শতবর্ষ পুরানো চলমান ফৌজদারি কার্যবিধির অধীনে বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে অবিচারই বেশি হয় বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ।
Published : 22 Jun 2013, 11:00 AM
তিনি বলেন, “ব্রিটিশরা শতবর্ষ আগে এই আইন করে গিয়েছিলো। এরপর এ আইনের বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমরা আমাদের দেশের উপযোগী করে এই আইনটি বদলে ফেলতে চাচ্ছি।”
শনিবার রাজধানীতে ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনবিষয়ক বিলের খসড়া নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী।
সভায় উপস্থিত বিচারক ও আইনজীবিদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, “ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিচারের চাইতে অবিচার বেশি হয়। আমাদের এই সংশোধনী এই অবিচার রোধ করবে, মামলাজট কমাবে।”
সবার মতামত নিয়ে জাতীয় সংসদের চলমান বাজেট অধিবেশনের পরের অধিবেশনেই এ আইন পাস করা সম্ভব হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন আইনমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “কানাডা ও আমেরিকাতে দেখেছি, বিচারের পূর্বে উভয়পক্ষের আইনজীবীদের নিয়ে একটি বিচারপূর্ব সম্মেলন হয়। সেখানে বিচারের একটি ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয়। যা কিছুই ঘটুক তারা এই ক্যালেন্ডারের বাইরে যায় না।
“কিন্তু আমাদের এখানে তদন্ত করতে করতেই সময় চলে যায়। বিচার শুরুর পর সাক্ষী খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে যায়। সাক্ষী পেলে আবার মামলা মুলতবি হয়ে যায়। এক পর্যায়ে সাক্ষীরাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।”
আইন মন্ত্রী বলেন, “অভিযোগ উঠেছে, নারী ও শিশু নির্যাতন বিষয়ক মামলার ৮০ ভাগই ভুয়া। মিথ্যা অভিযোগে এসব মামলা দায়ের করা হয়। আমরা এটাকে ‘মীমাংসাযোগ্য’ (কমপাউন্ডেবল) করে দিচ্ছি। চেক ডিজঅনারের মামলার ক্ষেত্রেও একই বিধান রাখছি।”
সভায় মামলার তদন্ত করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয় জানিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের দায়িত্ব থেকে ছাড়িয়ে আলাদা তদন্ত সেল করার প্রস্তাব আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, নারী নির্যাতনের ৮০-৯০ ভাগ মামলাই ভুয়া। সংসারে একটু খিটিমিটি দেখা দিলেই মামলা করে দেয়। এগুলো নিষ্পত্তি করতে হবে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে।”
আদালতে দাখিলের আগে মামলা ভালভাবে যাচাই হওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় শতভাগ ভাগ মামলার বিচারে সাজা হয় উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমাদেরকেও সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
“কেউ মিথ্যা মামলা দিলে আইনে তারও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। মিথ্যা মামলা দায়েরকারীকে সরাসরি শাস্তির বিধান রেখে আইন করলে দেখবেন মামলার সংখ্যা অর্ধেক কমে গেছে।”
ফৌজদারি অপরাধের বিচারে সরকারি কৌসুলির পাশাপাশি বাদিপক্ষেরও আইনজীবী নিয়োগ করা ও তাদের আপিলের সুযোগ দেয়ার বিধান করার প্রস্তাব করেন তিনি।
তিনি বলেন, “ফৌজদারি অপরাধে আসামিরা জামিন পেলে, দণ্ড যথাযথ না হলে ভিক্টিমরা এসে আমাদের কাছে কান্নাকাটি করে আপিল করতে বলে। এখানে একটি সংশোধনী আনতে হবে।
“পাশাপাশি খালাস বা অপর্যাপ্ত সাজার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগ পর্যন্ত যেন তারা আপিল করতে পারে সে সুযোগও রাখতে হবে।”
ফৌজদারি অপরাধমূলক নানা বিষয়ের সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে নীতিমালা করার প্রস্তাব করেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমি বিনিতভাবে বলছি, এটা (মিডিয়া ট্রায়াল) বন্ধ করতে হবে। এর ফলে সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এক্ষেত্রে মিডিয়ার জন্য একটি গাইডলাইন তৈরি করে দেয়া যেতে পারে যে, মিডিয়া কতটুকু প্রকাশ করতে পারবে। আর কতটুকু পারবে না।
“একটা মেয়ে পর্দার আড়ালে একবার ধর্ষিত হয়। অনেক সময় দেখা যায়, এরপর মিডিয়ার কারণে তার পুরো পরিবার ১০ বার ধর্ষিত হয়।”
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সকালে রূপসী বাংলা হোটেলে আয়োজিত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, আইন সচিব এএসএসএম জহিরুল হক, জাতিসংঘের উন্নয়নবিষয়ক সংস্থার (ইউএনডিপি) কান্ট্রি ডিরেক্টর পলিন তামেসিস ও বিভিন্ন জেলা বারের আইনজীবীরা।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব শহিদুল হক।