একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আটক নেতাদের মুক্তির দাবিতে আবারো সারা দেশে সহিংস কর্মকাণ্ড চালিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগী ছাত্রশিবির।
Published : 28 Jan 2013, 08:59 AM
সোমবার সকাল ১০টার পর প্রায় একই সময়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলায় অন্তত ২৭ পুলিশ সদস্য আহত হন। যাদের মধ্যে রাজধানীতেই আহত হয়েছেন ২১ জন।
রাজধানীতে জামায়াত-শিবির কর্মীরা মতিঝিলে জড়ো হয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। এ সময় সংঘর্ষে মতিঝিল থানার ওসিসহ অন্তত ২১ পুলিশ আহত হন। ভাংচুর করা হয় শতাধিক গাড়ি।
মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক মোক্তার হোসেন জানান, জামায়াত-শিবির কর্মীরা মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জড়ো হয়ে গাড়ি ভাংচুর করতে করতে বলাকা চত্বরের দিকে এগিয়ে যায়। এ সময় পুলিশের একটি পিক আপ ভ্যানসহ তিনটি গাড়িতে আগুন দেয় তারা। পুলিশ ধাওয়া দিলে শিবিরকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
এর কিছুক্ষণ পর তারা আবার জড়ো হয়ে স্টেডিয়াম ও জিরো পয়েন্ট এলাকায় ব্যাপক গাড়ি ভাংচুর করে। এ সময় বেশ কয়েকটি হাতবোমারও বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেন জানান, স্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের সামনে জামায়াত-শিবির কর্মীদের আগুনে দুটি গাড়ি পুড়ে গেছে।
এ ঘটনায় মতিঝিল, পল্টন ও শাহজাহান থানা পুলিশ অন্তত ৫০ জনকে আটক করে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। ঘটনার পর মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, পল্টন ও জিরো পয়েন্ট এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
রাজশাহীতে বোমাবাজি
সকালে প্রায় একই সময়ে রাজশাহী নগরের বিনোদপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে শিবিরকর্মীদের হামলার শিকার হয় পুলিশ।
এতে দুই পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। এ সময় তিন শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চট্টগ্রামে অতর্কিতে হামলা
সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রামের বিআরটিসি মোড়ে জড়ো হয়ে অতর্কিতে পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়ে পালিয়ে যায় শিবির নেতাকর্মীরা।
তাদের হামলায় আহত দুই পুলিশ কনস্টেবলকে পুলিশ লাইন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে বলে জানান চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার আবদুল মান্নান।
দিনাজপুরে লাঠিমিছিল
সকালে প্রায় একই সময়ে যুদ্ধাপরাধে আটক নেতাদের মুক্তির দাবিতে দিনাজপুরে লাঠি মিছিল করে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির। তাদের লাঠির আঘাতে পুলিশের এক উপ পরিদর্শক ও এক কনস্টেবল আহত হন।
কোতোয়ালি থানার আহত এসআই মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামীসহ আটক জামায়াত নেতাদের মুক্তির দাবিতে সকাল ১০টায় শহরের নিমতলা মোড় থেকে জামায়াত-শিবিরের শতাধিক নেতাকর্মী লাঠি-সোটা নিয়ে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি মুন্সিপাড়া সড়কে পৌঁছালে পুলিশ গতিরোধের চেষ্টা চালায়। তখন মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়।
এর আগে গত বছর নভেম্বরের শুরুতে আটক নেতাদের মুক্তির দাবিতে সহিংস রূপ নিয়ে মাঠে নামে জামায়াত-শিবির।
সে সময় বিভিন্ন স্থানে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা-ভাংচুরের পাশাপাশি জয়পুরহাটে এক পুলিশ সদস্যের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। রাজধানীর কারওয়ানবাজারে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদের গাড়িবহরও তাদের হামলার মুখে পড়ে।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রথম রায়ে গত ২১ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দেয় অন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
দলটির সাবেক ও বর্তমান আমীরসহ আট শীর্ষ নেতা এবং বিএনপির দুই জনের বিচার চলছে ট্রাইব্যুনালে। এর মধ্যে দুটি মামলা রায়ের পর্যায়ে রয়েছে।