বাংলাদেশের চলমান সঙ্কট অবসানে তিনটি উপায় বাতলেছেন বিকল্প ধারা সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
Published : 03 Feb 2015, 04:52 PM
জনগণকে স্বস্তি দিতে বড় দুই রাজনৈতিক দল এই পরামর্শ শুনবে আশা রেখে প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেছেন, তা না হলে অন্য পথ দেখতে হবে।
মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি জোটের অবরোধ চালিয়ে যাওয়া এবং সেই দাবি না মানতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনড় অবস্থানের মধ্যে মঙ্গলবার এক গোলটেবিলে নিজের প্রস্তাব তুলে ধরেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।
গোলটেবিলে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর পাশে বসা সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের এক নেতা বলেন, “স্যার, আপনি তো দেশের স্বনামধন্য চিকিৎসক। সমস্যায় ভুগছি আমরা সবাই। আপনি প্রেসক্রিপশন দেন।”
এই চিকিৎসক-রাজনীতিক তখন স্মিত হেসে “হ্যাঁ, প্রেসক্রিপশন আছে, অবশ্যই আছে,” বলে তিনটি প্রস্তাব দেন।
প্রথম- প্রধানমন্ত্রীকে উদার হৃদয়ের অধিকারী হতে হবে। শুধু দেশের মানচিত্রকে নয়, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে। সবাইকে কাছে ডাকতে হবে।
দ্বিতীয়- দেশে রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে, বন্দুক দিয়ে নয়, সমাধান হবে সংলাপে। সমাধান একটাই সংলাপ। বিরোধী দল সংলাপের দাবিতে তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাবে, কিন্তু সংলাপের আহ্বান করতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে।
“আপনি (প্রধানমন্ত্রী) আহ্বান জানালে সাত দিনের জন্য বিরোধী দলকে কর্মসূচি স্থগিত রাখতে হবে। কিন্তু তার বেশি নয়। এর মধ্যে সংলাপ সফল না হলে কর্মসূচি পুনরায় শুরু হবে,” বলেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
তৃতীয়- আহ্বান করতে হবে সবাইকে। কিন্তু তাদের মতামতই গুরুত্ব পাবে, যাদের জনগণের মধ্যে অন্তত ৩০ শতাংশ ভোট রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বিকল্প ধারা সভাপতি বলেন, “আজকে তিনটি ট্যাবলেট দিয়ে দিলাম। এতে কাজ না হলে হয়ত ইনজেকশনের ব্যবস্থা করতে হতে পারে। আমি বয়োবৃদ্ধ, ৮৩ বছর বয়স হয়েছে। অনেক রাজনীতি দেখেছি, অনেক সংগ্রাম করেছি। আমার কথা গ্রহণ করুন।”
জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি সমর্থিত বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত গোলটেবিলে বক্তব্য রাখেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
বিএনপির মনোনয়নে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর দলটির অনাস্থায় পদত্যাগ করে বিকল্প ধারা নামে আলাদা দল গঠন করেন তিনি। ২০০৭ সালের বাতিল হওয়া নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের মহাজোটে যোগ দিলেও এখন বিএনপির সঙ্গেই দলটির ঘনিষ্ঠতা।
বর্তমান পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক সঙ্কট হিসেবে মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, “দিস ইজ এ ন্যাশনাল ক্রাইসিস। সঙ্কটকে সঙ্কট হিসেবে দেখতে হবে। পুলিশ দিয়ে, বিজিবি দিয়ে, র্যাব দিয়ে একে দমন করা যাবে না।”
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাকে সঙ্কট সমাধানে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান বিকল্প ধারা সভাপতি, যার বাবা কফিল উদ্দিন চৌধুরী ছিলেন আওয়ামী লীগের একজন নেতা।
“আমি জানি, আপনি একজন সাহসী নারী। সংলাপ আহ্বান করার মতো সাহস আপনার আছে। আপনার পিতা একজন সাহসী ও হৃদয়বান মানুষ ছিলেন। সেই সাহস এবং সহৃদয়তা উত্তরাধিকারসূত্রে আপনি আপনার পিতার কাছ থেকে লাভ করেছেন।”
“আমি এ-ও জানি, আপনি দ্রুত এই পরিস্থিতির সমাধান চান। কিন্তু আপনার আশেপাশে যারা রয়েছে, তারা আপনাকে বাধা দিচ্ছে।”
“আমি শুধু এই টুকু বলব, আমরা সবাই এ দেশের সন্তান। সবাই মিলে মিশেই এই দেশকে গড়ে তুলতে চাই। আপনি প্রধানমন্ত্রী, আপনি দেশকে রক্ষা করুন। দেশের মানুষ আপনার দিকে তাকিয়ে আছে,” বলেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী।