মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভুঁইয়া বিতর্কিত মন্তব্যে সমালোচনায় পড়ার পর ওই শিক্ষকের মুক্তির দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
Published : 09 Apr 2022, 12:33 PM
শুক্রবার শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক রহমত উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভুঁইয়া স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে তার মুক্তি দাবি করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “পরিকল্পিতভাবে ধর্ম অবমাননার দায়ে ফাঁসিয়ে মুন্সিগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে গ্রেপ্তারের খবরে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। একইসাথে ভুক্তভোগী শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করছে।”
এর আগে বৃহস্পতিবার একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালকে অধ্যাপক নিজামুল হক এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন।
প্রকাশিত সেই সংবাদে তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, “আমাদের ৯০ শতাংশ মানুষ যেহেতু মুসলিম, সেখানে ধর্ম নিয়ে কন্ট্রাডিকটরি বক্তব্যটা দেওয়া কোনোভাবেই সমীচীন নয় বলে আমি মনে করি।”
তার এমন বক্তব্যে সোশাল মিডিয়ায় সমালোচনার জন্ম দেয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সহকর্মীরাও সমালোচনায় মুখর হন।
তবে নিজামুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আামি বলেছি, যদি ধর্মের বিরুদ্ধে বলে থাকেন, তাহলে এটা বলা ঠিক হয়নি। আমাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।”
বিবৃতির দেওয়ার পর শনিবার নিজামুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তখন আমি ঘটনাটা ওভাবে জানতাম না। আমি বলতে চেয়েছিলাম, মৌলবাদী গোষ্ঠী একটি সেন্টিমেন্ট ক্রিয়েট করে সব সময় ৯০ শতাংশ মুসলমানের দোহাই দিয়ে এ কাজটা করে থাকে। তখন আমার ডিপার্টমেন্টে একটা প্রোগ্রাম চলছিল, তাড়াহুড়োর মধ্যে আমি জিনিসটা ওভাবে ক্লিয়ার করতে পারি নাই।”
“আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে। ধর্ম হলো বিশ্বাস আর বিজ্ঞান হল প্রমাণিত সত্য। আহমদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদ স্যাররা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় আক্রান্ত হয়েছেন, কিন্তু সত্য কথা বলে গেছেন। আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে,” বলেন তিনি।
শিক্ষক সমিতির বিবৃতিতে বলা হয়, শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল ধর্মকে ‘বিশ্বাস’ আর বিজ্ঞানকে ‘প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। শিক্ষকের এ বক্তব্য গোপনে রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। ধারণা করা যায়, কোনো মহল ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে’ এ কাজে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “সাম্প্রতিককালে ধর্ম নিয়ে একশ্রেণির মানুষের তৎপরতাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করে ঘোলাজলে মাছ শিকারের জন্য সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে একটি মহল অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এ ঘটনা তারই অংশ বলে আমরা মনে করি।
“শিক্ষকের শিক্ষাদানের স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। এ ধরনের অপতৎপরতা সমূলে উৎপাটন করা না গেলে যে কোনো শিক্ষকের পক্ষে স্বাধীনভাবে শ্রেণিশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়বে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।”