অবমাননার দায়ে ব্রিটিশ নাগরিক ও সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের দণ্ড হওয়ার পর উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া ৫০ নাগরিকের মধ্যে আরও ১০ জন ট্রাইব্যুনালে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে রেহাই পেয়েছেন।
Published : 03 Mar 2015, 03:23 PM
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।
এই দশজন হলেন- যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেইট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও সরকার বিভাগের শিক্ষক আলী রীয়াজ, অধ্যাপক পারভিন হাসান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক ফিরদাউস আজিম, প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমেদ, মানবাধিকার আইনজীবী ফস্টিনা পেরেইরা, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক মো. নুর খান লিটন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিয়া হক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সিউতি সবুর, সারাহ শিহাবুদ্দিন ও লেখক তাহমিমা আনাম।
এ নিয়ে বিবৃতিদাতাদের মধ্যে মোট ২৪ জন অবমাননার অভিযোগ থেকে ক্ষমা পেলেন।
এছাড়া আরও আট বিবৃতিদাতার সময়ের আবেদনে বাকি ২৫ জনের বিষয়ে আদেশের জন্য ১৮ মার্চ দিন ঠিক করে দিয়েছে আদালত।
৫০ নাগরিকের মধ্যে মানবাধিকার কর্মী ও নারীনেত্রী খুশি কবির ওই বিবৃতি প্রকাশের পরপরই নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার সময়ের আবেদন করেছেন মাসুদ খান, সাংবাদিক ও লেখক আফসান চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহমান, অধিকারকর্মী হানা শামস আহমেদ, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সংগীত শিল্পী আনুশেহ আনাদিল, সাংস্কৃতিক কর্মী লুবনা মারিয়ম ও অধিকারকর্মী মুক্তাশ্রী চাকমা সাথী।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ১৪ জনের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তাদের অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় আদালত।
লেখক তাহমিমা আনাম সেদিন ব্যাখ্যা দাখিল করলেও তার ক্ষমা প্রার্থনার ভাষা সঠিক না হওয়ায় সেদিন তাকে অব্যাহতি দেয়নি আদালত।
ব্লগে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ লেখার মাধ্যমে বিচারাধীন বিষয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর দায়ে সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে গত ২ ডিসেম্বর সাজা দেয় ট্রাইব্যুনাল। এরপর ২০ ডিসেম্বর দৈনিক প্রথম আলো ৫০ নাগরিকের উদ্বেগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে।
ওই সংবাদ ‘বাংলাদেশের বিচার বিভাগের প্রতি কটাক্ষ’ বলে মনে হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল প্রথম আলোর কাছে ওই বিবৃতির ‘পূর্ণাঙ্গ কপি’ দেখতে চায়। সে অনুযায়ী প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ ওই ৫০ নাগরিকের পক্ষে বিবৃতি পাঠানো হানা শামস আহমেদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় ও ঠিকানা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে।
আদালতের নির্দেশে বিবৃতিদাতা ৫০ নাগরিকের মধ্যে ৪৯ জনের পরিচয় ও ঠিকানা গত ১৪ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক। নাম-ঠিকানা পাওয়ার পর বিচারক বিবৃতিদাতাদের আচরণের ব্যাখ্যা দিতে বলেন।
বাকি বিবৃতিদাতাদের মধ্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী ট্রাইব্যুনালে নিজের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন তিনি নিজেই এর ওপর শুনানি করবেন।
তিনি জানান, বিবৃতিতে যা লেখা হয়েছে তাতে আদালত অবমাননার মতো কিছু ছিল না বলে তিনি মনে করেন। এ বিষয়টি আদালতে দেওয়া ব্যাখ্যাতেও তিনি উল্লেখ করেছেন।
বিবৃতিদাতা বাকিরা হলেন- নারী অধিকারকর্মী শিরীন হক, আলী আহমেদ জিয়াউদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক সি আর আবরার, নারী গ্রন্থ প্রবর্তনার নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আক্তার, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষক বীণা ডি কস্টা, নৃ-বিজ্ঞান গবেষক রেহনুমা আহমেদ ও আলোকচিত্রী শহীদুল আলম।
এছাড়া সাংস্কৃতিক কর্মী লিসা গাজী, দিনা এম সিদ্দিকী, জারিনা নাহার কবির, লেখক শবনম নাদিয়া, লেখক মাহমুদ রহমান, চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসরিন সিরাজ এ্যানি, আলাল ও দুলাল ব্লগের সম্পাদক তীব্র আলী, নৃবিজ্ঞানী দেলোয়ার হোসেন, অধিকারকর্মী রেজাউর রহমান সই করেন ওই বিবৃতিতে।