মঈনুল হক চৌধুরী
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক
ঢাকা, আগস্ট ২৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- মেধাস্বত্ত্ব (প্যাটেন্ট) না করে উদ্ভাবিত পণ্য বাজারে না ছাড়বে না বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)।
সায়েন্সল্যাব খ্যাত বিসিএসআইআর- এর নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম ইমামুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, "শিগগির বিসিএসআইআর-এর গবেষণাগার আন্তর্জাতিক মান সনদ (আইএসও সার্টিফিকেট) পেতে যাচ্ছে। এখন থেকে এ প্রতিষ্ঠানের গবেষণালব্ধ উদ্ভাবিত পণ্যের মেধাস্বত্ত্ব না করে বাজারে না ছাড়ার পরিকল্পনা করছি।"
বিভিন্ন বাণিজ্যিক পণ্যের মান বিশ্লেষণ করার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রথমেই বিসিআইএসআর-এর শরণাপন্ন হয়। এছাড়া আর্সেনিক মিটিগেশন, অ্যানালাইটিক্যাল রিচার্স, বায়োগ্যাস টেকনোলজি, বায়োলজিক্যাল সায়েন্স, বায়োটেকনোলজি, ফুড মাইক্রোবায়োলজি, ফাইবার অ্যান্ড পলিমার, এনভায়রনমেন্টাল পলিউশন, ফুড সায়েন্স অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল, টিস্যু কালচারসহ ৩৭টি বিষয়ে গবেষণা করে এ প্রতিষ্ঠান।
দেশের শিল্প-বাণিজ্যে প্রতিষ্ঠানের বড় ধরনের ভূমিকার কথা তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ও পরিবেশ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক হক বলেন, "প্রতিষ্ঠানটির বিশ্লেষণের মান যতই উন্নত থাকুক না কেন গবেষণাগারের আইএসও এক্রিডিশন সার্টিফিকেট না থাকায় অনেক সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তা গৃহীত হয়নি।"
তিনি জানান, বিসিএসআইআর'র একটি গবেষণাগার খুব শিগগিরই (দুই সপ্তাহের মধ্যে) আন্তর্জাতিক মান সংস্থার (আইএসও সনদ ১৭০২৫) খেতাব পেতে যাচ্ছে। এতে করে আর্সেনিকসহ ১২টি মৌল বিশ্লেষণ বিশ্বমানের পর্যায়ে স্বীকৃত হবে।
বর্তমানে বিসিএসআইআর-এর ৩৬০টিরও বেশি পণ্যের মেধাস্বত্ত্ব রয়েছে। পাশাপাশি মেধাস্বত্ত্ব ছাড়াই বাজারে ইজারা রয়েছে আরও তিন শতাধিক উদ্ভাবিত পণ্য। আরও হাজার খানেক উদ্ভাবন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিশ্বমানের ল্যাবরেটরি থাকার পরও বিগত ক'বছরে যথাযথভাবে এর কার্যক্রম পরিচালিত হয় নি বলে জানিয়ে ইমামুল হক আরও বলেন, "বর্তমান সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা নিয়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করে এখন যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা হবে জাতীয় এ গবেষণা প্রতিষ্ঠানটিকে।"
এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থা বদলে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি জানান, বিজ্ঞান, শিল্প ও গবেষনা পরিষদের উদ্ভাবিত পদ্ধতির মাধ্যমে গত এক বছরে আয় হয়েছে চার কোটি টাকা। গত ছয় মাসে ৫০ লাখ টাকার বেশি অর্থ উপার্জন হয়েছে।
এ প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত পণ্য ছাড়াই ইজারা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে ইমামুল হক বলেন, "মেধাস্বত্ত্ব পাওয়ার জন্যে একটি প্রক্রিয়ায় যেতে হয়। এ সময়ে উদ্ভাবিত পদ্ধতি ও পণ্য কারও কাছে ইজারা দেওয়া ঠিক নয়। পদ্ধতি একবার লিজ দিয়ে ফেরলে তার আর মেধাস্বত্ত্ব করার সুযোগ থাকে না।"
পন্যের মান বিশ্লেষণে বিসিএসআইআর'র কার্যক্রমে বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন, বিএসটিআই-কে হস্তক্ষেপ না করার আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক হক মনে করেন, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে আইপিআর (ইনটেলেকচুয়াল প্যাটেন্ট রাইট) নিয়ে বিশেষ একটি উইং থাকা উচিত। সেই সঙ্গে বিসিএসআরআই'য়ে মেধাস্বত্ত্ব অধিকার বিষয়ে অভিজ্ঞ একজন আইনজীবীও থাকা উচিত।
বিজ্ঞানীদের চাকরি বয়সসীমা ৫৭ থেকে উন্নীত করে ৬০ বছর করার বিষয়ে বাংলাদেশ বিজ্ঞানী সমিতির সভাপতি হিসেবে ইমামুল হক সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
অধ্যাপক এসএম ইমামুল হক গত ৯ আগস্ট বিসিএসআইআর-এ যোগ দেন। ভূগর্ভস্থ পানির মাধ্যমে খাদ্যচক্রে আর্সেনিক ছড়ানোর বিষয়টি নিয়ে গবেষণাও করেন এই বিজ্ঞানী। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তার ২০৮টির মতো গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমএইচসি/কিউএইচ/এসএইচ/১৮২৬ ঘ.