লতিফ মন্ত্রিসভায় থাকবেন না: প্রধানমন্ত্রী

সরকারের কাছে ‘অবিবেচকের মতো’ কথা গ্রহণযোগ্য হবে না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রীসভায় থাকবেন না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2014, 11:24 AM
Updated : 3 Oct 2014, 09:52 PM

হজ নিয়ে লতিফ সিদ্দিকীর মন্তব্যে তোলপাড়ের মধ্যেই শুক্রবার বিকালে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যেটা আমি বলেছি সেটা করবই। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাকে মন্ত্রিসভায় রাখব না। সে থাকবে না।”

কবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন মন্ত্রীকে বিদায় দিতে হলে ‘কিছু নিয়ম’ মানতে হবে।

“আমি নির্দেশ দিলে রিজাইন (পদত্যাগ) করতে হবে। নইলে বিদায় করে দিতে হবে। কিন্তু বিদায় দিতে হলে রাষ্ট্রপতির কাছে ফাইল পাঠাতে হবে। রাষ্ট্রপতি হজে গেছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিবও হজে গেছেন। আমি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে ফাইল তৈরি করে রাখতে বলেছি, অফিস খুললে ফাইল চলে আসবে।”

রাষ্ট্রপতি ফিরলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব তার কাছে ফাইল নিয়ে যাবেন এবং তাতে রাষ্ট্রপতি সই করলেই লতিফের ‘বিদায়’ হবে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকীর ওই বক্তব্য নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীর দায়িত্ব চালিয়ে আসা এই আওয়ামী লীগ নেতা সেদিন বলেন, “আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী।”

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, বিপুল সংখ্যক মানুষ হজে যাওয়ায় দেশের অর্থ আর শ্রম শক্তির ‘অপচয়’ হয়। উৎপাদনে প্রভাব পড়ে।  

এরপর ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ দেয়ার অভিযোগে লতিফের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় অন্তত দুই ডজন মামলা হয়। বিএনপি এবং কয়েকটি ইসলামী সংগঠন তাকে গ্রেপ্তারেরও দাবি জানায়।

এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী লতিফকে মন্ত্রিসভা ও দল থেকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শুক্রবার এক বিবৃতিতে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও একই কথা বলেন। 

তারপরও সরকার প্রধানের সিদ্ধান্ত তার মুখ থেকেই জানতে সংবাদ সম্মেলনে সবার আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল লতিফ প্রসঙ্গ।  

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। গণভবনের ব্যাঙ্কোয়েট হলে সাংবাদিক ও দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব্য শুরু করেন হজ, ঈদ ও দুর্গাপুজার শুভেচ্ছা জানিয়ে।

তিনি বলেন, “সবাইকে হজের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। সবাই যাতে সহি সালামতে দেশে ফিরে আসেন সেই কামনা করছি।… সবাইকে ঈদের আগাম মুবারকবাদ জানাচ্ছি।”

প্রায় ২০ মিনিটের লিখিত বক্তব্য শেষ হওয়ার পর প্রশ্নোত্তরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেন, সবাই কি নিয়ে প্রশ্ন করতে চান তা তিনি জানেন।

প্রায় ৪০ মিনিটের এই প্রশ্নোত্তর পর্বের প্রথম প্রশ্নটি লতিফকে নিয়েই আসে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কেউ যদি অবিবেচকের মত কোন কথা বলেন সেটা নিশ্চয়ই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না। কাজেই তার বিরুদ্ধে যা ব্যবস্থা নেয়ার তা নেব। ইতোমধ্যে সেটা কিন্তু আমরা করে দিয়েছি।”

লতিফ সিদ্দিকীর মন্তব্যে সরকার বেকায়দায় পড়েছে কি না -এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, “লতিফ সিদ্দিকী যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে সরকার বেকায়দায় পড়েছে বলে আমি মনে করি না, উনি নিজেই বেকায়দায় পড়েছেন; এটা হলো বাস্তব কথা। আর এখানে সরকারের কি দোষ? সরকার তো বলেনি। উনি যেটা বলেছেন তার খেসারত উনাকেই দিতে হবে।”

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি নিজে ধর্মে বিশ্বাস করেন এবং তার দলের কেউ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কথা বলবে বা সে ধরনের কাজ করবে- এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

“সে কারণেই আমি আদেশ দিয়েছি। এখন এটা কার‌্যকর হবে।”  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি কেবল প্লেনে উঠেছি, ওখানে বসেই শুনলাম এবং লন্ডনে এসে সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। জানিয়ে দিয়েছি যে, এর ব্যবস্থা আমাদের নিতেই হবে। আমি কিন্তু এতটুকু দেরি করিনি সিদ্ধান্ত নিতে।”

লতিফের বক্তব্য নিয়ে ‘রাজনৈতিক ইস্যু’ করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা ইস্যু করার বিষয় নয়। মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে যে কথা বলেছেন তা কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়।”  

লতিফের ওই বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

ওই ভিডিওতে তাকে বলতে দেখা যায়, “এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার (জনশক্তি) নষ্ট হয়। এই হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গেছেন। এদের কোনো কাজ নাই। কোনো প্রডাকশন নাই, শুধু ডিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা বিদেশে দিয়ে আসছে।”

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির এই সদস্যকে দল থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বাদ দিতে হলে তা নিয়ে দলে আলোচনা করতে হবে। অভিযোগ তুলে ধরে আলোচনা করতে হবে। ওয়ার্কিং কমিটির সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কে কি বলল না বলল তা বড় কথা নয়, আমার জনগণের উপর ভরসা আছে। সাধারণ মানুষ ভুল করেন না..., তারা আমার মূল ভরসার জায়গা। আওয়ামী লীগ ও সরকার বিপদে নেই। উনি (লতিফ সিদ্দিকী) নিজেই বিপদে আছেন।”

প্রধানমন্ত্রীর এই সংবাদ সম্মেলন জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।