দেশ ও মানুষের কল্যাণে যারা আড়ালে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন, কখনও নিজেকে প্রকাশ্যে আনেন না, তাদের খুঁজে বের করে পুরস্কৃত করার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 24 Mar 2022, 02:54 PM
বৃহস্পতিবার ২০২২ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “দেশের আনাচে-কানাচে অনেক মানুষ পড়ে আছে, যারা মানুষের সেবা করে নিজেদের উদ্যোগে।
“সেই ধরনের মানুষগুলোকে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং তাদেরকেও পুরস্কৃত করতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ বছরের বিজয়ীদের নিজ হাতে পুরস্কার তুলে দেন শেখ হাসিনা।
স্বাধীনতা পদক পাওয়া গুণীদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, “যারা মানুষের কল্যাণে অবদান রেখে যাচ্ছেন, দেশের উন্নয়নে অবদান রেখে যাচ্ছেন। হয়ত তারা কখনো প্রচারে আসে না। তারা দৃষ্টি সীমার বাইরে থাকে। তাদেরকে খুঁজে বের করে তাদেরকে পুরস্কৃত করা উচিত এই কারণে যে, তাদের দেখে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও শিখবে, অন্যরাও শিখবে।
“মানুষের সেবা করার মধ্যে দিয়ে, মানুষের কল্যাণে কাজ করার মধ্য দিয়ে যে আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়, হাজার ধন সম্পদ বানালেও সেটা হয় না, সেটা আসে না।”
স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি এই স্বাধীনতা আমাদের ধরে রেখে এর সুফলটা প্রত্যেক ঘরে ঘরে আমরা পৌঁছাব। এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
“এদেশকে আমরা এমন ভাবে গড়ে তুলব, বাঙালি জাতিকে যেন আর কখনও বিশ্বের কারও কাছে মাথা নত করে চলতে না হয়। মাথা উঁচু করে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলব এবং মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে আমরা এগিয়ে যাব।”
দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সকলের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, “অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে আজকে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আমরা যে এগিয়ে যাচ্ছি, এ যাত্রা যেন অব্যহত থাকে, সমগ্র জাতির কাছে, প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে সেটাই আমরা আহ্বান থাকবে, অনুরোধ থাকবে।
‘শতভাগ বিদ্যুতায়নের’ মত দেশে একদিন কোনো গৃহহীন মানুষও থাকবে না আশা করে সরকারপ্রধান বলেন, “১৯৯৬ সালে এসে তার (বঙ্গবন্ধুর) পদাঙ্ক অনুসরণ করে ভূমিহীন-গৃহহীনদের ঘর বানানোর কাজ শুরু করি। এখন খুব অল্প লোকই বাকি আছে। ইনশাল্লাহ এমন দিন বাংলাদেশে আসবে যে একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না। ঠিকানাবিহীন থাকবে না। সেটা আমরা করতে সক্ষম হব।
‘স্বাবলম্বী হওয়ায় দাতাদের প্রভাব কমেছে’
স্বাবলম্বী হওয়ায় বাংলাদেশের ওপর দাতাদেশগুলোর প্রভাব কমেছে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, “অনেকগুলো মেগা প্রজেক্ট আমরা করে যাচ্ছি। আমাদের যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প করতে গেলে আগে অনেকের কাছ থেকে অনেক পরামর্শ, অনেক দিক নির্দেশনা, অনেক কিছুই শুনতে হত।
“আজকে আমরা অর্থনৈতিকভাবে এতদূর সাবলম্বী হয়েছি যে, আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ ভাগই আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করতে সক্ষমতা অর্জন করেছি। এটা যেন অব্যহত থাকে সেটাই আমরা চাই।”
উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সরকারের পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
“আমাদের ব-দ্বীপ, এই বাংলাদেশ। এই অঞ্চলের মানুষ যেন আগামীতে একটা সুরক্ষিত জীবন পায়, উন্নত জীবন পায় এবং তা প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন পেতে থাকে একটা সুন্দর জীবন, সুন্দর ভবিষ্যৎ, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন করে তার কিছু আমরা বাস্তবায়নের কাজও শুরু করে দিয়েছি।
“আমি আশা করি এরপর ভবিষ্যতে যারাই আসবে ক্ষমতায় তারা এই দিকটি লক্ষ্য রেখেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যার ফলে বাংলাদেশ আর কখনও মুখাপেক্ষী থাকবে না। বাংলাদেশ মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে চলবে। উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে সেটাই আমরা চাই। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
‘উন্নত অনেক দেশে খাদ্যের অভাব হয়েছে’
মহামারীসহ বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে অনেক উন্নত দেশে খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ সারা বিশ্বকে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। অনেক উন্নত দেশেও ‘ব্যাপকভাবে খাদ্যাভাব’ দেখা দিয়েছে।
“আমাদের দেশের মত, আসলে আমাদের দেশে আগে তো একটা মাত্র টেলিভিশন আর রেডিও ছিল, আমি এসে বেসরকারি খাতে তা উন্মুক্ত করে দিই, আজকে একদিকে তথ্য প্রযুক্তি, অপরদিকে আমাদের রেডিও টেলিভিশন, আমাদের ছোটখাটো যা কিছু হোক, মানুষ তা জানতে পারে খুব সহজে। কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশ আছে, তাদের সমস্যা হলে কখনোই তারা তা প্রচার করে না। কিন্তু আমরা জানি।
“অনেক উন্নত দেশেও ব্যাপকভাবে খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। অনেক মানুষ হয়ত এক বেলা খাবার জোটাতেও পারে না। এ রকম অনেক উন্নত দেশও আছে। এমনকি যারা বিশ্বে মোড়লগিরি করে বেড়ায়, তাদেরও অনেক মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে চলে গেছে। তাদেরও একবেলা খাবার জোটে না। এ রকম পরিস্থিতি তাদের সৃষ্টি হয়েছে।
“সেদিক থেকে যদি আমরা বিবেচনা করি, করোনা মোকাবেলা করেও বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারা আমরা অব্যহত রাখতে সক্ষম হয়েছি।”
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৯ ব্যক্তি ও ২ প্রতিষ্ঠানকে ২০২২ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয় এ অনুষ্ঠানে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।