অপহরণের তিন দিন পর নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের হাত-পা বাঁধা লাশ পাওয়া গেছে শীতলক্ষ্যা নদীতে, তার পেটে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
Published : 30 Apr 2014, 03:48 PM
গত রোববার দুপুরে চার সহযোগীসহ অপহৃত হওয়ার পর থেকে তার অনুসন্ধানে পুলিশ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিল, অপহরণের প্রতিবাদে প্রায় প্রতিদিন সড়ক অবরোধ করে আসছিল এই কাউন্সিলরের সমর্থকরা।
এর মধ্যে বুধবার দুপুরের পর বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের শান্তিনগর এলাকা সংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীতে কয়েকটি লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়।
এরপর বন্দর থানা পুলিশ গিয়ে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ছয়টি লাশ উদ্ধার করে। এর মধ্যে একটি কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের (৪৪) বলে সনাক্ত করেন তার ভাই আব্দুস সালাম।
লাশ তোলার পর পরনের পাঞ্জাবি দেখে সালাম তার ভাইকে সনাক্ত করেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান বন্দর থানার ওসি আকতার মোরশেদ।
লাশটি অর্ধগলিত ছিল বলে পুলিশ নজরুলকেও চিনতে পারছিলেন না বলে সাংবাদিকদের জানান ঘটনাস্থলে থাকা বন্দর থানার পরিদর্শক মোকাররম হোসেন।
তিনি বলেন, নদীতে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চারটি স্থানে লাশ চারটি ভাসছিল। প্রথম যেটি উদ্ধার করা হয়, তা কাউন্সিলর নজরুলের বলে তার পরিবারের সদস্যরা সনাক্ত করেন।
লাশের অবস্থা কী- জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা মোকারম বলেন, “সবারই হাত-পা বাঁধা ছিল এবং পেটে জখম ছিল, যা থেকে নাড়িভুড়ি বেরিয়ে আসছিল। এটা বলা যায় যে তারা হত্যাকাণ্ডের শিকার।”
তখন পর্যন্ত চারটি লাশ পাওয়া গিয়েছিল, পরে পাওয়া যায় আরো দুটি লাশ। সব লাশের সঙ্গে ইট বেঁধে নদীতে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছিল।
ছয়টি লাশের মধ্যে চারটি সনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে দুজন অপহৃত হওয়ার সময় নজরুলের গাড়িতে ছিলেন, তারা হলেন- ৭ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগকর্মী মনিরুজ্জামান স্বপন ও শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির সহসভাপতি তাজুল ইসলাম।
অন্য লাশটি আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহিমের।
অন্য দুটি লাশের পরিচয় সনাক্ত করা যায়নি। তাদের পরনে রয়েছে লুঙ্গি, সবার বয়স ৪০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে বলে পুলিশের ধারণা।
একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে নারায়ণগঞ্জের আদালত থেকে প্রাইভেটকারে করে বেরিয়ে যাওয়ার পর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে তাদের অপহরণ করা হয়।
ওই রাতে নজরুলের গাড়িটি গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে শালবনের পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে তাদের কোনো সন্ধান মিলছিল না।
নজরুল অপহরণের সময় থেকে নিখোঁজ ছিলেন নারায়ণগঞ্জের প্রবীণ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার (৬০) ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম।
আইনজীবীর গাড়িটি নজরুলের গাড়ির পরপরই আদালতপাড়া থেকে বেরিয়েছিল জানিয়ে চন্দনের পরিবার ধারণা করছে, কাউন্সিলের অপহরণের ঘটনা দেখে ফেলায় হয়তো তাদেরও ধরে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা।
নজরুলের সঙ্গে ইব্রাহিমের লাশ পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া গেল, একই অপরাধীরা আইনজীবীকেও ধরে নেয়।
নজরুলের ঘটনার দুই সপ্তাহ আগে নারায়ণগঞ্জে অপহৃত হয়েছিলেন পরিবেশ আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক, তবে ৩৫ ঘণ্টা পর ছাড়া পান তিনি।
নজরুল অপহরণের পর নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, র্যাবের সিইও এবং ফতুল্লা থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত নজরুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একটি জোড়া খুনসহ অন্তত ১৫টি মামলা এবং বহু সাধারণ ডায়রি (জিডি) রয়েছে।
ঢাকার ধানমণ্ডিতে অ্যাডভোকেট বাবর আলী হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে নজরুলের ফাঁসির দণ্ড হলেও উচ্চ আদালত থেকে তিনি বেকসুর খালাস পান।