হরতাল-অবরোধের মধ্যে নাশকতা সৃষ্টিকারীদের ধরিয়ে দিলে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানালেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।
Published : 21 Jan 2015, 12:48 PM
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল পুরস্কার দেওয়ার উদ্যোগের কথা জানানোর পরদিন সরকারের তরফ থেকে এ ঘোষণা এল।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ৫ জানুয়ারি লাগাতার অবরোধ ডাকার পর থেকেই সারা দেশে বোমাবাজি ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। গত ১৫ দিনে নাশকতা ও সহিংসতায় প্রায় ৩০ জন নিহত হয়েছেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
বুধবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে আমির হোসেন আমু বলেন, “জনসাধারণ এই দুস্কৃতীদের ধরিয়ে দিলে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।”
মন্ত্রী জানান, গত ১৫ দিনে সারা দেশে সাত হাজার ১৫ জন বিএনপি-জামাতকর্মীকে নাশকতার ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
“তাদের সবাইকে ধরা হয়েছে নাশকতার ঘটনাস্থল থেকে। অথচ কোনো কোনো নেতা-নেত্রী বলে যান, তাদের লোক এই নাশকতা করছে না।”
আমু জানান, মঙ্গলবার রাতেও ঢাকা মহানগর থেকে ১৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যার মধ্যে ১৩৪ জন বিএনপির, বাকিরা জামায়াত-শিবির কর্মী।
“এতেই প্রমাণ হয় খালেদা জিয়া মিথ্যা বলছেন।... পেট্রোল বোমা মেরে দাবি আদায় করা যায় না।”
হরতাল-অবরোধে যারা নাশকতা করছে তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
নাশকতার শিকার নিরীহ মানুষের চিত্র তুলে ধরে বুধবার জাতীয় সংসদে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, “কোনও জাতীয় ইস্যু নয়। ব্যক্তিগত কারণে উনি (খালেদা জিয়া) খুন করে যাচ্ছেন। খুনির বিচার যা হওয়া উচিত, সেই বিচার হবে।”
নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কারের সুনির্দিষ্ট অংক ঘোষণার জন্য ওই সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে বলেন তিনি।
মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর আওয়ামী লীগ নেতা আমু বলেন, “আমরা যে কারণে উদ্বিগ্ন সেটা হচ্ছে আমাদের দেশে আদৌ রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না। এটা বাংলাদেশে সব শ্রেণির মানুষের কাছে আমার প্রশ্ন।
“তার কারণ, আমরা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখছি না। ১৯৭২ সালে ব্যাংক ডাকাতি করে সর্বহারা স্লোগান দিত। কিন্তু আজ বাসে বোমা মেরে মানুষ হত্যা করে নিরবে নিভৃতে চলে যাচ্ছে। কোনও স্লোগানও দেওয়া হচ্ছে না।”
বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার ডাকা অবরোধে জনজীবনে প্রভাব পড়েনি দাবি করে আমু ২০০৬ সালের শেষ দিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ডাকা অবরোধের কথা মনে করিয়ে দেন।
“ইয়াজ উদ্দিনের বঙ্গভবন থেকে শুরু করে প্রতিটি জেলায় উপজেলায় আনাচে কানাচে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল। এটাকে বলে অবরোধ।”
তিনি বলেন, ‘পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করে’ যারা অবরোধ দাবি করতে চায়, তারা আসলে এ দেশ থেকে রাজনীতিকেই ‘বিতাড়িত’ করতে চায়।
“দেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে, রাজনীতি পুনরুদ্ধারের স্বার্থে আইন শৃঙ্খলা কমিটির সবাই এ অপশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে একমত হয়েছেন, যাতে আগামীতে রাজনীতি যেন সন্ত্রাসী কার্যকলাপে পরিণত না হয়। আজ যদি তারা প্রাধান্য পায়, তাহলে ভবিষ্যতে কেউ রাজনীতি করবে না, সংগঠন করবে না”, বলেন মন্ত্রী।
তিনি জানান, দেশে ‘স্বাভাবিক অবস্থা’ ফিরিয়ে আনতে জেলা-উপজেলায় গঠিত আইন-শৃঙ্খলা কমিটিতে আরও কিছু ‘এলিট’ ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
সংবাদকর্মীদের উদ্দেশে আমু প্রশ্ন রাখেন, “আপনারা এদেশের সন্তান। প্রতিদিন ৩৫ হাজার গাড়ি যাতায়াত করে। কোথায় একটি গাড়িতে আগুন দেয় সেই খবর দুই/তিন দিন ধরে দেখান। অথচ গাড়ি যাতায়াতের খবর একটু দেখিয়ে আর দেখান না। এটা কেন? এটা কী সন্ত্রাসীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে না?”
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান ও তাদের প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।