বাংলাদেশে কারাবন্দি অনুপ চেটিয়ার দ্রুত প্রত্যর্পণ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছে উলফার সশস্ত্র বিদ্রোহী অংশটি, যার পেছনের সম্ভাব্য উদ্দেশ্য নিয়ে ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।
Published : 16 Jul 2013, 07:05 PM
বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দি উলফার সাধারণ সম্পাদক চেটিয়া বাংলাদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলেও মত বদলে ভারতে ফিরে যেতে চেয়েছেন।
ভারত সরকার ও উলফার উদারপন্থী অংশ- উভয় পক্ষই চেটিয়াকে ভারতে ফেরত আনার বিষয়ে তৎপর। এর মধ্য দিয়ে নয়া দিল্লির সঙ্গে ওই বিদ্রোহী গ্রুপের চলমান শান্তি আলোচনা আরো ত্বরান্বিত হবে বলে মনে করছে দুপক্ষই।
উলফার সমঝোতাপন্থী অংশের মধ্যে চেটিয়ার উপস্থিতিকে উলফার প্রধান পরেশ বড়ুয়ার প্রভাব কমানোর উপায় হিসেবে দেখা হচ্ছে, যিনি শান্তির প্রস্তাব গ্রহণ না করে মিয়ানমারে ঘাটি গেঁড়ে ভারতের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করছেন।
গত মাসে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা অরবিন্দ রাজখোয়ার নেতৃত্বে উলফার সমঝোতাপন্থী অংশকে আশ্বস্ত করেছিলেন, চেটিয়াকে ১৬ জুলাইয়ের মধ্যে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
কিন্তু আসাম গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান খগেন শর্মা এখন দাবি করছেন যে, চেটিয়াকে ফেরত আনার প্রক্রিয়ায় আরো কিছুটা সময় লাগবে।
এই ধোঁয়াশার মধ্যেই ‘আসামের মুক্তি আন্দোলন অব্যাহত রাখতে’ বাংলাদেশ থেকে চেটিয়ার ‘সম্মান ও সৌজন্যমূলক প্রত্যর্পণ’র জন্য শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ করেছে পরেশ বড়ুয়ার গ্রুপ।
এ পদক্ষেপ সংশ্লিষ্ট সবাইকে হতবাক করেছে। কারণ, সমঝোতাপন্থী অংশের সঙ্গে না থাকলে ফেরত আনার পর চেটিয়াকে অবশ্যই কারাগারে যেতে হবে।
ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার কাছে পরেশ বড়ুয়া অংশের এই চিঠি সন্দেহজনক। কারণ চেটিয়া মুক্তি পেয়ে রাজখোয়া গ্রুপের সঙ্গে যোগ দিয়ে দিল্লিতে শান্তি আলোচনায় অংশ নেবেন।
রাজখোয়ার নেতৃত্বে অংশটি শান্তি প্রক্রিয়ায় খুব ভালো অগ্রগতি করতে ব্যর্থ হয়ে উলফার এই চৌকস নেতাকে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার লক্ষ্যে এখন দিল্লির সঙ্গে তাকে ফেরত আনার প্রচারণায় যৌথভাবে অংশ নিচ্ছে।
এখন এ গল্পের নতুন মোড় ঘুরিয়ে পরেশ বড়ুয়ার অংশ যারা নিজেদেরকে স্বাধীন ঘোষণা করেছে, তারা এখন চেটিয়ার ফেরত নেয়ার জন্য হাসিনার কাছে আবেদন করছে।
আসাম পুলিশের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, “নিজেদের ভার চেটিয়ার ওপর ছাড়ার পেছনে পরেশ বড়ুয়ার অংশের এই পদক্ষেপের পেছনে প্রকৃত উদ্দেশ্য বের করতে আরো অনুসন্ধান করতে হবে। এটা সম্ভবত পুরো প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়াকে জটিল করার একটা ধান্দা।”
হাসিনাকে লেখা ওই চিঠিটিতে সই করেছেন এই গ্রুপের চেয়ারম্যান অভিজিৎ অসম।
চিঠিতে তিনি বলেন, “আমি মনে করি, আর নিরাপত্তা হেফাজতে না থেকে স্বেচ্ছায় ভারতে ফিরে যাওয়ার জন্য নিজে থেকেই আপনার সরকারের কাছে আবেদন করেছেন। তবে আপনার দেশে সন্ত্রাসী হিসেবে সাজাপ্রাপ্ত ভারতের কারাগারে বন্দি সুব্রত বাইনের মতো আরো কয়েকজন সন্ত্রাসীর বিনিময়ে অনুপ চেটিয়াকে ফের দিতে চাচ্ছেন বলে জানতে পেরেছি।
“আমি অত্যন্ত হতাশ এই কারণে যে, চেটিয়া নিজে থেকে ফেরত যেতে চাইলেও ভারতে বন্দি বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদের ফেরত পেতে তাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।”
“অনুপ চেটিয়া সন্ত্রাসী নয়, আসামের স্বাধীনতাকামী জনতার নেতা। আপনার দেশের সন্ত্রাসীদের বিনিময়ে তাকে ঔপনিবেশিক ভারতের হাতে তুলে দেয়া হবে বড় প্রহসন এবং তা আসামের জনগণের অনুভূতিতে আঘাত হানবে।”
বেশ কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও উলফা পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, পরেশ বড়ুয়ার গ্রুপ ভারতকে দ্বিধাগ্রস্ত করে শান্তি প্রক্রিয়া ভেস্তে দিতে চায়।