মালিক সমিতির ধর্মঘটে ১১ দিন বন্ধ থাকার পর মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌপথে লঞ্চ চলাচল আবার শুরু হয়েছে।
Published : 02 Sep 2013, 09:59 AM
সোমবার সকাল সোয়া ৭টায় এম এল মায়ের দোয়া নামে একটি লঞ্চ মাওয়া ঘাট থেকে ছেড়ে যায়। একই সময় কাওড়াকান্দি থেকে এম এল শিবচর মাওয়ার উদ্দেশে রওনা হয়।
রোববার রাতে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের সঙ্গে লঞ্চ মালিক সমিতির দীর্ঘ বৈঠকের পর সোমবার থেকে লঞ্চ চালুর এই সিদ্ধান্ত নেয় মালিকপক্ষ।
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান খন্দকার সামসুদ্দোহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমভি শাহ পরান লঞ্চটি এই রুটে চলাচল নিয়ে মালিক সমিতির আপত্তি ছিল। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ওই লঞ্চটিও তিন দিন পর থেকে চলবে।”
রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এই নৌপথে বর্তমানে ৮৬টি লঞ্চ চলছে। ‘এমভি শাহ পরান’ যুক্ত হলে লঞ্চের সংখ্যা দাঁড়াবে ৮৭।
লঞ্চ মালিক সমিতির সহ সভাপতি মো. ইকবাল হোসেন বলেন, “কয়েকটি লঞ্চের পারমিট বাতিলসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিধি অনুযায়ী সেগুলোও শিথিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। তাই আমরা স্বাভাবিকভাবে লঞ্চ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
গত ২২ অগাস্ট কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে ‘এমভি শাহ পরান’ মাওয়া ঘাটে গেলে শ্রমিকরা লঞ্চটি ভাংচুর করে আটকে রাখে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। #
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান বলেন, “দীর্ঘ ১১ দিন লঞ্চ চলাচল না করায় যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল। এখন তা লাঘব হয়েছে।
মাওয়ায় গাড়ির দীর্ঘ লাইন
নাব্য সঙ্কটে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি পারাপার তিন দিনের জন্য বন্ধ রাখায় যানবাহনের চাপ বেড়েছে মাওয়া-কাওড়াকান্দি ফেরিতে। ফলে মাওয়া ঘাটে সৃষ্টি হয়েছে পণ্যবাহী ট্রাক ও যানবাহনের দীর্ঘ লাইন।
বিআইডব্লিউটিসির মাওয়া অফিসের ব্যবস্থাপক সিরাজুল হক সোমবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দক্ষিণবঙ্গগামী যেসব ট্রাক ও বাস পাটুরিয়া হয়ে চলাচল করতো, সেগুলো এখন মাওয়ায় আসছে। মাওয়ার ১৩টি ফেরি ঠিকমতো চললেও চাপ বাড়ার কারণে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।”
সকাল ৯টা পর্যন্ত মাওয়া ঘাটে দেড়শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় ছিল বলে জানান তিনি।
পদ্মার ভাঙন অব্যাহত
এদিকে পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে মাওয়ায় আরও তিনটি বাড়ি, তেলু শাহর মাজার ও একটি বটগাছ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে থাকা দেড় শতাধিক বাড়ি ও দোকান ঘর সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে।
সোমবার পর্যন্ত ৭০ জন তাদের দোকান ঘর ও বাড়ির জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়েছেন। সর্তক অবস্থায় রয়েছেন সবাই।
গত শনিবার বিকাল থেকে মাওয়ায় আকস্মিকভাবে শুরু হয় নদীভাঙন। তবে ঘাটের কার্যক্রম এখনও স্বাভাবিকভাবে চলছে।
লৌহজংয়ের ইউএনও মো. অহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সেতু কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে গত মৌসুমে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বাধ নির্মাণ করা হয়। তার ঠিক দেড়/২ শ’ মিটার আগে এই ভাঙন দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ভাঙনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে ৩ নম্বর ঘাটসংলগ্ন মাওয়া নৌ-পুলিশ ফাড়ির অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প, বিআইডব্লিউটিএর সাবেক পাকিং ইয়ার্ড ও অফিস, মাওয়া বন্দর অবহাওয়া অফিসের তিন তলা ভবন এবং মাওয়া-ভাগ্যকূল সড়ক। ভাঙন অব্যাহত থাকলে যে কোন সময় এসব স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
পার্কিং ইয়ার্ডের সামনের মূল রাস্তাটি ভেঙে গেলে মাওয়ার সঙ্গে ভাগ্যকুল-দোহারের সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।
ইউএনও বলেন, “প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিতে পানি উন্নয়নবোর্ডসহ ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
ভাঙনের কারণে গত বছর দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার মাওয়া ফেরিঘাট কিছুটা পূর্ব দিকে সরিয়ে নেয়া হয়।