বিদ্যালয়ের কিছু ব্যক্তি ‘পরিকল্পিতভাবে’ শিক্ষার্থীদের ফুসলিয়ে মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে ফাঁসিয়েছে বলে দাবি করছেন তার স্ত্রী ববিতা হাওলাদার।
Published : 09 Apr 2022, 10:32 PM
শনিবার বিকালে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে হৃদয় মণ্ডলের মুক্তির দাবিতে 'নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ' ব্যানারে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত হয়ে তিনি এ দাবি করেন৷
দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি স্বামীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, “আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। স্কুলের কিছু মাথা বাচ্চাদের ফুসলিয়ে এ কাজ করিয়েছে।“
ববিতা হাওলাদার বলেন, “স্কুলে তিনি ধর্ম অবমাননা করেনি, তিনি শুধু বলেছিলেন বিজ্ঞান প্রমাণের বিষয় আর ধর্ম বিশ্বাসের। তিনি ধর্ম অবমাননার মত কিছু করেননি; এমন কিছু করলে আরও আগেই করতে পারতেন।“
এরপর থেকে মুন্সীগঞ্জে নিজ বাড়িতে নিরাপত্তহীনতায় ভুগছেন উল্লেখ করে ওই শিক্ষকের স্ত্রী বলেন, “সবসময় মনে হয়, কে যেন আমাদেরকে তাড়া দিচ্ছে। ওখানকার সকল হিন্দুরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছেন।
“উনি (হৃদয়) গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে বাসা থেকে বের হলে নানা কটুকথা শুনতে হয়। সামাজিকভাবে আমাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে, বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হতে হচ্ছে।“
সমাবেশে তিনি বলেন, “আমার স্বামীকে যেন নিঃশর্ত মুক্তির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়, আপনারা সে ব্যবস্থা করেন। এবং উনি বাসায় আসার পর যেন আগের মত স্বাভাবিকভাবে বাসায় থাকতে পারে।”
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে লেখক ও শিক্ষাবিদ জাফর ইকবাল বলেন, আজ আমরা এখানে সবাই মিলে প্রতিবাদ করছি, আমরা একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে চাই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এর প্রথম ধাপ হচ্ছে স্কুলের ছেলে মেয়েদের বিজ্ঞান শেখানো। সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলেন হৃদয় মণ্ডল এবং সেই কারণেই তাকে জেলে বসে থাকতে হচ্ছে।
“আমি এখানে অনেক দুঃখ ও কষ্ট নিয়ে দাঁড়িয়েছি। হতাশও বলতে পারতাম। কিন্তু প্রতিজ্ঞা করেছি জীবনে হতাশ হব না। কিন্তু আমি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। আমার দুঃখ হল যে বিজ্ঞান পড়াতে গিয়ে তিনি নিগৃহীত, সেই বই আমরা মিলে লিখেছিলাম। তিনি যে কথাগুলো বলার জন্য জেলে আছেন, হুবহু সেই কথাগুলোকে আমরা সকল বিজ্ঞানমনস্করা বলে থাকি। তাহলে এটা কেমন কথা হৃদয় মণ্ডল জেলে আর আমরা বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছি।”
“এখন যা ঘটছে বা ঘটতে দেওয়া হচ্ছে, আজকে আমরা যদি প্রতিবাদ না করি, স্পষ্টভাবে রুখে না দাঁড়াই, সবাই সব জায়গায় যদি স্পষ্টভাবে উঠে না দাঁড়াই, তাহলে আবার আমরা পিছিয়ে যাব।”
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে অংশ নেয় বাংলাদেশে শিক্ষক ঐক্য পরিষদ ও মাইনরিটি রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ।
মাইনরিটি রাইটস ফোরাম সংখ্যালঘু সুরক্ষা কমিশন গঠন, ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা এবং শিক্ষাঙ্গনের পবিত্রতা রক্ষার দাবি জানায়।
যুব ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুমের সঞ্চালনায় সমাবেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ, বাংলাদেশ শিক্ষক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক অরুণ কুমার গোস্বামী, হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব ডা. এম কে রায়, এক্টিভিস্ট সৈয়দা রত্মা, লেখক ও প্রকাশক রবিন আহসান, কবি হাসান ফকির, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন