সন্ত্রাসী ‘তৈরির’ অভিযোগের মুখে থাকা বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় নিজ ক্যাম্পাসে রাষ্ট্রবিরোধী কাজ ঠেকাতে স্থায়ী নজরদারি টিম গঠন করেছে।
Published : 04 Apr 2013, 07:16 PM
বৃহস্পতিবার দাখিল করা একটি অগ্রগতি প্রতিবেদনে উচ্চ আদালতকে একথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদনটি আদালতে দাখিল করেন বিশ্ববিদ্যালয় ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন।
অগ্রগতি প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীদের সব স্তরে গুরুত্বের সঙ্গে ‘মটিভেশন প্রোগাম’ হাতে নেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এতে বলা হয়, গত ২৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেল ও কন্টিনিউইং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুর রব মিয়াকে আহ্বায়ক করে এ টিম গঠন করা হয়েছে।
৮ সদস্যের এই কমিটিতে আরো রয়েছেন- বিবিএ প্রোগামের পরিচালক ড. জসীম উদ্দিন আহমেদ, ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. বিপ্লব কুমার দাস, উপাচার্যের কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) বেলাল আহমেদ, আইএস বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর এসএম ফয়সাল মামুন, অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক মিস. পারিসা সাকুর, মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. সুজাউদ্দিন আহমেদ ও প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ইমরান আহমেদ।
সার্বিক নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে কোনো অস্বাভাবিক, রাষ্ট্রবিরোধী/নাশকতামূলক, ক্যাম্পাসের স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কাজের সন্ধান পেলে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের নিকট প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
তারা মাসে অন্তত একবার বৈঠক করবে ও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের কাছে একটি মাসিক প্রতিবেদন দাখিল করবে। যে কোনো মাসের পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে এই প্রতিবেদন দিতে হবে। এছাড়া টিমকে যেকোনো জরুরি অবস্থাতেই বৈঠক করতে হবে।
‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আসেনি’
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে সন্ত্রাসের প্রজননক্ষেত্র হিসাবে উল্লেখ করে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের সত্যতা যাচাইয়ে আদালতের নির্দেশে গঠিত কমিটি নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি।
ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে আমরা আদালতকে বলেছি, এখনো ওই কমিটি প্রতিবেদন দিতে পারেনি। প্রতিবেদন আমাদের হাতে আসামাত্রই আমরা তা আদালতে দাখিল করবো।”
গত ৭ মার্চ অধ্যাপক ড. এম ইমদাদুল হককে আহ্বায়ক করে ৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে তদন্ত পরিচালনায় ১৫ দিন সময় দেয়া হলেও এর মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেনি।
অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজিব হত্যায় গ্রেপ্তার পাঁচ শিক্ষার্থীকে গত ৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল ও সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আলী জিন্নাহ।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী উৎপাদনের ক্ষেত্র হওয়ার অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখতে ৬ মার্চ আদেশ দেয় হাই কোর্ট।
বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি মাহমুদুল হকের বেঞ্চ বুধবার এবিষয়ে একটি রুলও জারি করে। কিন্তু বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী আপিল বিভাগে পদোন্নতি পাওয়ায় বেঞ্চটি ভেঙে যায়। পরে তা বর্তমান বেঞ্চে শুনানির জন্য আসে।
পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আদালতের দেয়া ওই আদেশে বলা হয়, এর আগে ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনের ওপর হামলার ঘটনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জড়িত বলে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কিন্তু ওই ঘটনায় হামলাকারীদের কেউ এখনো গ্রেপ্তার হয়নি।
“আরেক প্রতিবেদনে এমন অভিযোগও রয়েছে যে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় সন্ত্রাসীর উৎপাদন ক্ষেত্র।”
এ দুটি বিষয়ের সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।
এছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে বিষয় দুটির তদন্ত শেষ করে এক মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয় বিবাদীদেরকে। এর আগে ১২ দিনের মধ্যে তদন্তের অগ্রগতি জানাতে বলা হয়।
নর্থ সাউথের পাশপাশি রাষ্ট্রপক্ষও তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। আদালত তাদের জন্য আরো ১৫ দিন সময় বৃদ্ধি করেছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।