চট্টগ্রামের ইতিহাসে স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ধসে একদিনে ১২৭ জনের প্রাণহানির সাতবছর পূরণ হতে যাচ্ছে বুধবার।
Published : 10 Jun 2014, 10:23 PM
২০০৭ সালের ১১জুন মধ্যরাত থেকে প্রবল বর্ষণের পর একযোগে ধসে পড়ে নগরীর বিভিন্ন স্থানের পাহাড়। নিহত হন ১২৭ জন।
গণপ্রাণহানির ওই ঘটনার পরই পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসরতদের পুনর্বাসন ও সরিয়ে নেয়ার কথা নানা মহল থেকে বলা হলেও কেবল বর্ষা মৌসুমেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু তোড়জোড় দেখা যায়।
বর্ষা পেরোলেই আবার অস্বচছল পরিবারের সদস্যরা বসবাস শুরু করে পাহাড়ের পাদদেশে। এতে প্রতিবছরই পাহাড় ধসে মৃত্যুর ঘটনা থেমে নেই।
২০০৭ সালের ১১ জুন নগরীর কুসুমবাগ, কাইচ্যাঘোনা, সেনানিবাসের লেডিস ক্লাব সংলগ্ন লেবুবাগান, বায়েজিদ বোস্তামী, লালখান বাজারের মতিঝর্ণা পাহাপড়সহ সাতটি স্থানে পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়ে মারা যায় শিশু-নারী ও বৃদ্ধসহ সব বয়সের ১২৭ জন।
ব্যাপক প্রাণহানির পাশাপাশি বৃষ্টিতে নগরীর সব এলাকা কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। পাহাড় ধস ও মানবিক বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়।
কমিটি বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জানায়, ওই দিনের বিপর্যয় প্রাকৃতিক নয়, মানবসৃষ্ট। ওই গণমৃত্যুর জন্য পাহাড় দখলকারী প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরাই দায়ী। একইসাথে পাহাড় ধসের জন্য নির্বিচারে পাহাড় কাটাকেও দায়ী করা হয়।
২০১২ সালের ২৬ জুন নগরীর আকবর শাহ, উত্তর পাহাড়তলীর বিশ্বকলোনি, মক্কীঘোনা ও বাঁশখালীতে পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে মারা যায় ২৩ জন।
২০১১ সালের ১ জুলাই টাইগার পাস এলাকার বাটালি হিলের ঢালে পাহাড় ও প্রতিরক্ষা দেয়াল ধসে মারা যায় একই পরিবারের পাঁচজনসহ ১৭ জন।
২০০৮ সালের ১৮ অগাস্ট নগরীর লালখান বাজার মতিঝর্ণা এলাকায় পাহাড় ধসে মারা যায় চারটি পরিবারের ১২ জন। সর্বশেষ এ বছরের ২০ মে আনোয়ারায় পাহাড় কাটার সময় মাটি চাপায় নিহত হয়েছে এক শ্রমিক।
প্রতিবার পাহাড়ধসে মানবিক বিপর্যযের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি স্থাপনকারীদের উচ্ছেদ ও অন্যত্র সরিয়ে দেয়ার কাজ চললেও পরবর্তীতে গিয়ে তা স্থিমিত হয়ে যায়।
এবারও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামে ৩০ পাহাড় নির্ধারণ করে অধিক ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসতি স্থাপনকারী ৬৬৬ পরিবারকে স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত করা হলেও তাদের স্থায়ী পুর্নবাসনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
এদিকে, পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো নগরীর পাহাড়গুলো সুরক্ষায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে।
১১ জুন পাহাড় ধসে মানবিক বিপর্যয়ের দিনকে ‘পাহাড় রক্ষা দিবস’ হিসাবে পালনের দাবি জানিয়ে আসছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন পিপলস ভয়েসের আহ্বায়ক শরীফ চৌহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাহাড় কাটা এবং অবৈধ বসতিকারীদের ঝুঁকিপুর্ণ বসতি স্থাপনকারীদের সচেতনতা তৈরি করতেই দিবস ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন করছি।
“দিবস ঘোষণার দাবি আন্দোলনের একটি প্রতীকী দাবি। পাহাড় দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা না নিলে প্রাণহানি থামানো কখনোই সম্ভব হবে না।”
পরিবেশবাদী সংগঠন পিপলস ভয়েস বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে ২০০৭ সালের ১১ জুনসহ এযাবৎকালে পাহাড় ও ভূমি ধসে নিহতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও নাগরিক স্মরণসভা আয়োজন করেছে।