লতিফ সিদ্দিকীকে বাদ দেওয়ার ‘প্রস্তুতি’ সারা

হজ নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের জন্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের প্রশাসনিক প্রস্তুতি সম্পন্ন বলে জানানো হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2014, 07:19 AM
Updated : 12 Oct 2014, 10:21 AM

ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীরও সদস্য।

প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাকে দল থেকে বাদ দেওয়ার কথাও আগেই বলেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিউ ইয়র্ক থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী ওই সংবাদ সম্মেলনেই বলেছিলেন, তার মন্ত্রিসভার এই সদস্যের বক্তব্যের সঙ্গে সরকার একমত নয়। রাষ্ট্রপতি দেশে ফিরলে তাকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হবে।

হজ পালনের পর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শুক্রবার দেশে ফিরেছেন। মন্ত্রীকে অব্যাহতি তার মাধ্যমেই হয়। আর তার প্রজ্ঞাপন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এই বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞাও ছিলেন হজে।

হজ থেকে ফেরা মন্ত্রিপরিষদ সচিব শনিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এবিষয়ে (লতিফ সিদ্দিকীর অপসারণ) একটি ফাইল আসবে। আমরা একটি সামারি তৈরি করে তা রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পাঠাব। রাষ্ট্রপতি তাতে সাইন করার পর প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।”

কবে নাগাদ প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে- তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এর চেয়ে অনেক বড় বড় কাজ আমরা কম সময়ে করেছি। রাষ্ট্রপতি সাইন করলেই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।”

আওয়ামী লীগে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকও রোববার বসছে। এই বৈঠকেও দলের বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।

প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সফরে থাকার সময় গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী হজ নিয়ে মন্তব্য করেন। এরপর থেকে তা নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।

লতিফ সিদ্দিকী সেদিন বলেছিলেন, “আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী।”

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, বিপুল সংখ্যক মানুষ হজে যাওয়ায় দেশের অর্থ আর শ্রম শক্তির ‘অপচয়’ হয়।

তার ওই বক্তব্যের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে কয়েকটি ইসলামী দল আন্দোলনের হুমকি দেয়। তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়ার পাশাপাশি গ্রেপ্তারের দাবিও তোলে বিএনপি।  

লতিফ সিদ্দিকী ঈদ করার পর এখনও নিউ ইয়র্কে রয়েছেন। এর মধ্যেই ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ দেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় অন্তত দুই ডজন মামলা হয়েছে।

এরপর দেশে ফিরে গত ৩ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, লতিফ সিদ্দিকী আর মন্ত্রিসভায় থাকবেন না।

প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি নির্দেশ দিলে রিজাইন (পদত্যাগ) করতে হবে। নইলে বিদায় করে দিতে হবে। কিন্তু বিদায় দিতে হলে রাষ্ট্রপতির কাছে ফাইল পাঠাতে হবে। রাষ্ট্রপতি হজে গেছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিবও হজে গেছেন। আমি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে ফাইল তৈরি করে রাখতে বলেছি, অফিস খুললে ফাইল চলে আসবে।”

দল থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী  বলেন, “বাদ দিতে হলে তা নিয়ে দলে আলোচনা করতে হবে। অভিযোগ তুলে ধরে আলোচনা করতে হবে। ওয়ার্কিং কমিটির সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

“ওয়ার্কিং কমিটি যদি মনে করে তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া ভাল- তাহলে অব্যাহতি দিয়ে দেবে।”

ফাইল ছবি

টাঙ্গাইলে প্রভাবশালী সিদ্দিকীদের জ্যেষ্ঠ ভাই ৭১ বছর বয়সী লতিফ সিদ্দিকী রাজনীতিতে স্পষ্টভাষী হিসেবে যেমন পরিচিত, তেমনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তীর্যক বক্তব্য দিয়ে এর আগেও আলোচনায় এসেছেন তিনি।

নিজের ভাই আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর ‘হঠাৎ জামায়াত ঘনিষ্ঠতাকে’ যেমন তিনি ‘বীর উত্তমের রাজাকার হওয়ার শখ’ বলে সমালোচনা করেছেন, তেমনি বাড়িতে ডেকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এক প্রকৌশলীকে পেটানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতি) আসন থেকে পাঁচবার সংসদে যাওয়া লতিফ সিদ্দিকী গত মহাজোট সরকারের পাট ও বস্ত্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। শেখ হাসিনা টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর চলতি বছরের শুরুতে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি।

তবে এই লতিফ সিদ্দিকীই ১৯৮০ এর দশকে প্রবাসে থেকে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সভাপতি হওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন, আবার ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর বঙ্গবন্ধুকন্যার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেন।

ষাটের দশকে বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামের দিনগুলোতে একাধিকবার কারাগারে যেতে হয় বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য লতিফ সিদ্দিকীকে।

ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে ১৯৬৪-৬৫ সালে করটিয়া সাদত কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ৬৬ ছয় দফা ও ৬৯ এর গণঅভ্যূত্থানে সক্রিয় এই নেতা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে সংগঠক হিসাবে ভূমিকা রাখেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক শাসনামলে মুক্তিযোদ্ধা লতিফ সিদ্দিকীকে প্রায় ছয় বছর কারাগারে কাটাতে হয়। এরশাদের আমলে স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী নারী সাংসদ হওয়ার পর মুক্তি পান তিনি।