করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই বসল অমর একুশে গ্রন্থমেলার আরেকটি আসর; প্রথম দিনই ভিড়ের চাপে হারিয়ে গেল স্বাস্থ্যবিধি, ক্রেতা-বিক্রেতা আর দর্শনার্থীদের গুনতে হল জরিমানা।
Published : 15 Feb 2022, 08:51 PM
মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বইমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাঙালির প্রাণের মেলার ৩৮তম আসর।
আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, মাস্ক ছাড়া কেউ মেলায় ঢুকতে পারবে না, সবার থাকতে হবে টিকা সনদ।
প্রথম দিন মেলার প্রবেশমুখে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের তাপমাত্রা মেপে, হাতে স্যানিটাইজার দিয়ে ঢুকতে দেখা গেলেও ভেতরে গিয়ে কেউ কেউ মাস্ক রেখে দেন পকেটে। কিছু স্টলে বিক্রয়কর্মীদের মুখেও মাস্ক দেখা যায়নি ।
মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বিকালে মেলার মাঠে নামল ভ্রাম্যমাণ আদালত। মুখে মাস্ক না থাকায় অর্ধশত মানুষকে জরিমানাও করা হল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলা একাডেমির ৬ নম্বর প্যাভিলিয়নে দুজন বিক্রয়কর্মীকেও দিতে হল দণ্ড।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মেলায় যারা মাস্ক পরছে না, আমরা দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ২৬৯ ধারা অনুযায়ী তাদের অর্থদণ্ড দিচ্ছি। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের ২০০ টাকার দণ্ড দেওয়া হচ্ছে। টাকা পরিশোধের পর তাদেরকে ডিসিআর কপি দেওয়া হচ্ছে।”
বাংলা একাডেমির পরিচালক ও বইমেলার সদস্য সচিব জালাল আহমেদের ভাষায় ভ্রাম্যমান আদালত এবার ‘নতুন সংযোজন’।
“সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের নির্দেশনা আছে, মোবাইল কোর্ট মেলায় কাজ করবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে পরিস্থিতিভেদে যখন যেটা দরকার হবে, মোবাইল কোর্ট সেভাবে কাজ করবে।”
মেলায় প্রবেশে কোভিড টিকার সনদ দেখানোর কথা বলা হলেও প্রথম দিন তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে জালাল আহমেদ বলেন, “টিকার সনদ ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের দেখাতে হবে, সেটা আমরা বলিনি। যারা মেলায় কাজ করবে, তাদের জন্য টিকা সনদ বাধ্যতামূলক। অন্যদের জন্য এটা বাধ্যতামূলক করা হয়নি। তবে আমরা উৎসাহিত করছি, যাতে সবাই সনদ নিয়ে আসে।”
বইমেলার প্রথম দিন তেমন বিক্রি না হলেও ভালো লোক-সমাগম দেখে বিক্রেতারা খুশি।
‘অনন্যা’ প্রকাশনীর বিক্রেতা ফারুক আহমেদের ভাষায়, “কোভিড পরিস্থিতিতে মেলার প্রথম দিন অবাক করার মত লোক সমাগম হয়েছে। বিক্রি বেশি না হলেও পরিবেশটা দেখে ভালো লাগছে।”
শ্রাবণ প্রকাশনীর বিক্রয় কর্মী রিমিয়া রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রথম দিন হিসেবে বিক্রি তেমন হচ্ছে না। তবে আশা করি, ধীরে ধীরে বেচাকেনা বাড়বে। লোকজন আসবে, দেখবে, তারপর তো কিনবে।”
এবার বইমেলা নিয়ে মানুষের আগ্রহ একটু বেশি বলেই মনে হয়েছে দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) জ্যেষ্ঠ নির্বাহী উৎসব মোসাদ্দেকের কাছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “প্রথম দিনেই অনেক লোক সমাগম হয়েছে। এটা আমাদের জন্য আশাব্যঞ্জক।”
করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের দাপটে এ বছরের শুরুতে দেশে রোগীর সংখ্যা আবার বাড়তে থাকায় বইমেলা শুরুও পিছিয়ে দেওয়া হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলা চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তবে সংক্রমণের হার এখন কমে যাওয়ায় মেলা একমাস চালাতে চাইছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীও সেই মত প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি যে বই মেলাটা আমরা এক মাস চালাতে পারি। তবে সেটা আপনারা নিজেরাও দেখবেন ভেবে। কারণ আমি একা তো আর কিছু বলতে পারব না। এটা আপনাদেরই…..কতটুকু করতে পারবেন।”
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ৭ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে এবার বইমেলা হচ্ছে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩৪টি ইউনিট; মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
মেলায় রয়েছে মোট ৩৫টি প্যাভিলিয়ন । এর মধ্যে বাংলা একাডেমির তিনটি প্যাভিলিয়ন, শিশুকিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য একটি এবং সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকারের একটি স্টল রয়েছে।
শিশুচত্বর হয়েছে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। তবে কোভিড পরিস্থিতির কারণে প্রথম দিকে 'শিশুপ্রহর' হবে না।
এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এম্ফিথিয়েটারের পূর্ব দিকে, মেলার মূল প্রাঙ্গণে। সেখানে ১২৭টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা রয়েছে। অমর একুশে বইমেলা ২০২২-এর প্রচার কার্যক্রমের জন্য একাডেমিতে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদীতে একটি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আছে দুটি তথ্যকেন্দ্র। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও এবার নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে চারটি প্রবেশ পথ দিয়ে বইমেলায় প্রবেশ করা যায়, বের হওয়ার পথ রয়েছে তিনটি।
ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না।
ছুটির দিন বইমেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।