আন্দোলনের নামে নাশকতা দমনে কঠোর হবেন বলে বিরোধী জোটকে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 17 Jan 2015, 03:58 PM
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের অবরোধের মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বাস পুড়িয়ে ও পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ পোড়ানোর ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, “এটা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।”
অগ্নিদগ্ধ এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর করুণ চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “এই পেট্রোল বোমা বানায় কারা, মারে কারা? যারা মারবে তাদের ধরে ধরে হাতটা পুড়িয়ে দিয়ে পোড়ার যন্ত্রণাটা বোধহয় তাদের বুঝতে দেওয়া উচিত।”
শনিবার সেগুন বাগিচায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) বহুতল ভবনের ভিত্তিস্থাপন অনুষ্ঠানে একথা বলার আগে সকালে হাসপাতালে গিয়ে বোমায় আহত এক ছাত্রকে দেখে আসেন তিনি।
এনএসআইয়ের অনুষ্ঠানে কঠোর হওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বলেন, “হয়ত একথা শুনে আমাদের অনেক আঁতেলরা অনেক সমালোচনা করবেন। কিন্তু একবার যান না বার্ন ইউনিটে, এবার দেখে আসুক।”
নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের গত ১২ দিনের অবরোধের মধ্যে গাড়ি পোড়ানো ও বোমাবাজিতে ১৫ জনের বেশি অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন, আহত হয়েছেন অনেকে।
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় বিএনপি দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “তার জন্য মানুষকে পুড়িয়ে মারতে হবে?”
খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “যখনই নিউজ বেরিয়েছে, বাংলাদেশ সকল ক্ষেত্রে পাকিস্তান থেকে এগিয়ে আছে। এই নিউজ দেখার পরই মনে হয়, বিএনপির নেত্রীর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কারণ উনার হৃদয়ে পেয়ারে পাকিস্তান। যখন এই নিউজ হয়েছে তখন উনার আন্দোলনে নামা।”
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে বিএনপির পক্ষ থেকে বিবৃতি প্রকাশে বাংলাদেশের মাথা হেঁট হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হাসিনা।
ভারতের বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ও খালেদা জিয়ার ফোনালাপ বিতর্কের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সারাজীবন শুনলাম বিএনপি-জামাত ভারতবিরোধী। আর ভারতের বিজেপি নেতার সঙ্গে ফোনে কথা, সেখানেও দুই নম্বরি। ফোন নিয়েও এই চালবাজি দরকারটা ছিল কি?”
গত এক বছর দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি থাকলেও হঠাৎ করে অবরোধ কর্মসূচির কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী।
“যদি এমন হত, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আমরা রাষ্ট্র চালাতে ব্যর্থ হয়েছি, অর্থনীতির উন্নতি হয় নাই, মানুষের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে নাই অথবা দেশে জঙ্গি তৎপরতা বা সন্ত্রাসী তৎপরতা হচ্ছে- তাহলে একটা কথা ছিল।”
গত ছয় বছরে দেশের বিভিন্ন খাতের উন্নতির চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই ছয় বছরে কোথাও যদি দেশ একটু পিছিয়ে যেত তাহলে এদের আন্দোলনের কোনো একটা যৌক্তিকতা থাকত। মানুষ যেখানে শান্তিতে আছে, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে, তাহলে আমাদের দোষটা কোথায়?
“আমরা সেটাই বুঝে উঠতে পারলাম না। কেন আন্দোলনের নামে এভাবে মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে? এটা কোন ধরনের আন্দোলন?”
ঈদে মিলাদুন্নবী ও বিশ্ব ইজতেমার মধ্যে হরতাল-অবরোধের সমালোচনাও করেন শেখ হাসিনা।
জঙ্গি, সন্ত্রাসী এবং যানবাহনে আগুল লাগিয়ে ও পেট্রোল বোমা হামলা করে জানমালের ক্ষতি যারা করছে, তাদেরকে কঠোর হাতে হাতে দমন করতে নির্দেশ দেন তিনি।
বাংলাদেশকে যারা ‘অকার্যর রাষ্ট্র’ বানাতে চাচ্ছে তাদের বিষয়ে সজাগ থাকতেও গোয়েন্দাদের বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশে সরকার প্রধানদের মধ্যে শেখ হাসিনাই প্রথম এনএসআই দপ্তরে এলেন। তিনি সংস্থাটির নিজস্ব ২০ তলা ভবনের ভিত্তিস্থাপন করে তাদের কর্মতৎপরতার প্রশংসাও করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সিদ্ধান্ত যে, আমাদের দেশের মাটিকে আমরা কোনো ধরনের জঙ্গি তৎপরতা চালাতে দেব না বা আমাদের দেশের মাটি ব্যবহার করে প্রতিবেশীর দেশে করবে, সেটাও আমরা কখনোই হতে দেব না।
পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফেরানোর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “তারপরেও আমরা দেখি, মহল বিশেষ দেশটাকে নিয়ে নানান ধরনের খেলায় মত্ত। তারা কারা? কারা চায় বাংলাদেশকে একটা অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে।
“তারা চায় এই বাংলার মাটিতে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ বেড়ে উঠুক। এই বিষয়টা সম্পর্কে আপনাদের অত্যন্ত সজাগ থাকতে হবে।”
বাংলাদেশের মাটিতে কোনো ধরনের জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, কোনো ধরনের অপকর্ম বরদাশত করা হবে না জানিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাকে আরও সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে বলেন সরকার প্রধান।