আদালত অবমাননার রুলের জবাবে প্রথম আলোর সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের দেয়া ব্যাখ্যাও আদালতের জন্য অবমাননাকর বলে মনে করছে হাই কোর্ট।
Published : 10 Mar 2014, 08:29 PM
সোমবার দুপুরের পর বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমদের বেঞ্চে আদালত অবমাননার ওপর শুনানি হয়।
দুপুর আড়াইটার মধ্যে দুটি রুলের ব্যাখ্যার হলফনামা আদালতে জমা দেয়ার কথা ছিলো প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের।
আড়াইটায় শুনানির শুরুতেই হলফনামার বিষয়ে আদালত জানতে চান। এ সময় মিজানুরের আইনজীবী শাহদীন মালিকের এক সহযোগী আদালতকে বলেন, “হলফনামার কাজ চলছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেয়া হবে।”
এরপর বিচারকাজের শুরুতেই শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে কাঠগড়ায় মিজানুরকে বসতে চেয়ার দেয়ার জন্য তার আইনজীবী আবেদন করেন।
জবাবে বিচারক বলেন, “আমরাতো আগে শুনেছি যে তার ডায়াবেটিস আছে, কিন্তু তার শারীরিক অসুস্থতার কোনো পেপার (ডাক্তারি সনদ) দিয়েছেন কি-না?”
জবাবে আইনজীবী জানান, দেয়া হয়নি।
এরপর প্রায় আড়াই ঘণ্টার বিচার কাজে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকেন মিজানুর।
শুনানি শুরু হলে প্রথমেই বক্তব্য রাখেন আইনজীবী মো. আসাদ উল্লাহ।
সংবিধানের উদ্ধৃতি টেনে তিনি বলেন, “বাক স্বাধীনতা মানে অবাধ স্বাধীনতা নয়। আমার অধিকার ততটুকু, যতটুকুর কারণে অন্যের অধিকার ক্ষুণ্ন হবে না।”
আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মামলার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “সেই লেখাটা ক্যালকুলেটিভ ছিল না। আর এই লেখায় প্রত্যেকটা শব্দ ক্যালকুলেটিভ, প্রতিষ্ঠানকে ভেঙে দেয়ার জন্য।
“মাহমুদুর রহমানের ৬ মাসের দণ্ড হলে মিজানুর রহমানের খানের ৬ বছর হওয়া উচিত।”
এরপর আদালতে বক্তব্য দেন এবিএম ওয়ালিউর রহমান খান।
২টা ৫৫ মিনিটে আদালত জানতে চায়, “হলফনামা কোথায়?”
কিছুক্ষণ পর হলফনামা নিয়ে আদালতে আসেন বিবাদী পক্ষের আইনজীবী শাহদীন মালিক।
তিনি বিচারকদের কাছে হলফনামা জমা দেন।
এরপরই হলফনামা প্রস্তুত করার প্রক্রিয়াগত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারক ও বিপক্ষের আইনজীবীরা।
আদালত বলে, “আদালত অবমাননার রুলের জবাবে বিবাদীর নিজের স্বাক্ষর ও শপথে হলফনামা করতে হয়। অন্য কেউ স্বাক্ষর করলে হবে না।”
মিজানুর রহমান ও মতিউর রহমান দুজনের হলফনামাতেই স্বাক্ষর করেছেন অন্য এক ব্যক্তি।
এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলে বিচারক শাহদীন মালিককে উদ্দেশ্য করে বলেন, “এটা কী করেছেন?”
এ সময় আহসানুল করিম বলেন, “উনি কখনো মাফ চাওয়ার কথা বলেছেন। আবার কখনো কনটেস্ট করছেন। কোনটা করবেন?”
এরপর শুনানিতে রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, “তার (মিজানুর) ব্যাখ্যায় আপনার (আদালত) আদেশ নিয়েই চ্যালেঞ্জ করেছে। উনি ব্যাখ্যায় বলেছেন, কেন রুল দেয়া হয়েছে, তা পরিষ্কার না। কিন্তু কোর্ট তার রুলে সেটা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।”
রোকন উদ্দিন বলেন, নিবন্ধের ১৯ থেকে ২০টি লাইনের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।
এ কথা বলার পরপরই শাহদীন মালিক দাঁড়িয়ে বলেন, “প্রতিটা লাইনের ব্যাখ্যা আছে।”
প্রতি লাইনের ব্যাখ্যা আছে বলে শাহদীন মালিকের মুখ থেকে দুইবার নিশ্চিত হওয়ার পর রোকন উদ্দিন বলেন, “আদালত অবমাননার বিষয়টি কোর্ট যদি সুনির্দিষ্ট না করেন, তাহলে উনি কিভাবে বুঝেছেন যে, তার প্রতিটা লাইনের ব্যাখ্যা দরকার। তার মানে পুরো লেখায় আদালত অবমাননা হয়েছে।”
এরপর রোকন উদ্দিন বলেন, “সে বলতে চাচ্ছে, আমি ঠিকই লিখেছি। ব্যাখ্যা লিখতে গিয়ে সে আরেকটা নিবন্ধ লিখেছি। এখানে বিচার কাজ দেখে ওনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। সুস্থ মস্তিষ্কের লোক হলে এটা হতে পারে না।”
মিজানুরের রুলের জবাবের আরো কয়েকটি বিষয়ে অসঙ্গতি তুলে ধরে বক্তব্য দিতে থাকেন রোকন উদ্দিন মাহমুদ।
এ সময় আদালতের অনুমতি নিয়ে কাঠগড়ায় দাঁড়ানো মিজানুরের সঙ্গে পরামর্শ করে শাহদীন মালিক আদালতকে বলেন, “হলফনামায় যে ব্যাখ্যাটি যুক্ত করা হয়েছে, সেটা ভুলক্রমে হয়েছে। এটা সংশোধন করে দিব।”
তখন আদালত বিস্ময় প্রকাশ করে বলে, “ইশশ.. এটা আদালত অবমাননার জবাব! ভুলক্রমে কি নিবন্ধও এ রকম ছাপা হয়?”
এক পর্যায়ে বিচারক বলেন, “এটাতো আমাদের কাছে দিয়ে দিয়েছেন। কাল দুই বিবাদীর নিজের স্বাক্ষরে হলফনামা করে জবাব আদালতে জমা দিতে হবে।”
মিজানুর রহমান তার নিবন্ধে ‘কমপক্ষে ৪০০ জন’ জামিন পেয়েছেন বলে যে তথ্য দিয়েছেন, রুলের ব্যাখ্যায় এ তথ্যকে তিনি বলেছেন, ‘রক্ষণশীল অনুমানসিদ্ধ তথ্য।’
শুনানির শেষ দিকে এসে আদালত বলে, “উভয় হলফনামা একই ধরনের মনে হচ্ছে। আমাদের সন্দেহ হচ্ছে, উনি বুঝে এটা দিয়েছেন কি-না। আমরা সেটাই তার মুখ থেকে শুনতে চাচ্ছি। উনি এটার কনসিকোয়েন্স বুঝে দিয়েছেন কি-না।
“এ কারণে মঙ্গলবার আদালতে এসে মতিউর রহমানকে জানাতে হবে- এটা তারই ব্যাখ্যা।”