সমঝোতার সম্ভাবনা নাকচ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের ‘চূড়ান্ত’ লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখতে দলীয় নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
Published : 06 Jan 2014, 11:12 AM
ভোটের দিন রোববার লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলেনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের ছেলে তারেক বলেন, “তামাশার নির্বাচনকে কার্যত রুখে দেওয়ার মাধ্যমে দেশবাসী একটি লক্ষ্য অর্জন করল মাত্র। এটি চূড়ান্ত সাফল্য নয়। বরং চলমান স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রক্রিয়ারই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
“আমাদের সবার মূল লক্ষ্য নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করে গণতন্ত্রকামী মানুষের চেতনার প্রতিফলন ঘটানো। সেই অভীষ্ঠ গন্তব্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত সর্বাত্মক আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।”
ডকল্যান্ডের ফোর সিজন হোটেলে এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান তারেক রহমান, যিনি ভোটের আগের দিন শনিবার এক ভিডিও বার্তায় দেশের মানুষকে নির্বাচন প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
রোববার বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের হরতাল-অবরোধের মধ্যে ভোটের সময়ই দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৮ জন নিহত হন। আর যে ১৪৭টি আসনে ভোট হয়েছে, তার মধ্যে ১০৪টিতে জয় পেয়ে ৩০০ আসনের সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য বলেছেন, রাজনৈতিক সমঝোতা হলে এই সরকার গঠনের পরও সংসদ ভেঙে মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়া হবে।
সেই সমঝোতার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সংবাদ সম্মেলনে তারেক বলেন, “এই যে প্রহসনের নির্বাচন গতকাল হয়ে গেছে, প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় আসে, এটা নিশ্চিত যে তারা বৈধ সরকার নয়। যে বৈধ না- তার সাথে আলোচনার কি কারণ থাকতে পারে?”
তারেক বলেন, “জনগণ আজ ভোটে অংশগ্রহণ না করার মাধ্যমে বলে দিয়েছে- বিএনপি যেদিকে যাচ্ছে বা পদক্ষেপ নিচ্ছে, যে দাবি উপস্থাপন করেছে- তা সঠিক। এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচনই হচ্ছে একমাত্র সমাধান।”
ভিডিও বার্তায় নির্বাচন প্রতিহতের ডাক দিয়ে তারেক সহিংসতাকে উস্কে দিয়েছেন- ক্ষমতাসীনদের এমন অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বলেন- এটি বিচারের ভার তিনি দেশের জনগণের ওপরই ছেড়ে দিচ্ছেন।
গত পাঁচ বছর ধরে পরিবার নিয়ে লন্ডনে অবস্থানরত তারেকের ভাষায়, বাংলাদেশ এখন ‘ভয়ানক এক দুর্যোগকালীন সময়’ চলছে; যাতে ‘ন্যায়ের সাথে অন্যায়ের, সত্যের সাথে মিথ্যার এবং জনগণের আকাঙ্খার সাথে একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ক্ষমতার মোহের লড়াই’ চলছে।
তিনি বলেন, “বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রহসনের নির্বাচনকে প্রতিরোধ, প্রতিহত ও বর্জন করায় গণতন্ত্রকামী সমগ্র দেশবাসী ও ১৮ দলীয় ঐক্যজোটের তৃণমূল সহ সকল স্তরের নেতাকর্মীদের জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।”
সংবাদ সম্মেলনে তারেক জানান, চিকিৎসা শেষ না হওযা পর্যন্ত তিনি দেশে ফিরছেন না।
“বিএনপির তৃণমূলসহ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীর প্রতি আমার প্রত্যাশা - আমার শারীরিক অনুপস্থিতি যেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আজকের এই ঐতিহাসিক সংগ্রামের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।”
তারেকের দাবি, বিশ্বের সব রাষ্ট্র ও গণমাধ্যম বিএনপির আন্দোলনের পক্ষে।
“দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আমার নির্দেশনা থাকবে: আপনারা নিজ-নিজ এলাকায় শত প্রতিকূলতার মাঝে হলেও সংগ্রাম করে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে যে কোনো মূল্যে অব্যাহত রাখুন।”
আর তা হলেই ‘পৃথিবীর কোনো শক্তির পক্ষে’ বিএনপিকে ‘দমিয়ে রাখা’ সম্ভব হবে না বলে তারেকের বিশ্বাস।
কেবল সরকারি দায়িত্ব পালনের ‘অজুহাতে’ দেশবিরোধী শক্তির হুকুম তামিলের সুযোগ নেই মন্তব্য করে ভোটের দায়িত্বে থাকা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্টদেরও সতর্ক করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, “কলঙ্কিত নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন, নিজ চোখে সরকারের কারচুপি ও অরাজকতা দেখেছেন - তাদেরকে আমি অনুরোধ করব, বিবেকের কাছে সততা নিয়ে প্রশ্ন করুন: আপনারা কাদের পক্ষ হয়ে, কাদের বিপক্ষে কাজ করছেন?”
অন্যদের মধ্যে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস, সেক্রেটারি কয়সর আহমদ, এম এ মালেক, মহিদুর রহমান, তৈমুছ আলীসহ যুক্তরাজ্য নেতাকর্মীরা এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।