নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় নয় মাস পেরুলেও তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি।
Published : 12 Feb 2015, 07:49 PM
কবে নাগাদ তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে, তাও বলতে পারছেন না হাই কোর্টের নির্দেশে গঠিত এই কমিটির সদস্যরা।
তদন্ত কমিটির প্রধান বরাবরের মতো ‘শিগগিরই’ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আশা করলেও এর সদস্য সচিব বলছেন, কমিটির সদস্যদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার জন্য চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা যাচ্ছে না।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম গত বছরের ২৭ এপ্রিল অপহৃত হন। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
অপহরণের ঘটনার পরপরই নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করা হয়। নূর হোসেন র্যাবকে ৬ কোটি টাকা দিয়ে সাতজনকে হত্যা করিয়েছেন বলে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন।
এরপর র্যাব ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্তে হাই কোর্টের নির্দেশে গত বছরের ৭ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান আলী মোল্লাকে (বর্তমানে সরকারি কর্মকমিশনের-পিএসসি সচিব) প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি করে সরকার।
এই কমিটি চার শতাধিক ব্যক্তির সাক্ষ্য নেয়, যাদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান, তৎকালীন র্যাব মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান, নারায়ণগঞ্জের তৎকালীন এসপি-ডিসিও রয়েছেন।
কমিটির প্রধান হিসাবে দায়িত্ব চালিয়ে আসা শাহজাহান আলী মোল্লাকে গত ৯ নভেম্বর পিএসসির সচিব করা হলে তদন্তে ভাটা পড়ে। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল হাকিমকে কমিটি প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
গত ১০ ডিসেম্বর হাই কোর্ট শাহজাহান আলী মোল্লাকেই কমিটির প্রধান হিসাবে বহাল রাখার নির্দেশ দেয়। ওই সময় নতুন করে দায়িত্ব নিয়ে শাহজাহান বলেছিলেন, “শিগগিরই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।”
তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব আবুল কাশেম মহিউদ্দিন বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কমিটির সদস্যদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার জন্য চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা যাচ্ছে না।”
৯৮ শতাংশ কাজই শেষ জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন পুরো রিপোর্ট নিয়ে বসে একে চূড়ান্ত করতে হবে। আশা করছি, এই মাসের (ফেব্রুয়ারি) মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারব।”
“নূর হোসেনের জন্য অনেক অপেক্ষা করেও আমরা তাকে পাইনি। তাই তার সাক্ষ্য ছাড়াই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে,” বলেন মহিউদ্দিন।
সাত খুনের ঘটনায় অন্যতম আসামি নূর হোসেন বর্তমানে ভারতের জেলে রয়েছেন। তাকে দেশে ফেরাতে এর আগে সরকারি উদ্যোগ থাকলেও এখনও ভারতের জেলেই বন্দি আছেন হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত এই নেতা।
তদন্ত কমিটির প্রধান শাহজাহান আলী মোল্লা বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার চেষ্টা করব।”
এর আগে কয়েক মাস ধরে ‘শিগগিরই’ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়ে আসছেন শাহজাহান আলী।
কবে নাগাদ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হতে পারে- এমন প্রশ্নের সরাসরি কোন উত্তর দেননি তদন্ত কমিটি প্রধান।
“আমরা চেষ্টা করব তাড়াতাড়ি প্রতিবেদন জমা দিতে। কমিটির সদস্যদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা আছে বলে আমি মনে করি না।”
নারায়ণগঞ্জে অপহরণ ও হত্যার ওই ঘটনায় প্রশাসনের কেউ বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা বা সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না- গণতদন্তের মাধ্যমে তা উদঘাটন করতে বলা হয় কমিটিকে।
অপহৃত ব্যক্তিদের জীবিত উদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো অবহেলা বা গাফিলতি ছিল কি না- কমিটিকে তাও খতিয়ে দেখতে বলে আদালত।