বছরজুড়ে রাজধানীর শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে চোরাচালানের সময় ধরা পড়েছে এক হাজার কেজিরও বেশি সোনা।
Published : 01 Jan 2015, 12:54 AM
পাশাপাশি সোনা চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ বিমানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বছর জুড়েই শতাধিক চোরাকারবারী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, বিমানবন্দরের শুল্ক গোয়েন্দা ও শুল্ক বিভাগের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে।
শাহ জালাল বিমানবন্দরে কর্মরত বিমানবন্দর শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ এবং শুল্ক বিভাগ বলছে, ২০১৪ সালে তারা প্রায় এক হাজার কেজি সোনা আটক করেছে, যার বাজারমূল্য ছিল আনুমানিক ৫৭৩ কোটি টাকার কাছাকাছি।
বিমানবন্দর শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের মহাপরিচালক মঈনুল খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত এক বছরে শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৬৪১ কেজি ৯০৮ গ্রাম সোনা উদ্ধার করা হয়েছে, যার আনুমানিক দাম ৩০১ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
“এই সোনা উদ্ধারের ঘটনায় ৯৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
শুল্ক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার জিয়াউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক বছরে ৩৭৬ কেজি ২১২ গ্রাম সোনা উদ্ধার হয়েছে, যার দাম আনুমানিক ২৭১ কোটি ৮৯ লাখ ৪২ হাজার ৩৭৩ টাকা।”
এই সময় ৮১ জনকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বছরের শুরু থেকেই প্রায় নিয়মিতভাবে দুই বিমানবন্দরে চোরাচালানকৃত সোনা পাওয়া যেতে থাকে। প্রায় প্রতিদিনের এই সোনা উদ্ধারের ঘটনায় সোশাল মিডিয়ায় ‘বিমানবন্দরে সোনা ফলছে’ বলে কেউ কেউ রসিকতা করে প্রতিক্রিয়াও জানায়।
সাম্প্রতিক সময়ে চোরাই সোনার সবচেয়ে বড় চালানটি আটক হয় গত বছরের ২৪ জুলাই। ওই চালানে ১২৪ কেজি ওজনের ১ হাজার ৬৫টি সোনার বার ধরা পড়ে, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫৪ কোটি টাকা।
এছাড়া গত ২৬ এপ্রিল দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজে ১০৬ কেজি সোনা পান শাহ জালাল বিমানবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তারা।
শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের দায়িত্বে থাকা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কারো সহযোগিতা ছাড়া এভাবে নিয়মিত সোনা চোরাচালন যে সম্ভব নয়- সে সন্দেহ আগে থেকেই ছিল।
যার ভিত্তিতেই অনুসন্ধান চলে এবং এক পর্যায়ে ১৯ নভেম্বর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এক উপমহাব্যবস্থাপকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
এরা হলেন- বাংলাদেশ বিমানের উপ মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এমদাদ হোসেন, প্ল্যানিং অ্যান্ড শিডিউলিং প্রধান ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মদ আসলাম শহীদ, শিডিউল ম্যানেজার তোজাম্মেল হোসেন, উত্তরার ফারহান মানি এক্সচেঞ্জের মালিক হারুন অর রশিদ এবং বিমানের ঠিকাদার মাহমুদুল হক পলাশ।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম বলেন, “সোনা চোরাচালানে জড়িত বিমানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। অপরাধ করলে কেউ পার পাবে না এতে তা প্রমাণ হয়েছে।”
সোনা চোরাচালানের যেসব বিমান কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তারা মূলত বিমানবন্দরের টার্মিনাল ও হ্যাংগার দিয়ে সোনা চোরাচালান করতেন। তাদের গ্রেপ্তারের পর এইসব এলাকায় সোনার অবৈধ চালান পাচার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
তবে বিকল্প হিসেবে অন্যপথ ব্যবহার শুরু করে চোরাকারবারিরা। সম্প্রতি শাহ জালাল বিমানবন্দরের কার্গো এলাকা থেকে ৪৩ কেজি সোনার একটি চালান আটক হয়। এরপরেই সেদিকেও কড়াকড়ি আরোপ করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা শেখ নাজমুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিমাবন্দরের টার্মিনাল ও হ্যাংগার এলাকা দিয়ে সোনা পাচারকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে বিভিন্ন ভূয়া ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে কার্গো দিয়ে সোনা পাচারের চেষ্টা করছে চোরাকারবারিরা।”
নাজমুল আলম জানান, কার্গো এলাকা দিয়ে পাচারের উদ্দেশে আনা ওই সোনাগুলো গার্মেন্টস এক্সেসরিজের আড়ালে লুকিয়ে এদেশে আনা হয় যার আনুমানিক বাজারমূল্য ছিল ২১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
হযরত শাহজালালে ১২৪ কেজি সোনার চালান আটকের দেড় বছর পর গত ৬ ডিসেম্বর বিমানের ১০ কর্মীসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করে বিমানবন্দর শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ।
গত ২৬ এপ্রিল দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজে ১০৬ কেজি সোনাও পান তারা।
এদিকে সোনার এইসব চালান আটকের পর শাহজালালসহ দেশের চারটি বিমানবন্দরে চোরাচালান রোধে ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকার।
বিমানবন্দরের শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের মহাপরিচালক মঈনুল খান বলেন, “গত বছর ছিল সোনার চোরাচালান, পাচারকারীদের জন্য অত্যন্ত খারাপ বছর।
“শতাধিক ব্যক্তিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকেরা সোনার চালানসহ গ্রেপ্তার করেছে। আগামীতেও সোনা চোরাচালানে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।”