো অবশ্যই ভালো জায়গায় বল করতে হবে, পাশাপাশি ভাগ্যকেও পাশে পেতে হয়।”