তফসিল ঘোষণা হওয়ায় এখন থেকে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা সরকারি সুবিধা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না।
Published : 25 Nov 2013, 06:49 PM
সোমবার নির্বাচনের তফসিল দিয়ে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে নির্বাচনী আচরণ বিধি তুলে ধরে তা কঠোরভাবে প্রয়োগের ঘোষণা দেন প্রধান নির্বাচনী কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।
“আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করতে চাই যে, নির্বাচন আচরণ বিধি প্রয়োগে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। কে কোন পদে আছেন, তা দেখা হবে না।”
“তিনি কোন আচরণ বিধি ভঙ্গ করলেন, শুধু সেটাই দেখা হবে এবং সে মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে,”হুঁশিয়ারি দেন সিইসি।
সংবিধান সংশোধন হওয়ায় গত দুই যুগে এবারই প্রথম নির্বাচনকালে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকছে, বহাল থাকছে সংসদও।
ফলে সব প্রার্থীদের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে নির্বাচনী আচরণ বিধিতে সংশোধন আনতে হয়েছে নির্বাচন কমিশনের। রোববার এর প্রজ্ঞাপন জারি হয়।
নির্বাচিত ব্যক্তি, যারা নির্বাচনেও অংশ নেবেন, তারা ক্ষমতায় থাকলে নির্বাচন প্রভাবমুক্ত হবে না দাবি করে নির্দলীয় নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। নইলে নির্বাচন বয়কটের হুমকিও রয়েছে তাদের।
অন্যদিকে নির্বাচনকালীন ‘সর্বদলীয়’ সরকার গঠন করে তাতে বিএনপিকে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
দুই দলের বিপরীত অবস্থানের মধ্যে আগামী ৫ জানুয়ারি ভোটের দিন রেখে দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল সিইসি ঘোষণা করলেও রাজনৈতিক সমঝোতাও আশা করেছেন তিনি।
কাজী রকিব বলেন, আগের আচরণবিধিটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করা ছিল।
“তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, মন্ত্রী ও অন্যান্য সরকারি সুবিধাভোগী বিশেষ গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তিবর্গকে নির্বাচন-পূর্ব সময়ে কিছু কিছু নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনে সকলের জন্য সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুতের নিমিত্তে আচরণবিধিতে কিছু সংশোধন আনা হয়েছে।”
ভারত, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়াসহ বেশ কিছু সংসদীয় গণতন্ত্র অনুসরণকারী দেশের নির্বাচন আচরণবিধির আলোকে এই সংশোধন আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আচরণবিধি অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতাসহ অন্যান্য মন্ত্রীরা সরকারি সুবিধা নিয়ে প্রচার চালাতে পারবেন না। তবে প্রাপ্যতা অনুযায়ী তারা নিরাপত্তা পাবেন।
নির্বাচনের আগে সংসদ সদস্যরা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় যোগ দিতে পারবেন না জানিয়ে সিইসি বলেন, তারা তাদের ইচ্ছাধীন তহবিল বা তাদের অধীনস্থ অন্য কোনো তহবিল থেকে কোনো অর্থ কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানকে দিতে পারবেন না। তারা নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি সুযোগ-সুবিধাসহ সরকারি যানবাহন ব্যবহার করতে পারবেন না।
নির্বাচনী আইন ও আচরণবিধির বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে তা মেনে নিতে এবং নেতাকর্মীদের তা মেনে চলতে বাধ্য করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান সিইসি।
আচরণবিধি লঙ্ঘনে প্রার্থিতা বাতিলও হতে পারে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “মনোনয়নপত্র জমা প্রদানকালে চিরাচরিত শো-ডাউন কোনভাবেই বরদাশত করা হবে না এবং আচরণ বিধির এ জাতীয় লংঘন করা হলে তা ওই প্রার্থীর প্রার্থিতা অনিশ্চিত করতে পারে।”
“আমি আবারো সকল মহলকে স্মরণ করে দিচ্ছি যে আচরণবিধির কোনো ব্যত্যয় কোনোভাবেই বরাদাশত করা হবে না,” বলেন কাজী রকিব।
তিনি জানান, আচরণবিধিতে তফসিল ঘোষণার দিন থেকে নির্বাচনের ফলাফলের গেজেটে প্রকাশ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।