নারায়ণগঞ্জে সাত খুন তদন্তে গঠিত কমিটির গণশুনানির প্রথম দিনে সাড়া মেলেনি। এদিন সাক্ষ্য দিতে সাতজন উপস্থিত হলেও দিতে পেরেছেন ছয়জন।
Published : 12 May 2014, 11:22 AM
নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কায় অনেকে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মুখ খুলতে তদন্ত কমিটির সামনে আসছে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
অপহরণের তিন দিন বাদে গত ৩০ এপ্রিল কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনের লাশ উদ্ধার হওয়ার পর এই হত্যাকাণ্ডে র্যাবের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠলে তদন্ত কমিটি গঠনের আদেশ দেয় হাই কোর্ট।
হাই কোর্টের আদেশে জনপ্রশাসনের অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান আলী মোল্লার নেতৃত্বে গঠিত সাত সদস্যের কমিটি নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শনিবার কথা বলে।
এরপর সোমবার গণশুনানিতে আসেন তারা। বৃহস্পতিবারও গণশুনানির দিন ঠিক রয়েছে।
সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন সার্কিট হাউজে প্রথম দিনের শুনানিতে সাক্ষ্য দেন শহরের মাসদাইর এলাকার জালালউদ্দিন, সিদ্ধিরগঞ্জ আজিবপুর এলাকার নুর হোসেন মুন্না, আবুল কাশেম, সিদ্ধিরগঞ্জের হাটখোলা এলাকার ঠিকাদার শাহীন আজাদ, অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত আব্দুল্লাহ রাসেল, অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান।
তারা সবাই এই হত্যাকাণ্ডের জন্য র্যাব-১১ সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ কাউন্সিলর নূর হোসেন ও তার সমর্থকদের দায়ী করেন। পাশাপাশি প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা, নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা।
সিদ্ধিরগঞ্জের বাসিন্দা শাহীন আজাদ সাক্ষ্য দিয়ে বেরিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “নূর হোসেন শামীম ওসমানের লোক। সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে নূর হোসেন। নূর হোসেনই র্যাবকে টাকা দিয়ে নজরুলসহ ৭ জনকে হত্যা করেছে।”
দলের নেতা নূর হোসেনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ইতোপূর্বে বলেছেন, তিনি তাকে ‘নিজের লোক’ মনে করলেও পরে তার ‘ভুল’ ভেঙেছে।
আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহিত পাওয়া নূর হোসেন ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে র্যাবের ধারণা। শাহীন বলেন, নূর হোসেনকে পাওয়া না গেলে ওই তিন র্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হলেও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত হবে।
অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ রাসেল সাংবাদিকদের বলেন, “নূর হোসেনের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনের গভীর সম্পর্ক ছিল। এই কারণে টাকার বিনিময়ে প্রশাসন নূর হোসেন ও তার সহযোগীদেরকে ১১টি অস্ত্রের লাইসেন্স দিয়েছে।”
‘আমরা নারায়ণগঞ্জ’ এর নির্বাহী সভাপতি এবং হাই কোর্টে এনিয়ে রিট আবেদনকারী অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল গণশুনানিতে উপস্থিত হলেও তার সাক্ষ্য নেয়া হয়নি।
“সোয়া ১০টা থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত তারা আমাকে অপেক্ষা করিয়ে রাখে। কয়েকবার অনুরোধ করা হলেও তারা সাক্ষ্য নেয়নি।”
গণশুনানির স্থান নিয়ে ইসমাইল বলেন, “গণশুনানির স্থান হতে হবে জনগণের সহজ চলাচলের স্থান। আবার এজাহারভুক্ত কোনো আসামিকে ও র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এই কারণে ভয়ে মানুষ গণশুনানিতে অংশ নেয়নি।”
নিহত কাউন্সিলর নজরুলের ছোট ভাই আব্দুস সালামও মনে করছেন, নিরাপত্তার কারণে গণশুনানিতে অনেকে উপস্থিত হননি। তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় গণশুনানি নেয়ার আহ্বান জানান।
গণশুনানিতে খুনিদের পক্ষের কেউ উপস্থিত হয়ে তদন্ত কমিটিকে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন।
নজরুলের সঙ্গে নিহত আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারের হত্যার বিচার দাবিতে জেলা আইনজীবী সমিতি ধারাবাহিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।
সোমবার সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা আদালত বর্জন করে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে আইনজীবীরা।
নূর হোসেনের সহযোগী রতন গ্রেপ্তার
হত্যামামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম রতনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার বিকালে শিমরাইল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ট্রাক শ্রমিক নেতা নুর হোসেনের সঙ্গে রতন কাচপুর-শিমরাইল এলাকায় চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ করত বলে অভিযোগ রয়েছে।
রতন বিএনপি সরকার আমলে সিদ্ধিরগঞ্জ পরিবহন শ্রমিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনিও নূর হোসেনের সঙ্গে যোগ দেন।